4:03 pm, Thursday, 16 January 2025

চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে তার কোন প্রভাব নেই

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক চালের উপর থেকে আমদানি ও নিয়ন্ত্রণ শুল্ক প্রত্যাহার করার পর গত দুই মাসে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৮১ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে দামের উপর এর কোন প্রভাব পড়ছে না। বরং লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। চালের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।

ভুক্তভোগিরা বলছেন, শহর, শহরতলী ও গ্রামাঞ্চলের হাট বাজারগুলোতে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। অতীতে কখনোই ভরা মৌসুমে চালের মূল্য বৃদ্ধির এমন প্রবণতা দেখা যায়নি। চালের দাম কমানোর জন্য সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পরও সুফল মিলছে না। চাল দিয়ে চালবাজি বর্তমানে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। মূল্য বৃদ্ধির সাথে আয় না বাড়ায় বাজার থেকে প্রয়োজনীয় সবজি কিনলেও চাহিদা অনুযায়ী চাল কিনতে পারছেন না অনেকে।

শহরের মুনজিতপুর এলাকার রিকসা চালক নওশের আলী জানান, সারাদিন রিকসা চালিয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি আয় করা যায় না। কিন্তু বাজারে চাল কিনতে গেলে প্রায় সব টাকা শেষ হয়ে যায়। এক কেজি মোটা চালের দাম ৫৮ টাকা। প্রতিদিন প্রায় ৩ কেজির বেশি চাল লাগে। সাথে অন্য কিছু কিনতে গেলে হাতে কিছুই থাকে না। এদিকে চালের দামের সাথে বেড়েছে তেলের দাম। সবজির দাম কম হলেও অন্য সবকিছুর দাম বাড়তি। এই অবস্থায় পাঁচজনের সংসার চালাতে দারুণভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা নিউ ফতেমা স্টোরের মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, বেশ কিছুদিন আগে থেকে সব ধরনের চালের দাম বাড়তি। খুচরা বাজারে ২৮ জাতের চাল ৬৮ টাকা, ব্রি বা বিনা -১০ জাতের চাল ৫৮-৬০ টাকা, ৩০ চাল ৫৮ টাকা, মিনিকেট ৭৪ টাকা ও বাঁশমতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮ টাকা কেজি। বাজারের পাইকারদের কাছ থেকে কেনার পর আমরা সামন্য লাভে খুচরা বিক্রি করে থাকি। তবে চালের দাম বাড়ায় আগে যারা মিনিকেট খেতেন তাদের অনেকে এখন ২৮ জাতের চাল কিনছেন। অপেক্ষাকৃত দাম কম হওয়ায় এখন ব্রি বা বিনা -১০ ও ৩০ জাতের চাল বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ি মেসার্স মিজান চাল স্টোরের মালিক মিজানুর রহমান জানান, বাজারে সব ধরনের চালের দাম আগের চেয়ে বেশি। বর্তমানে বাজারে ভারতীয় আমদানি করা (এলসি) স্বর্ণা ১৩৪০, স্বর্ণ দেশী ১৩০০, হিরা ১২৫০, ২৮ চাল ১৭০০, মিনিকেট ১৮৫০, মিনিকেট অন্য একটি জাতের চাল ১৭৫০ এবং বাশমতি চাল ২১৫০ টাকা প্রতি ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ খানেক এসব চালের দাম প্রতি বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা কম ছিল।

তিনি আরও বলেন, বাজারে নতুন চাল উঠা শুরু হয়েছে। নতুন চালের সরবরাহ বাড়লে আরও কিছু দিন পরে হয়তো চালের দাম একটু কমতে পারে। তবে ভারতীয় চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে দামের উপর কোন প্রভাব পড়েনি।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, বাজারে চালের দাম কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চালের ওপর থেকে সব আমদানি ও নিয়ন্ত্রণ শুল্ক প্রত্যাহার করেছে দুই মাস আগে। এরপর প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি হয়েছে। আরও লাখ টন চাল আমদানির অপেক্ষায়। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন প্রাপ্ত ৬৯টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ১৩ নভেম্বর থেকে ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ভোমরা বন্দর ব্যবহার করে ভারত থেকে ৮১ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রকার চাল আমদানি করেছে। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪০টি আমদানিকারক ভারত থেকে ১৭ হাজার ২৯৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি করেছে। তারপরও বাজারে দামের উপর ইতিবাচক কোন প্রভাব পড়েনি। বরং দাম আরও বাড়তির দিকে।

