স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে মধ্যস্বত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা শ্রম আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশনা না মেনে ৭০ থেকে ৮০ কেজি ওজনের আলুর বস্তা হিমাঘারে ঢোকাতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন হিমাগার মালিকেরা।
বুধবার দুপুরে রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তুলেছে। রাজশাহী চেম্বার ভবনের সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫ এর বিধি ৬৩ অনুযায়ী, কোন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিককে ৫০ কেজি ওজনের অতিরিক্ত ওজন বিশিষ্ট কোন দ্রব্য হাতে বা মাথাই করে উত্তোলন কিংবা বহন করানো যাবে না। ২০১৮ সালে হাইকোর্ট এক রায়েও একই আদেশ দেন। কিন্তু এই আইন ও নির্দেশনা তারা বাস্তবায়ন করতে পারছেন না মধ্যস্বত্ত্বভোগী আলু ব্যবসায়ীদের কারণে। ফলে শ্রমিকের ঘাড়ে ওঠে অতিরিক্ত ওজনের বস্তা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজশাহী জেলায় ৩৬টি হিমাগার রয়েছে। এবার সবাই সিদ্ধান্ত নেন যে, তারা এবার ৫০ কেজি ওজনের বেশি ওজনের আলুর বস্তা হিমাগারে নেবেন না। আর গতবছর বস্তাপ্রতি হিসেবে হিমাগার ভাড়া নেয়া হলেও এবার তারা আলুর কেজিপ্রতি হিসেবে ভাড়া নেবেন। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর মধ্যস্বত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা প্রচার চালান যে, হিমাগারে আলুর ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরপর জেলার তানোরে ছয়টি হিমাঘারে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
হিমাগার মালিকেরা সংবাদ সম্মেলনে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি) ফুটেজ দেখান। এতে দেখা যায়, ৫০ কেজির বেশি ওজনের বস্তা না নেয়ার কথা লিখে হিমাগারের সামনে টাঙানো ব্যানার খুলে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন কিছু ব্যক্তি। গত রোববার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে সিসি ক্যামেরায় তা ধরা পড়ে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে হিমাগার মালিকেরা জানান, গতবছর পর্যন্ত বস্তা হিসেবে আলুর ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তাই মধ্যস্বত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা সব সময় ৫০ কেজির স্থলে ৭০ থেকে ৮০ কেজি আলু ভরেছেন বস্তায়। ফলে বেশি আলু রেখেও কম ভাড়া দিয়েছেন তারা। হিমাগার মালিকেরা বাধ্য হয়ে ওই বস্তা নিয়েছেন। কিন্তু এই বস্তা উত্তোলনের সময় শ্রমিকদের কষ্ট হয়েছে। আইনের লঙ্ঘন বলে কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগ অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করেছে।
এর ফলে তারা আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এবার বস্তা হিসেবে নয়; ভাড়া নেবেন আলুর ওজন করে। তাহলে মধ্যস্বত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ওজনের বস্তা দেবেন না। তারাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের পর রাজনৈতিক মদদে হিমাগারে হিমাগারে হামলা হচ্ছে। এতে তারা উদ্বিগ্ন।
হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, ‘গত বছর ৫০ কেজির বস্তায় ৩৪০ টাকা ভাড়া নেয়া হত। এর ফলে কেজি প্রতি সংরক্ষণে খরচ পড়ত প্রায় সাত টাকা। কিন্তু ব্যাংকের সুদ হারসহ সব খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন চলতি মৌসুমে কেজি প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করেছে সর্বোচ্চ আট টাকা।
এরপরেও কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত রয়েছে, এ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা এর চেয়েও কম ভাড়ায় তারা নিজস্ব সিদ্ধান্তে আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন।’ তারা ৫০ কেজির বস্তার ব্যাপারে শ্রম আইন ও হাইকোর্টের রায়ের বাস্তবায়ন দাবি করেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরেরও সহায়তা কামনা করেন। এছাড়া যারা হিমাগারে হামলা করছে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু, রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু বাক্কার আলীসহ অন্য হিমাগার মালিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
The post আলুর বস্তার ওজন ৫০ কেজিই চান হিমাগার মালিকেরা appeared first on সোনালী সংবাদ.
ঠিকানা : গুলশান, ঢাকা, বাংলাদেশ || তথ্য, খবর ও বিজ্ঞাপন : +8809611719385 || ইমেইল : songbadpatra24@gmail.com
Visit : songbadpatra.com
All rights reserved © সংবাদপত্র-2024