5:58 am, Wednesday, 15 January 2025

আগুনের পরশমণি নয়, ধ্বংসযজ্ঞ

ক্যালিফোর্নিয়ায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে প্রচণ্ড বাতাস বয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে, যা চলতি সপ্তাহেই দাবানলকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তিনটি জায়গায় ছড়িয়ে পড়া দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকল কর্মীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, রবিবার থেকে শুষ্ক বাতাস আবার বেড়ে বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে এবং এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯৬ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

বাতাস বেড়ে যাওয়ার আগেই পালিসেইডস ও ইটনের দাবানল ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।

স্থানীয় দমকলকর্মীদের সাথে একযোগে কাজ করছে আরও আটটি রাজ্য এবং কানাডা, মেক্সিকো থেকে আসা কর্মীরা।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে রবিবার পর্যন্ত দাবানলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪-এ। এর আগে কর্মকর্তারা ১৬ জন নিখোঁজ থাকার কথা বলেছিলেন।

নিহতদের মধ্যে ১৬ জনের মৃতদেহ ইটন এলাকায় আর আটজনের পালিসেইডস এলাকায় পাওয়া গেছে।

সবচেয়ে বড় দাবানলের শিকার হয়েছে পালিসেইডস, যেখানে প্রায় ২৩ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে। অন্যদিকে ইটনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দাবানলে প্রায় ১৪ হাজার একর এলাকা ভস্মীভূত হয়েছে।

এছাড়া হার্স্ট-এ পুড়েছে ৭৯৯ একর। তবে সেখানকার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

দমকলকর্মীরা যখন বড় দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে শুরু করেছে তখনি কর্তৃপক্ষ নতুন করে প্রচণ্ড বাতাসের বিষয়ে সতর্ক করলো, যা ‘সম্ভাব্য বিপর্যয়কর বাতাসে’ পরিণত হতে পারে।

এতে পুরো লস অ্যাঞ্জেলেসই দাবানলের হুমকির মুখে পড়ে। লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার বিভাগের প্রধান ক্রিস্টিন ক্রাউলি ইভাকুয়েশন জোনগুলোর অধিবাসীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন যাতে করে কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিলেই তারা সরে যেতে পারে।

একই সাথে তাদের এমনভাবে অবস্থান করতে বলা হয়েছে যাতে করে কর্মীদের কাজে প্রতিবন্ধকতা না হয়।
আগুন রবিবার নতুন করে ছড়িয়েছে যার কারণে সান ফার্নান্দো উপত্যকা ও নিকটবর্তী নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরি এলাকার কমিউনিটিগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।

রবিবার দমকলকর্মীরা অ্যানগেলেস ন্যাশনাল ফরেস্ট এলাকায় নতুন আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এলাকাটি গোপন প্রযুক্তিসহ যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশ কর্মসূচি এলাকার সাথেই।

এদিকে যেসব এলাকা থেকে অধিবাসীদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে সেখানে লুটপাটের দায়ে অন্তত ২৯ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন দমকল কর্মী সেজে চুরি করছিলো।

ক্যালিফোর্নিয়া গভর্নর গেভিন নিউসন এর আগে এক হাজার অতিরিক্ত ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে এখন ১৪ হাজার দমকল কর্মী কাজ করছে। তাদের সহায়তা করছে ৮৪টি এয়ারক্রাফট ও ১৩৫৪টি ফায়ার ইঞ্জিন।

১ লাখ ৫ হাজার মানুষ এখনো বাধ্যতামূলকভাবে অন্যত্র অবস্থান করছেন। আরও ৮৭ হাজারের ওপর সরে যাওয়ার সতর্কতা আছে।

কর্মকর্তারা দাবানল জোনগুলোর কাছে ড্রোন না ওড়াতে বারবার মানুষকে সতর্ক করেছে। এর মধ্যে একটি ড্রোনের সাথে আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিমানের সংঘর্ষ হয়েছে। এফবিআই এর ছবি প্রকাশ করেছে।

ওদিকে গভর্নর নিউসন ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বিতর্ক লেগেই আছে।

গভর্নর ট্রাম্পকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মি. ট্রাম্প ‘দেশটির ইতিহাসের অন্যতম এই বিপর্যয়ের’ জন্য ‘অযোগ্য রাজনীতিকদের’ দায়ী করেছেন।

