মুলাদী ((বরিশাল) প্রতিনিধি:
শরীয়তপুরের জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল আমিনের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ তাঁর স্বজনেরা। একই সঙ্গে এই মৃত্যুর সংবাদে শোকের ছায়া নেমে এসেছে আল আমিনের গ্রাম বরিশালের মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের কাজীরচরে। তিনি এই গ্রামেই শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন।
চাকরি হওয়ার পর খুব একটা গ্রামে না এলেও ফোনে আত্মীয়স্বজন, ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগযোগ করতেন আল আমিন। সবার বিপদে সাহায্যের হাত বাড়াতেন। তিনি কাজীরচর গ্রামের প্রয়াত হাজি বেলায়েত হোসেন ব্যাপারীর ছেলে।
কাজীরচর গ্রামে আল আমিনের প্রতিবেশী মামুন মাতুব্বর বলেন, ‘আল আমিন এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন, কল্পনাও করতে পারিনি। তাঁর মৃত্যুর খবর শোনার পর পুরো গ্রামের মানুষ হতবিহ্বল। আল আমিন ভালো মানুষ ছিলেন। গ্রামের বাড়িতে বেশি না এলেও অনেকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখতেন নিয়মিত। ভালো-মন্দের খোঁজ নিতেন। বিপদে-আপদে সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়াতেন। তাঁর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে জাজিরা থানা ভবনের দ্বিতীয় তলার নিজ কক্ষ থেকে ওই থানার ওসি আল আমিনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর এভাবে মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তাঁর সহকর্মী-সতীর্থরাও।
তাঁর ব্যাচমেট বরিশাল বন্দর থানার সাবেক ওসি ও বর্তমানে মুক্তাগাছায় কর্মরত এপিবিএনে কর্মরত পরিদর্শক এ আর মুকুল তাঁর ফেসবুকে কয়েকটি ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘কী এমন হলো তোমার বন্ধু যে ফুটফুটে বাচ্চা দুটোর কথাও তুমি ভাবলে না! কী এমন হলো যে অভিমান করে চলে গেলে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে! কী কষ্ট বুকে চেপে তুমি চলে গেলে বন্ধু, আমাদের বুঝতে ও দিলে না? কত–না হাসিখুশি তোমাকে দেখতাম। মানুষের জীবনে অনেক কিছুই থাকে, যা সাময়িক কষ্টের। কিন্তু তাতে তো নিজেকে শেষ করা এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কী বলব, কী লিখব, ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে; তবে এটাই বলব, এ রকম মৃত্যু যেন কারও না আসে। মহান আল্লাহ তোমাকে বেহেশতের সর্বোচ্চ স্থান জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমিন।’
আল আমিনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। আল আমিন ও স্ত্রী শরিফুন্নেছা দম্পতির রাদিয়া ও রাফিয়া নামে যমজ দুই কন্যা রয়েছে। তারা রাজধানীর ভিকারুন্নেছা নূন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
আল আমিনের মেজ ভাই মধুমতি ব্যাংকের কর্মকর্তা আবুল কালাম শুক্রবার বিকেলে বলেন, আল আমিন চাকরির কারণে গ্রামের বাড়িতে খুব একটা আসতেন না। ২০২৩ সালে মা মারা যান ও ৪ মাসের মাথায় বড় ভাই আবদুস সালামের মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ছোট ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে জাজিরা থানায় ছুটে যাই। গিয়ে দেখি, আমার ভাইয়ের নিথর দেহ। এভাবে আমার ভাইকে দেখতে হবে, কল্পনাতেও ভাবিনি। ভাই হারানোর এই কষ্ট–বেদনা কতটা ভারী, তা কীভাবে বোঝাব, বলুন?
আবুল কালাম আরও বলেন, ‘কিছুদিন ধরেই আল আমিন মানসিক চাপে ছিলেন। তবে কোন বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন, তা কারও সঙ্গে শেয়ার করেননি। আল আমিনের স্ত্রী শরিফুন্নেছা পপিও কিছু বলতে পারছেন না। তিনিও স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ভেঙে পড়েছেন। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাঁর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর আসরবাদ শরীয়তপুর পুলিশ লাইনসের মাঠে আল আমিনের জানাজা হয়। পরে আমরা মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে রওনা হব। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা হবে। এরপর লাশ পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হবে।’
আল আমিনের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল রাতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উজ জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
The post ওসি আল আমিনের মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.