অভিযোগ উঠেছে বিদেশ থেকে যে চাল আমদানি হচ্ছে তার বড় অংশ বাজারে বিক্রি না করে গুদামজাত করে রাখছেন আমদানিকারকরা। ফলে ভরা মৌসুমে চালের দাম মানুষের নাগালে থাকছে না। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের একটি মনিটারিং প্রতিনিধি দল ভোমরা বন্দরের কয়েকটি চালের গুদাম পরিদর্শন করেছেন। এসময় চাল আমদানিকারক প্রতিনিধিকে অতি দ্রুত গুদাম থেকে চাল বাজারজাত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তবে ক্রেতা ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হাতে গোনা কিছু স্বয়ংক্রিয় চালকল মালিক ও ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়া যারা ভারত থেকে চাল আমদানি করছেন, তারা গুদামজাত করে রাখায় বাজারে দামের উপর ইতিবাচক কোন প্রভাব পড়ছে না। চালের দাম ভরা মৌসুমে বৃদ্ধি পাওয়ায় অচিরেই তা নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে-এমন আশংকা করছেন ভুক্তভোগীরা।

ভোমরা বন্দর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছেন, ভারত থেকে আমদানিকৃত চালের লট বিক্রি না করে অধিক লভ্যাংশের আশায় গুদামজাত করে রাখা হয়েছে। আমদানিকৃত হাজার হাজার মেট্রিক টন চাল সঠিক মূল্য প্রাপ্তি ও বিক্রির অজুহাত এনে গুদামজাত করে রাখা হয়েছে। ফলে চালের বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সাধারণ ভোক্তারা পড়েছেন বিপাকে।

ভোমরা ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার আবুল কালাম আজাদ জানান, চাল আমদানির শুরু থেকে গত দুই মাসে এই বন্দর দিয়ে ৮১ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। আরও চাল আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম

The post চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে তার কোন প্রভাব নেই appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে তার কোন প্রভাব নেই

Update Time : 01:07:30 pm, Thursday, 16 January 2025

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক চালের উপর থেকে আমদানি ও নিয়ন্ত্রণ শুল্ক প্রত্যাহার করার পর গত দুই মাসে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৮১ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে দামের উপর এর কোন প্রভাব পড়ছে না। বরং লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। চালের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।

ভুক্তভোগিরা বলছেন, শহর, শহরতলী ও গ্রামাঞ্চলের হাট বাজারগুলোতে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। অতীতে কখনোই ভরা মৌসুমে চালের মূল্য বৃদ্ধির এমন প্রবণতা দেখা যায়নি। চালের দাম কমানোর জন্য সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পরও সুফল মিলছে না। চাল দিয়ে চালবাজি বর্তমানে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। মূল্য বৃদ্ধির সাথে আয় না বাড়ায় বাজার থেকে প্রয়োজনীয় সবজি কিনলেও চাহিদা অনুযায়ী চাল কিনতে পারছেন না অনেকে।