মি. নিউসন একজন ডেমোক্র্যাট এবং তিনি আগুনের বিষয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য মি. ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন।

আমি কয়েকদিন ধরে এই আগুনের খবর একটু বেশী রাখছি। কারণ এই এলাকায় আমার মেয়েসহ আমার পরিচিত বেশকিছু বাংলাদেশি বসবাস করে। আমি তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তারা সকলেই মোটামুটি নিরাপদে আছে। শুধু আমার মেয়ে তার বাসা ছেড়ে প্রায় এক সপ্তাহ যাবত প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দূরে তার বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। তবে এরমধ্যে একবার ঝুঁকি নিয়ে তার বাসায় ঘুরে এসেছে। বাসা মোটামুটি অক্ষত থাকলেও এখনো বাসায় ফিরে যাওয়ার পরিবেশ হয় নি। আমি নিজেও এই এলাকায় বহুদিন ঘুরে ঘুরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিলাসবহুল বাড়িঘর দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। ভয়াবহ আগুনে ধ্বংস হয়ে যাওয়া মালিবু থেকে শান্তা মণিকার দৃশ্য আমার চোখে ভাসছে। আমি প্রশান্ত মহাসাগরের বালুর উপর দিয়ে অনেক দূর হেটে হেটে ঐ এলাকার মনোরম দৃশ্য দেখেছি। সাগরের মধ্যে ঝুলে থাকা বিলিয়ন ডলারের চোখ জুড়ানো বাড়িঘরের দৃশ্য কখনো ভুলবার নয়। এখন মনে হচ্ছে- আবার যদি কখনো ওখানে যাওয়ার সুযোগ হয় তাহলে কী দেখবো?

এই আগুন নিয়ে খোদ আমেরিকার রাজনীতিতে চলছে বিতর্ক। চলছে পরস্পরের উপর দোষ চাপানোর তর্ক। তাইতো আমার বলতে ইচ্ছে করছে- হায়রে রাজনীতি, তোর কোন নীতি নেই।

ওদিকে কেউ কেউ আছে, ঘর পোড়ার ভিতর আলু পোড়া দিতে। অর্থাৎ আগুন লাগার সুযোগে শুরু করেছে লুটপাট। এতকাল মনে করতাম এসব শুধু বাঙালির অভ্যাস। কিন্তু এখন দেখছি আমেরিকার লোকজনও এই কাজে বেশ পটু।

লস এঞ্জেলসে বসবাসরত আমার পরিচিতদের খোঁজ খবর নিতে গিয়ে আর এক নতুন খবর শুনলাম। কেউ কেউ বলছে – এই আগুন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, কিছু কিছু দুর্বৃত্ত লুটপাটের উদ্দেশ্যে আগুন লাগিয়েছে। তাদের কেউ কেউ আটক হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অচিরেই তথ্য উদঘাটিত হবে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে এই আগুন নিয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করছে। তারা বলছে- আমেরিকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশ জ্বলেপুড়ে মরছে, তাই আল্লাহর তরফ থেকে আমেরিকার উপর গজব নাজিল হয়েছে।

আমি এসব কোনকিছুর জন্য চিন্তিত নই। পৃথিবীতে এমন ঘটনা এর আগে বহুবার ঘটেছে। ভবিষ্যতেও ঘটবে। এবং এটাই স্বাভাবিক। প্রকৃতি তার নিজের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এমন অনেককিছু করে থাকে। মানুষ তার হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে কত জঘন্য কাজ করে। একদল মানুষ অন্যদল মানুষকে খতম করতে, একজাতি অন্য জাতিকে কোনঠাসা করতে, এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে, এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোকের বিরুদ্ধে কতকিছুই করছে। অথচ কোন মানুষ এইসব ঘটনা বা দুর্ঘটনা থেকে সারাজীবনের জন্য কোন শিক্ষা নিচ্ছে না। কিছুকাল পর সবকিছু ভুলে গিয়ে আবার অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। মানুষ কবে মানুষ হবে, এই চিন্তা আমাকে দগ্ধ করছে।

খুলনা গেজেট/ টিএ

The post আগুনের পরশমণি নয়, ধ্বংসযজ্ঞ appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

