ময়মনসিংহ নগরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আনন্দ মোহন কলেজে ছাত্রাবাসের সিট বরাদ্দ নিয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিয়েছে হলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ রোববার বিকেলে ও সন্ধ্যায় হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় কলেজ এলাকায়।
পরে এ ঘটনায় ছেলেদের ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে কলেজে আগামী তিন দিনের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার সকাল আটটার মধ্যে ছেলেদের ছাত্রাবাস ত্যাগের জন্য বলা হয়েছে। আজ রাত আটটার দিকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহ এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এদিকে বিকেল থেকে শুরু হওয়া পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত। রাত পৌনে নয়টা পর্যন্ত কলেজ গেটের বাইরে ছাত্রদল-বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকর্মীরা এবং ভেতরে ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিলেন।
আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ বলেন, কলেজের ছাত্রাবাসের সিট বণ্টন চাচ্ছে বিভিন্ন দল; কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা মানতে চাচ্ছেন না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক আশিকুর রহমান, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ছাত্রদলের তানজিল আহমেদ এবং ছাত্রশিবিরও সিট চাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কারও দাসত্ব করবেন না, কোনো দলকে যেন সিট দেওয়া না হয় সেই দাবি জানাচ্ছিলেন। ছাত্রলীগের সময় যা হয়েছে, এখন তা হতে দেবেন না—এই দাবি ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীদের।
অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থী আসা–যাওয়া করবে, নবায়ন করবে কে কোন দল করে, তা দেখে সিট দেব না। এতে তারা (ছাত্রদল-বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন) বাধা দিচ্ছে এবং কিছু সিনিয়র শিক্ষার্থী এতে ইন্ধন দিচ্ছে। যার কারণে সমস্যাটি হয়েছে। আজ বেলা তিনটার দিকে ছাত্রাবাস পরিচালনা কমিটির সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি সভা শুরু হয়। সেই সভায় ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের লোকজন এলে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে মারামারি শুরু হয়। তাৎক্ষণিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে তাঁরা পুলিশ পাঠান। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’
সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, আনন্দ মোহন কলেজে মেয়েদের পাঁচটি এবং ছেলেদের তিনটি ছাত্রাবাস রয়েছে। হোস্টেলগুলো আগে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করত। ছাত্রলীগের মতো নিয়ন্ত্রণ আর যেন ফিরে না আসে, সেই দাবি হোস্টেলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের। ছাত্রাবাসে প্রতিবছর সিট নবায়ন করতে হয়। গত ৮ জানুয়ারি ছাত্রাবাসে সিট নবায়নের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দের জন্য বাৎসরিক পাঁচ হাজার টাকা থেকে বিগত ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণের সময় সাত হাজার টাকা করা হয়। এখন শিক্ষার্থীরা সেটি কমিয়ে পাঁচ হাজার টাকা করার দাবি জানাচ্ছিলেন। হলের নিয়ন্ত্রণ ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিতে চাচ্ছে—এমন খবর ছড়াতে থাকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এ নিয়ে দুটি পক্ষ তৈরি হয়ে উত্তেজনা শুরু হতে থাকে।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দেখা যায়, কলেজের অভ্যন্তরে অবস্থান করছেন হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা। আর কলেজের বাইরে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা। তাঁরা সন্ধ্যা ছয়টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে কলেজের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে পুনরায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে দুই পক্ষই। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে পুরো কলেজ এলাকায়। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন। দুই পক্ষের মধ্যেই উত্তেজনা চলছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহের সমন্বয়ক আশিকুর রহমানের মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি ঝামেলা শেষে কথা বলবেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন। তবে আরেক সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ছাত্রাবাসে আমরা কোনো সিট চাইনি। আমাদের দাবি ছিল অছাত্র যারা রয়েছে তারা হলে থাকতে পারবে না, ছাত্রাবাসভিত্তিক যেন সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। সিট বরাদ্দ হবে ডিপার্টমেন্ট থেকে, কোনো রাজনৈতিক সংগঠন থেকে নয়, এটি আমাদের দাবি ছিল। ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্ট যারা আছে তাদের হল থেকে বের করে দিতে হবে। আমাদের সঙ্গে সভা চলার সময় ছাত্রলীগের যারা এখনো আছে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে ঘটনাটি ঘটায়।’
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছে।’
খুলনা গেজেট/এইচ
The post বৈষম্যবিরোধী ও ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে আনন্দ মোহন কলেজ বন্ধ appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.