নগর প্রতিনিধি:
আমেনা ও মাইমুনা দুই বোন, যারা অভাব-অনটনের সংসারে শিশুকাল থেকেই জীবিকা নির্বাহের জন্য নগরে ফুল বিক্রি করে বেড়ায়।
আট-দশ বছরের এই দুই শিশুকন্যার উপার্জন দিয়েই তাদের মা নুরুন্নাহর বেগম কোনোভাবে সংসার চালানোর কাজটি করছেন।
জীবিকার তাগিদে ফুল বিক্রি করতে নেমে দুই বোনের পড়াশোনাও বন্ধের উপক্রম। তারপরও সংগ্রামের জীবনে জীবিকাই যে মুখ্য। তাই প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে দিনের পাশাপাশি রাতেও নগরের ঐতিহ্যবাহী বেলস্ পার্ক প্রাঙ্গণ ঘুরে ঘুরে ফুল বিক্রিই তাদের কাছে মুখ্য।
তবে হঠাৎ করেই যেন ভাগ্য সহায় হয়েছে আমেনা ও মাইমুনার। গেল পৌষের এক সন্ধ্যায় বেলস্ পার্ক প্রাঙ্গণে হাঁটতে থাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজের দৃষ্টি যায় শীতে কাঁপতে থাকা শিশু দুটির দিকে। বিবেকের তাড়নায় শিশু দুটিকে কাছে ডেকে তাদের বিষয়ে জানতে শুরু করেন সমাজসেবার এই কর্মকর্তা।
প্রাথমিকভাবে জানতে পারেন, শিশু দুটির বাড়ি বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতীরবর্তী রসূলপুর কলোনিতে। ছয়জনের পরিবারের তাদের বাবা তেমন একটা কাজ কর্ম করেন না, বড় ভাইও দায়িত্বহীন ব্যক্তি। আর এরপরে আমেনা ও মাইমুনা দুই বোন; যারা সংসারের হাল ধরতে গিয়ে ফুল বিক্রি করেন। তাদের পর ৬-৭ মাস বয়সী আরও এক ছোটভাই রয়েছে।
সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, বিষয়গুলো জানার পর প্রাথমিকভাবে শিশু দুজনকে শীতের কাপড় হিসেবে দুটি কম্বল দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এর পাশাপাশি তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই শুরু করি। তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই করে শিশু দুটির পরিবার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলি। এরপর তাদের পড়াশোনার জন্য স্কুলে ভর্তি করে দেই, পাশাপাশি জীবিকার জন্য ফুলেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মী কামরুন্নাহার ইভা বলেন, শিশু দুটির বিষয়ে সাজ্জাদ পারভেজ স্যার অবগত হওয়ার পর ওদের শীতের পোশাক দেওয়ার পাশাপাশি আমাকে খোঁজ নিতে বলেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি রসূলপুর কলোনীতে বাসায় ভাড়া নিয়ে থাকেন আমেনা ও মাইমুনার পরিবার।
তিনি বলেন, আমেনা ও মাইমুনার বাবা মাঝেমধ্যে মাছ বিক্রি করে থাকেন, তবে বেশিরভাগ সময়েই কাজ থাকে না তার। আর ওদের বড় ভাইও নিয়মিত কোনো কাজ করে না। ফলে সংসারে অভাব-অনটন লেগে থাকে। এ অবস্থায় মাস দুই ধরে বেলস্ পার্কে সামান্য কিছু টাকার ফুল বিক্রি শুরু করেন আট ও দশ বছর বয়সী আমেনা এবং মাইমুনা। আর অভাবের কারণে আমেনা ও মাইমুনা নিয়মিত স্কুলেও যায় না।
তিনি বলেন, বিষয়গুলো সাজ্জাদ পারভেজ স্যারকে জানালে তিনি ৮ নং চকবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং আমেনা ও মাইমুনাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করান। সেইসঙ্গে স্থানীয় একটা টেইলার্সে ওদের দুইবোনের স্কুল ড্রেস বানাতে দেন। পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ওদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিক্রির জন্য ফুলের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এখন আগের থেকে অনেক বেশি ফুল বিক্রি করতে পারবে তারা, অন্য কাজগুলোর সঙ্গে সেই ব্যবস্থা সাজ্জাদ স্যার নিজের উদ্যোগেই করে দিয়েছেন। আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতেও কোনো বেগ পেতে হবে না।
এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, ছোট ছোট মেয়ে দুটি শিক্ষার আলো পাবে এটাই আমার প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা থেকেই ওদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি, এটাই বড় প্রাপ্তি আমার।
The post শুধু ফুল বিক্রি নয়, এবার পড়াশোনাও চালিয়ে যাবে আমেনা-মাইমুনা appeared first on Amader Barisal - First online Newspaper of Greater Barisal - Stay with Barisal 24x7.
ঠিকানা : গুলশান, ঢাকা, বাংলাদেশ || তথ্য, খবর ও বিজ্ঞাপন : +8809611719385 || ইমেইল : songbadpatra24@gmail.com
Visit : songbadpatra.com
All rights reserved © সংবাদপত্র-2024