আগুনের পরশমণি নয়, ধ্বংসযজ্ঞ

Update Time : 06:07:34 pm, Tuesday, 14 January 2025

ক্যালিফোর্নিয়ায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে প্রচণ্ড বাতাস বয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে, যা চলতি সপ্তাহেই দাবানলকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তিনটি জায়গায় ছড়িয়ে পড়া দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকল কর্মীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, রবিবার থেকে শুষ্ক বাতাস আবার বেড়ে বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে এবং এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯৬ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

বাতাস বেড়ে যাওয়ার আগেই পালিসেইডস ও ইটনের দাবানল ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।

স্থানীয় দমকলকর্মীদের সাথে একযোগে কাজ করছে আরও আটটি রাজ্য এবং কানাডা, মেক্সিকো থেকে আসা কর্মীরা।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে রবিবার পর্যন্ত দাবানলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪-এ। এর আগে কর্মকর্তারা ১৬ জন নিখোঁজ থাকার কথা বলেছিলেন।

নিহতদের মধ্যে ১৬ জনের মৃতদেহ ইটন এলাকায় আর আটজনের পালিসেইডস এলাকায় পাওয়া গেছে।

সবচেয়ে বড় দাবানলের শিকার হয়েছে পালিসেইডস, যেখানে প্রায় ২৩ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে। অন্যদিকে ইটনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দাবানলে প্রায় ১৪ হাজার একর এলাকা ভস্মীভূত হয়েছে।

এছাড়া হার্স্ট-এ পুড়েছে ৭৯৯ একর। তবে সেখানকার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

দমকলকর্মীরা যখন বড় দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে শুরু করেছে তখনি কর্তৃপক্ষ নতুন করে প্রচণ্ড বাতাসের বিষয়ে সতর্ক করলো, যা ‘সম্ভাব্য বিপর্যয়কর বাতাসে’ পরিণত হতে পারে।

এতে পুরো লস অ্যাঞ্জেলেসই দাবানলের হুমকির মুখে পড়ে। লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার বিভাগের প্রধান ক্রিস্টিন ক্রাউলি ইভাকুয়েশন জোনগুলোর অধিবাসীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন যাতে করে কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিলেই তারা সরে যেতে পারে।

একই সাথে তাদের এমনভাবে অবস্থান করতে বলা হয়েছে যাতে করে কর্মীদের কাজে প্রতিবন্ধকতা না হয়।
আগুন রবিবার নতুন করে ছড়িয়েছে যার কারণে সান ফার্নান্দো উপত্যকা ও নিকটবর্তী নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরি এলাকার কমিউনিটিগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।

রবিবার দমকলকর্মীরা অ্যানগেলেস ন্যাশনাল ফরেস্ট এলাকায় নতুন আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এলাকাটি গোপন প্রযুক্তিসহ যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশ কর্মসূচি এলাকার সাথেই।

এদিকে যেসব এলাকা থেকে অধিবাসীদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে সেখানে লুটপাটের দায়ে অন্তত ২৯ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন দমকল কর্মী সেজে চুরি করছিলো।

ক্যালিফোর্নিয়া গভর্নর গেভিন নিউসন এর আগে এক হাজার অতিরিক্ত ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে এখন ১৪ হাজার দমকল কর্মী কাজ করছে। তাদের সহায়তা করছে ৮৪টি এয়ারক্রাফট ও ১৩৫৪টি ফায়ার ইঞ্জিন।

১ লাখ ৫ হাজার মানুষ এখনো বাধ্যতামূলকভাবে অন্যত্র অবস্থান করছেন। আরও ৮৭ হাজারের ওপর সরে যাওয়ার সতর্কতা আছে।

কর্মকর্তারা দাবানল জোনগুলোর কাছে ড্রোন না ওড়াতে বারবার মানুষকে সতর্ক করেছে। এর মধ্যে একটি ড্রোনের সাথে আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিমানের সংঘর্ষ হয়েছে। এফবিআই এর ছবি প্রকাশ করেছে।

ওদিকে গভর্নর নিউসন ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বিতর্ক লেগেই আছে।

গভর্নর ট্রাম্পকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মি. ট্রাম্প ‘দেশটির ইতিহাসের অন্যতম এই বিপর্যয়ের’ জন্য ‘অযোগ্য রাজনীতিকদের’ দায়ী করেছেন।

