একসময়ের চরমপন্থি অধ্যুষিত এলাকা ছিল খুলনা। তাদের অন্যতম ঘাটি ছিল দৌলতপুরের দেয়ানাসহ আশাপাশের এলাকা। ওই এলাকার গাজী কামরুল ইসলামের হাত ধরেই জন্ম হয় নিষিদ্ধ চরমপন্থি সংগঠন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির। এসব অনেক পুরানো আলোচনা। কিন্তু সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু খুনের পর পুরানো আলোচনাই নতুন করে শুরু হয়েছে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রায় ১৭ বছর কারাভোগের পর আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে জামিনে মুক্ত হন গাজী কামরুল। তিনি দেয়ানা এলাকার বাড়িতেই থাকতেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কারামুক্ত হন চরমপন্থি নেতা রিফুজি মঈন ও আসলাম ওরফে ট্যারা আসলাম। দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর এলাকায় ফিরেছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী টাইগার খোকনের সহযোগী শাহীন ওরফে বড় শাহীন। তাদের সহযোগিরাও এলাকায় ফিরে রীতিমতো ত্রাস সৃষ্টি করেছিল।
এসব নিয়ে পুরাতন চরমপন্থিদের একটি অংশের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় গোলাম রব্বানী টিপুর। হত্যাকান্ডের পর ওই অংশের দিকেই আঙুল তুলছেন টিপুর পরিবার ও স্থানীয়রা। তবে তাদের নাম নিতে ভয় পাচ্ছেন তারা। দেয়ানার মানুষের অভিযোগের তীরও গাজী কামরুলসহ ফিরে আসা পুরানো চরমপন্থি নেতাদের দিকে। কিন্তু তারাও কেউ নাম উচ্চারণ করার সাহস দেখাননি। একই ধরনের আতংক দেখা গেছে, বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের মাঝে।
স্থানীয় বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘কারা টিপুকে মারতে পারে সবাই কিছুটা আঁচ করছে। তাদের নাম বললে কাল আমার লাশ রাস্তায় পড়ে থাকবে।’
আইনশৃংখলা বাহিনীর তথ্য বলছে, ১৯৯০ সালের দিকে বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলেন গাজী কামরুল ইসলাম। তার অনুসারী ছিলেন গোলাম রব্বানী টিপু। দৌলতপুরের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন আকতারুজ্জামান খোকন ওরফে টাইগার খোকন। তার শীর্ষ ক্যাডার ছিলেন বড় শাহীন। ১৯৯৪ সালে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে খুন হন টাইগার খোকন। এরপর অধিকাংশ চরমপন্থিরা পালিয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে গাজী কামরুল আত্মসমর্পণ করেন।
২০১৩ সালে গাজী কামরুল কারামুক্ত হন। গোলাম রব্বানী টিপুসহ অনেকেই এলাকায় ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেন। গাজী কামরুল ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আশ্রয়ে থাকতেন। টিপু ছিলেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী এস এম কামাল হোসেনের অনুসারী। পরে টিপু স্বেচ্ছাসেবক লীগে যোগ দেন।
২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর দৌলতপুরে খুন হয় নিষিদ্ধ সংগঠন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি নেতা শেখ শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদ। শহীদ ছিলেন গাজী কামরুলের অনুসারী। এই মামলায় টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলার জন্য গাজী কামরুলকে দায়ী করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোগ করেন টিপু। ২০১৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত এবং ২০২৩ সালের ১২ জুন নির্বাচনে টিপু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়েও স্থানীয় চরমপন্থিদের সঙ্গে বিরোধে জড়ান টিপু। তার বাড়িতে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।
টিপুর ঘনিষ্টজনরা জানান, দীর্ঘ সময় পলাতক জীবনে টিপু কক্সবাজার থাকতেন। সেখানে ব্যবসা বাণিজ্য করতেন। ২০১৮ সালের পর নিয়মিত এলাকায় থাকা শুরু করেন। চরমপন্থিদের বিষয়ে কিছুটা সতর্ক থাকতেন। ৫ আগস্টের পর পুরাতন সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফেরা শুরু করলে টিপু কিছুটা আতংকিত হয়ে পড়েন। অপসারিত হওয়ার আগ পর্যন্ত নিয়মিত নগর ভবনে যেতেন টিপু। তার ওয়ার্ডে নাগরিক সেবার কোনো কাজই আটকে থাকতো না।
এর মধ্যে দৌলতপুরের এক শীর্ষ পাট ব্যবসায়ীর ছেলের সঙ্গে বিবাদে জড়ান টিপু। এক সময় শেখ সোহেলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ওই ব্যক্তি টিপুর বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ এবং পুলিশে ধরিয়ে দিতে তদবির করেন তিনি।
এই বিষয় নিয়েও টিপু ঘনিষ্ঠদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। টিপু খুনের পর এই বিষয়গুলোই ঘুরে ফিরে আলোচনায় আসছে।
টিপুর বাবা গোলাম আকবর বলেন, কক্সবাজারে টিপুর কোনো শত্রু ছিল না। এখানকার শত্রুরাই বক্সবাজারে গিয়ে টিপুকে হত্যা করেছে।
নগরীর দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী জানান, হত্যাকান্ডের বিষয়ে তারাও খোঁজ খবর নিচ্ছেন। কিন্তু পুরাতন সন্ত্রাসীদের বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।
খুলনা গেজেট/হিমালয়
The post পুরানো চরমপন্থিদের নিয়ে নতুন আতংক appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.
ঠিকানা : গুলশান, ঢাকা, বাংলাদেশ || তথ্য, খবর ও বিজ্ঞাপন : +8809611719385 || ইমেইল : songbadpatra24@gmail.com
Visit : songbadpatra.com
All rights reserved © সংবাদপত্র-2024