স্টাফ রিপোর্টার: দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত রাজশাহীর বিভাগীয় সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে গতকাল সোমবার রাজশাহীর মাইড্যাস কনফারেন্স হলে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সাংবাদিকতা: সংস্কার ও সম্ভাবনা শিরোনামে রাজশাহীর সাংবাদিকদের সাথে এই আয়োজন করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘দৃক’। দৃকের পক্ষ থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজশাহীর শহিদ, সারাদেশের সকল শহিদ ও আহতদের শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সকল খাতেই সংস্কারের প্রশ্ন উঠেছে।
এর ধারাবাহিকতায় সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় সংস্কারের লক্ষ্যে এই আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকরা। একই সাথে প্রকৃত অর্থে খোদ সাংবাদিকরাই সংস্কার চান কি না এই প্রশ্নও তুলেছেন সাংবাদিকরা।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তরুণ ও মাঠের সাংবাদিকরা জানান, দীর্ঘদিন দেশে সত্যিকার অর্থে সাংবাদিকতা না থাকায় মাঠে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্ন পক্ষের হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারা। সাংবাদিকদের ওপর টার্গেটেড আক্রমণ ঠেকাতে প্রতিষ্ঠানের পরিচয় লুকিয়ে এমনকি বুলেট প্রুফ জ্যাকেটও খুলে কাজ করতে হয়েছে। অন্যদিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রহ করা সংবাদ প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর পর সেই সংবাদ প্রচারিত বা প্রকাশ করা হয়নি।
তাদের মতে, বিগত ৫ আগস্টের আগে দীর্ঘদিন ফ্যাসিস্টের দোসর হয়ে থাকায় এখনও মানসিক দাসত্ব থেকে মুক্তি মেলেনি। ভয়ের সংস্কৃতি ও সেলফ সেন্সরশিপের বাস্তবতা এখনও একইভাবে বহাল রয়েছে। অনেকেই জানান, বর্তমান ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা কিংবা সমন্বয়কদের কোনো অনিয়ম বা অন্যায় তুলে ধরা যাচ্ছে না।
এই আয়োজনে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা বলেন, সংবাদমাধ্যমগুলোতে যে সংকটময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে এতে আমূল সংস্কারের সম্ভাবনা ক্ষীণ। রাষ্ট্র ও সরকারের গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠিত না হলে আলাদা করে সংবাদমাধ্যমের সংস্কার সম্ভব নয়।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা বিভিন্ন নামধারী সাংবাদিক সংগঠন ও এদের লেজুড়বৃত্তিক নেতৃত্ব নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলপন্থী নেতৃত্বের সমালোচনা করে বলেন, এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরেও যদি সাংবাদিকরা দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ না হতে পারেন তাহলে সাংবাদিকতার সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে না।
সাংবাদিকরা আরও বলেন, সংবাদমাধ্যমের ব্যবসায়িক ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট মালিকানা থেকে সাংবাদিকতাকে মুক্ত করতে হবে। মফস্বলের সাংবাদিকদের বেতন নেই। সাংবাদিকদের সংবাদের চেয়ে বিজ্ঞাপনের চাপ বেশি। কোনো ধরনের নৈতিক ভিত্তি নেই, এমনকি প্রতিষ্ঠানের কোনো নীতিমালা নেই। এই বাস্তবতা থেকে সাংবাদিকতাকে বের করে আনতে হবে। দেশের পত্রিকাগুলোর ভিত্তিহীন ও অবাস্তব সার্কুলেশন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা, নিরাপত্তা, সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা না গেলে সততা ও বিবেকের সাথে সাংবাদিকতা কখনও সম্ভব নয় বলেই মত তাদের।
সবমিলিয়ে গণমানুষের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে আদর্শ ও নৈতিকতার মানদণ্ডে সাংবাদিকতার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান রাজশাহীর সাংবাদিকদের।
আলোচনা সভায় দৈনিক সোনালী সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক লিয়াকত আলী, দৈনিক সোনারদেশ পত্রিকার সম্পাদক হাসান মিল্লাত, এনটিভি রাজশাহীর সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার শ.ম সাজু, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক নতুন প্রভাত পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সোহেল মাহবুব, দৈনিক আমারদেশ পত্রিকার রাজশাহী ব্যুরো প্রধান মঈন উদ্দিন, দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার রাজশাহী ব্যুরো প্রধান ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন ও জিটিভি রাজশাহীর প্রতিনিধি রাশেদ রিপনসহ স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
The post রাজশাহীতে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা appeared first on সোনালী সংবাদ.
ঠিকানা : গুলশান, ঢাকা, বাংলাদেশ || তথ্য, খবর ও বিজ্ঞাপন : +8809611719385 || ইমেইল : songbadpatra24@gmail.com
Visit : songbadpatra.com
All rights reserved © সংবাদপত্র-2024