জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল না। তারা অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করে গদিতে থাকার জন্য যা ইচ্ছা তাই করেছে। তাই তাদের বিদায়টাও মোটেই সম্মানজনক হয়নি।
তিনি বলেন, ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় এমন লজ্জাজনক বিদায় অতীতে কারোরই হয়নি। আর যারা এভাবে একবার বিদায় নিয়েছে তারা আর কখনোই দৃশ্যপটে ফিরে আসতে পারেনি বরং তাদেরকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের পতিত স্বৈরাচার আবারো ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিচ্ছে। নানাভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে খুলনার শিরোমনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে খানজাহান আলী থানার সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে অসহায় ও শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিরতণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রশ্ন তুলে বলেন, যারা অকারণে মানুষ হত্যা করেছে, তাদের এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার আছে? তিনি অর্জিত বিজয়কে অর্থবহ করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
জুলাই বিপ্লবের কথা উল্লেখ করে এই জামায়াত নেতা বলেন, এ আন্দোলনে ২ হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে, ৪০ হাজার ছাত্র-জনতা আহত ও পঙ্গু হয়েছে। এই যে ত্যাগ, এই যে আত্মদান, রক্তদান, যারা চলে গেল তারা তো বিজয় দেখে যেতে পারল না। তাদের স্ত্রী-সন্তান-শিশুরা কাঁদে, আহতরা হাসপাতালে, মুক্তির স্বাদ তারা পাচ্ছে না। যারা আত্মত্যাগ করে গেল, তাদের রক্তের এই ঋণ, এই ত্যাগ আমাদের শোধ করতে হবে। আমরা সবাই তাদের রক্তের কাছে ঋণী আছি। তা শোধ করার একটাই উপায় তা হচ্ছে, তারা যে ইনসাফপূর্ণ একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য রক্ত দিয়েছিল, সেই স্বাধীন, সোনার, সমৃদ্ধ, নিরাপদ, কল্যাণ রাষ্ট্রের বাংলাদেশ আমাদের গড়তে হবে। তাহলেই শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করা যাবে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা সেই নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। কিন্তু সেখানেও অন্তরায়। জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ঐক্যের চেতনা ছিল, কোনো ষড়যন্ত্র কোনো লোভ নতুন করে এই অগ্রযাত্রাকে মাঝে মাঝে যেন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং ঐক্যবদ্ধভাবে গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ-বিভাজনের যে সব আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে স্বৈরাচারের দুর্নীতি ও গুম-খুনের বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনসহ গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট থেকে পুরোনো গতানুগতিক বন্দোবস্তে ফিরে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র, ভারতীয় হুমকি ও অপপ্রচার, নাশকতাসহ দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার ধারাবাহিক তৎপরতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য ক্রমেই ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ার বাস্তবতায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও কর্মীরা ছাত্র-জনতাকে আবারো রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তাড়াহুড়া, সংস্কার প্রশ্নে মতানৈক্য এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নানাবিধ বিচ্যুতি ও ব্যর্থতার কারণে জুলাই অভ্যুত্থান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে দেওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, গণমানুষের কল্যাণ ও ইনসাফপূর্ণ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় শীতার্ত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ছাত্রসমাজ। আমাদের সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, জামায়াতে ইসলামী এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে, যেখানে রাষ্ট্রই প্রত্যেক নাগিরকের আয়-রোজগারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিরাপদ আশ্রয়স্থল হবে। রাষ্ট্রই অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ সব মানুষের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করবে। তিনি সেই স্বপ্নের সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে জামায়াতে ইসলামীর পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সারা দেশে তাপমাত্রার বড় ধরনের অবনতির কারণে তীব্র শীতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চরম কষ্ট পাচ্ছেন। চলমান পরিস্থিতিতে দরিদ্র ও শীতার্ত মানুষের দুর্দশা লাঘবে গণমুখী রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। মূলত জনগণের সব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু দেশে ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত না থাকায় জনগণ রাষ্ট্রের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি গণমানুষের সব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে দেশকে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করার আন্দোলনে শরিক হতে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. আরমানের সভাপতিত্বে এ সময় খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, ফুলতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ ইকবাল হোসেন, খানজাহান আলী থানার ওসি মো. কবির হোসেন, ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি মো. আনোয়ার হোসেন, ইউপি সদস্য বিল্লাল হোসেন, খানজাহান আলী থানা সাংবাদিক ইউনিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল্লাহ তারেক, ছাত্র সমাজের পক্ষে হাসিব আহমেদ, নাজমুস সাদাত মাহাদী, জোবায়ের ইসলাম, সাজিদ ইসলাম, মাহমুদুল হাসান উৎস, ইমন হোসেন, সমাজ সেবিকা প্রমি আক্তার লিজা, মো. রাফি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
The post পতিত স্বৈরাচার দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে : পরওয়ার appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.