শহরের মুনজিতপুর এলাকার রিকসা চালক নওশের আলী জানান, সারাদিন রিকসা চালিয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি আয় করা যায় না। কিন্তু বাজারে চাল কিনতে গেলে প্রায় সব টাকা শেষ হয়ে যায়। এক কেজি মোটা চালের দাম ৫৮ টাকা। প্রতিদিন প্রায় ৩ কেজির বেশি চাল লাগে। সাথে অন্য কিছু কিনতে গেলে হাতে কিছুই থাকে না। এদিকে চালের দামের সাথে বেড়েছে তেলের দাম। সবজির দাম কম হলেও অন্য সবকিছুর দাম বাড়তি। এই অবস্থায় পাঁচজনের সংসার চালাতে দারুণভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা নিউ ফতেমা স্টোরের মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, বেশ কিছুদিন আগে থেকে সব ধরনের চালের দাম বাড়তি। খুচরা বাজারে ২৮ জাতের চাল ৬৮ টাকা, ব্রি বা বিনা -১০ জাতের চাল ৫৮-৬০ টাকা, ৩০ চাল ৫৮ টাকা, মিনিকেট ৭৪ টাকা ও বাঁশমতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮ টাকা কেজি। বাজারের পাইকারদের কাছ থেকে কেনার পর আমরা সামন্য লাভে খুচরা বিক্রি করে থাকি। তবে চালের দাম বাড়ায় আগে যারা মিনিকেট খেতেন তাদের অনেকে এখন ২৮ জাতের চাল কিনছেন। অপেক্ষাকৃত দাম কম হওয়ায় এখন ব্রি বা বিনা -১০ ও ৩০ জাতের চাল বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ি মেসার্স মিজান চাল স্টোরের মালিক মিজানুর রহমান জানান, বাজারে সব ধরনের চালের দাম আগের চেয়ে বেশি। বর্তমানে বাজারে ভারতীয় আমদানি করা (এলসি) স্বর্ণা ১৩৪০, স্বর্ণ দেশী ১৩০০, হিরা ১২৫০, ২৮ চাল ১৭০০, মিনিকেট ১৮৫০, মিনিকেট অন্য একটি জাতের চাল ১৭৫০ এবং বাশমতি চাল ২১৫০ টাকা প্রতি ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ খানেক এসব চালের দাম প্রতি বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা কম ছিল।

তিনি আরও বলেন, বাজারে নতুন চাল উঠা শুরু হয়েছে। নতুন চালের সরবরাহ বাড়লে আরও কিছু দিন পরে হয়তো চালের দাম একটু কমতে পারে। তবে ভারতীয় চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে দামের উপর কোন প্রভাব পড়েনি।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, বাজারে চালের দাম কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চালের ওপর থেকে সব আমদানি ও নিয়ন্ত্রণ শুল্ক প্রত্যাহার করেছে দুই মাস আগে। এরপর প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি হয়েছে। আরও লাখ টন চাল আমদানির অপেক্ষায়। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন প্রাপ্ত ৬৯টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ১৩ নভেম্বর থেকে ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ভোমরা বন্দর ব্যবহার করে ভারত থেকে ৮১ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রকার চাল আমদানি করেছে। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪০টি আমদানিকারক ভারত থেকে ১৭ হাজার ২৯৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি করেছে। তারপরও বাজারে দামের উপর ইতিবাচক কোন প্রভাব পড়েনি। বরং দাম আরও বাড়তির দিকে।

অভিযোগ উঠেছে বিদেশ থেকে যে চাল আমদানি হচ্ছে তার বড় অংশ বাজারে বিক্রি না করে গুদামজাত করে রাখছেন আমদানিকারকরা। ফলে ভরা মৌসুমে চালের দাম মানুষের নাগালে থাকছে না। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের একটি মনিটারিং প্রতিনিধি দল ভোমরা বন্দরের কয়েকটি চালের গুদাম পরিদর্শন করেছেন। এসময় চাল আমদানিকারক প্রতিনিধিকে অতি দ্রুত গুদাম থেকে চাল বাজারজাত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তবে ক্রেতা ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হাতে গোনা কিছু স্বয়ংক্রিয় চালকল মালিক ও ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়া যারা ভারত থেকে চাল আমদানি করছেন, তারা গুদামজাত করে রাখায় বাজারে দামের উপর ইতিবাচক কোন প্রভাব পড়ছে না। চালের দাম ভরা মৌসুমে বৃদ্ধি পাওয়ায় অচিরেই তা নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে-এমন আশংকা করছেন ভুক্তভোগীরা।

ভোমরা বন্দর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছেন, ভারত থেকে আমদানিকৃত চালের লট বিক্রি না করে অধিক লভ্যাংশের আশায় গুদামজাত করে রাখা হয়েছে। আমদানিকৃত হাজার হাজার মেট্রিক টন চাল সঠিক মূল্য প্রাপ্তি ও বিক্রির অজুহাত এনে গুদামজাত করে রাখা হয়েছে। ফলে চালের বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সাধারণ ভোক্তারা পড়েছেন বিপাকে।

ভোমরা ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার আবুল কালাম আজাদ জানান, চাল আমদানির শুরু থেকে গত দুই মাসে এই বন্দর দিয়ে ৮১ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। আরও চাল আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম

The post চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে তার কোন প্রভাব নেই appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.