মি. নিউসন একজন ডেমোক্র্যাট এবং তিনি আগুনের বিষয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য মি. ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন।

আমি কয়েকদিন ধরে এই আগুনের খবর একটু বেশী রাখছি। কারণ এই এলাকায় আমার মেয়েসহ আমার পরিচিত বেশকিছু বাংলাদেশি বসবাস করে। আমি তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তারা সকলেই মোটামুটি নিরাপদে আছে। শুধু আমার মেয়ে তার বাসা ছেড়ে প্রায় এক সপ্তাহ যাবত প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দূরে তার বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। তবে এরমধ্যে একবার ঝুঁকি নিয়ে তার বাসায় ঘুরে এসেছে। বাসা মোটামুটি অক্ষত থাকলেও এখনো বাসায় ফিরে যাওয়ার পরিবেশ হয় নি। আমি নিজেও এই এলাকায় বহুদিন ঘুরে ঘুরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিলাসবহুল বাড়িঘর দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। ভয়াবহ আগুনে ধ্বংস হয়ে যাওয়া মালিবু থেকে শান্তা মণিকার দৃশ্য আমার চোখে ভাসছে। আমি প্রশান্ত মহাসাগরের বালুর উপর দিয়ে অনেক দূর হেটে হেটে ঐ এলাকার মনোরম দৃশ্য দেখেছি। সাগরের মধ্যে ঝুলে থাকা বিলিয়ন ডলারের চোখ জুড়ানো বাড়িঘরের দৃশ্য কখনো ভুলবার নয়। এখন মনে হচ্ছে- আবার যদি কখনো ওখানে যাওয়ার সুযোগ হয় তাহলে কী দেখবো?

এই আগুন নিয়ে খোদ আমেরিকার রাজনীতিতে চলছে বিতর্ক। চলছে পরস্পরের উপর দোষ চাপানোর তর্ক। তাইতো আমার বলতে ইচ্ছে করছে- হায়রে রাজনীতি, তোর কোন নীতি নেই।

ওদিকে কেউ কেউ আছে, ঘর পোড়ার ভিতর আলু পোড়া দিতে। অর্থাৎ আগুন লাগার সুযোগে শুরু করেছে লুটপাট। এতকাল মনে করতাম এসব শুধু বাঙালির অভ্যাস। কিন্তু এখন দেখছি আমেরিকার লোকজনও এই কাজে বেশ পটু।

লস এঞ্জেলসে বসবাসরত আমার পরিচিতদের খোঁজ খবর নিতে গিয়ে আর এক নতুন খবর শুনলাম। কেউ কেউ বলছে – এই আগুন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, কিছু কিছু দুর্বৃত্ত লুটপাটের উদ্দেশ্যে আগুন লাগিয়েছে। তাদের কেউ কেউ আটক হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অচিরেই তথ্য উদঘাটিত হবে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে এই আগুন নিয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করছে। তারা বলছে- আমেরিকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশ জ্বলেপুড়ে মরছে, তাই আল্লাহর তরফ থেকে আমেরিকার উপর গজব নাজিল হয়েছে।

আমি এসব কোনকিছুর জন্য চিন্তিত নই। পৃথিবীতে এমন ঘটনা এর আগে বহুবার ঘটেছে। ভবিষ্যতেও ঘটবে। এবং এটাই স্বাভাবিক। প্রকৃতি তার নিজের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এমন অনেককিছু করে থাকে। মানুষ তার হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে কত জঘন্য কাজ করে। একদল মানুষ অন্যদল মানুষকে খতম করতে, একজাতি অন্য জাতিকে কোনঠাসা করতে, এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে, এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোকের বিরুদ্ধে কতকিছুই করছে। অথচ কোন মানুষ এইসব ঘটনা বা দুর্ঘটনা থেকে সারাজীবনের জন্য কোন শিক্ষা নিচ্ছে না। কিছুকাল পর সবকিছু ভুলে গিয়ে আবার অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। মানুষ কবে মানুষ হবে, এই চিন্তা আমাকে দগ্ধ করছে।

খুলনা গেজেট/ টিএ

The post আগুনের পরশমণি নয়, ধ্বংসযজ্ঞ appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.