গত একযুগ ধরে বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি (বিসিডিএস) ছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ীদের দখলে। দলটির সোনাডাঙ্গা থানা কমিটির সহ-সভাপতি কবির উদ্দিন বাবলুই নিয়ন্ত্রণ করতেন এই ব্যবসা খাত। তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের আরেক অংশকে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করেন খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল। তার বন্ধু মনিরুজ্জামান খান বাবুকে করা হয় সংগঠনের সভাপতি। বাবু তার অনুসারীদের নিয়ে সংগঠনটিকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পরিণত করেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নতুন কমিটির অনেকেই গা ঢাকা দেন। এই সুযোগে কিছু ব্যবসায়ীকে নিয়ে ফের সংগঠনটির দখলের পায়তারা করছেন আওয়ামী লীগের আগের কমিটির নেতারা। গত ২৮ ডিসেম্বর তারা বিসিডিএস ভবনে গিয়ে ছাত্রদের ব্যবহার করে কমিটি ভেঙে দিয়ে আসেন।
বর্তমানে বিএনপি সমর্থিত কয়েকজন ব্যবসায়ীকে সামনে রেখে নতুন কমিটি গঠনের তোড়জোড় চলছে। এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কবির উদ্দিন বাবলু। বিষয়টি বুঝতে পেরে ৩ জানুয়ারি ছাত্ররা পাল্টা বিবৃতি দিয়ে কমিটি বাতিলের ঘোষণা প্রত্যাখান করে। বর্তমানে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যবসায়ীরা জানান, ওষুধ ব্যবসায়ীদের মধ্যে সক্রিয় রাজনীতিবিদ কম। বিএনপি নেতা নেই বললেই চলে। প্রবীণ ওষুধ ব্যবসায়ীরাও কয়েক ভাগে বিভক্ত। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা। তারা বিএনপির দু’একজনকে সামনে রেখে এই ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন। এ অবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে দল নিরপেক্ষ ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংগঠনটির নেতৃত্বে আনা প্রয়োজন।
ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রকৃত ব্যবসায়ীদের দিয়েই পরিচালিত হতো। ২০১৪ সালে সমিতির সভাপতি হন মোজাম্মেল হক ও সিনিয়র সহ-সভাপতি হন কবির উদ্দিন বাবলু। এরপরেই সংগঠনটিতে রাজনীতিকরণ শুরু হয়। ২০২৪ সাল পর্যন্ত তারাই সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ওষুধ কোম্পানির কাছে চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পুরাতন কমিটি ভেঙে দিয়ে মনিরুজ্জামান খান বাবুকে সভাপতি এবং তাপস সরকার শিবকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করে নতুন কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় বিসিডিএস। এই কমিটি গঠনের নেপথ্যে ছিলেন সাবেক এমপি শেখ জুয়েল। কমিটির প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের অনুগত ব্যবসায়ী।
তারা আগের কমিটির চাইতেও বেশি রাজনীতিকরণ করা শুরু করেন। সংগঠন কার্যালয়, দোকানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্প তৈরি করা হয়। দিনের পর দিন সংগঠনটি ব্যবহার করা হয় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের মতো। কার্যালয় পরিণত হয় দলীয় অফিসে। এছাড়া কমিটির অনেকেই দরপত্র ভাগবাটোয়ারা ও সরকারি হাসপাতালে ঠিকাদারিতে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি সাধারণ ব্যবসায়ীদের ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করলেও প্রতিবাদ করার সাহস পাননি কেউ।
গত আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। তখন দৃশ্যপটে ফিরে আসেন কবির উদ্দিন বাবলু। প্রথমে তিনি ওষুধের সবচেয়ে বড় বাজার হেরাজ মার্কেট ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির কমিটি গঠন করেন। এর সভাপতি করা হয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সুজাকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় বিএনপি নেতা নাজমুল সাকিব পিন্টুকে। ৩১ সদস্যের কমিটির সভাপতিসহ বেশিরভাগই বাবলুর অনুসারী।
হেরাজ মার্কেটের কমিটি গঠনের পর গত ২৮ ডিসেম্বর বিসিডিএস ভবনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে অবাঞ্চিত করা হয়। সেখানে উপস্থিত জিল্লুর রহমান জুয়েল, আনিছুর রহমান লিটু, সমর কুমার কুন্ডু, রিয়াজ উদ্দিন সুজা বিগত দিনে বাবলুর নেতৃত্বাধীন কমিটিতে ছিলেন।
এ ব্যাপারে সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কবির উদ্দিন বাবলু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ করা তো অপরাধ নয়, অন্যায় কিছু করা অপরাধ। ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি দলীয় কার্যালয় বাড়ানোর বিরুদ্ধে আমি অবস্থান নিয়েছিলাম। এজন্য আমাদের বাদ দিয়ে শেখ জুয়েলের অনুগতদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। তিনি বলেন, আমি ৪ বার সংগঠনের দায়িত্বে ছিলাম, আমার সঙ্গে একটি টিম রয়েছে। যা কিছু হচ্ছে আমি এর সঙ্গে নেই বললে মিথ্যা বলা হবে।’
সংগঠনের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের ওপর নানা চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাধারণ ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমান সংকট উত্তরণে সব কমিটি ভেঙে দিয়ে দ্রুত নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তার আগে পতিত স্বৈরাচারের সহযোগিরা যেন সংগঠনে ফিরতে না পারে সেজন্য স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ গত ১৬ বছরে লুটপাট করে জমানো অর্থ বিনিয়োগ করে ইতোমধ্যে তারা কিছু ব্যবসায়ীকে হাত করে নিয়েছেন। নির্বাচনে এই কালো টাকা বিনিয়োগ করলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা কেউই তাদের সঙ্গে পেরে উঠবেন না।
খুলনা গেজেট/হিমালয়
The post আ’লীগের সুবিধাভোগীরাই ওষুধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মরিয়া appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.
ঠিকানা : গুলশান, ঢাকা, বাংলাদেশ || তথ্য, খবর ও বিজ্ঞাপন : +8809611719385 || ইমেইল : songbadpatra24@gmail.com
Visit : songbadpatra.com
All rights reserved © সংবাদপত্র-2024