আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পেঁয়াজের বাজার বেসামাল হয়ে পড়ে। ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। বিকল্প হিসেবে পাকিস্তান, চীন, মিশর ও থাইল্যান্ড থেকে পেঁয়াজ আমদানী হয়েছে। পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা ও ফরিদপুর থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। আমদানী ও দেশী পেঁয়াজ আসায় ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিযোগিতার বাজারে পিছিয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। নভেম্বরে দাম ছিল কেজি প্রতি ১শ’ টাকা।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বন্যার কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। বিকল্প হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রথমে পাকিস্তানকে বেছে নিলেও পরবর্তীতে চীন, মিশর ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানী করা হয়। দক্ষিণ জনপদে চাহিদার ৯০ শতাংশ পেঁয়াজ ভারত থেকে আসত বেনাপোল ও সাতক্ষীরা ভোমরা শুল্ক স্টেশন দিয়ে। বিভিন্ন সময়ে রপ্তানী নিষেধাজ্ঞা, শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া সহ নানান অজুহাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ফায়দা লুটতেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিগত সরকারের আমলে বিকল্প কোন ব্যবস্থা নিতে পারতেন না। বিগত সরকারের অনাগ্রহের কারণে পেঁয়াজের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হত।
২০২২ ও ২০২৩ সালে তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়ার মত দেশ থেকে আমদানি করার সুযোগ পেয়েছিল দেশীয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু স্বাদ ভিন্ন হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আমদানী থেকে পিছিয়ে যায়। এছাড়া ভারতের এক চেটিয়া বাজার থাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভিন দেশ থেকে আমদানীর সুযোগ দেয়নি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সরকার সেপ্টেম্বর থেকে আমদানীর অনুমতি দেয়। সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ পাকিস্তান, মিশর, চীন ও মিয়ানমার থেকে এসেছে। আমদানীকৃত পেঁয়াজ চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের চাহিদা পূরণ করে। বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের নৌপথে আমদানী সহজ হওয়ায় সে দেশ থেকে আমদানীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উৎসাহিত করছে। পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের আসলাম মিয়া জানান, মিয়ানমার থেকে আমদানীর সুযোগ ছিল। কিন্তু ভারতকে এক চেটিয়া সুযোগ দেয়ার কারণে বিগত সরকার অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানীতে নিরুসাহিত করে।
স্থানীয় সূত্র বলেছে, গত ৩ দিনে ভোমরা শুল্ক স্টেশন দিয়ে দুই ট্রাক পেঁয়াজ কদমতলায় খালাস হয়েছে।
কদমতলাস্থ মেহেদী বাণিজ্য ভান্ডারের ম্যানেজার জানান, ভারতীয় পেঁয়াজের মূল্য বেশি হওয়ায় চাহিদা অনেক কম। তিনি জানান, ফরিদপুর ও চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রতিদিন ১০/১২ ট্রাক পেঁয়াজ কদমতলা মোকামে খালাস হচ্ছে। এখন হাত বদল কম হচ্ছে। ব্যাপারীদের পরিবর্তে উৎপাদনকারী কৃষক সরাসরি ট্রাক বোঝাই করে কদমতলায় নিয়ে আসছে। ডিসেম্বরের ৩য় সপ্তাহ থেকে বাজার নিম্নমুখি। ফেব্রুয়ারি থেকে গোপালগঞ্জ, মোল্লাহাট, শরিয়তপুর ও মাদারীপুরের পেঁয়াজ আমদানি বাড়বে।
মেসার্স সোহেল ট্রেডার্সেও ম্যানেজার মোঃ সুজন জানান, ১৫ জানুয়ারি ৪১ বস্তা পেঁয়াজ এ আড়তে আসে। প্রতি কেজি পাইকারী মূল্য ৪৮ টাকা। এর চাহিদা খুবই কম। তাজ ট্রেডিং এর ম্যানেজার জানান ভারতীয় পেঁয়াজের তুলনায় দেশীয় পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা ৫বস্তা থাকলে প্রতিদিন দেশীয় পেঁয়াজ ৪০ বস্তা বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, চীনের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল গত মঙ্গলবার কদমতলা মোকাম পরিদর্শন করেছেন।
বড় বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রিমান হোসেনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ভারতীয় পেঁয়াজের গতকালের মূল্য ছিল ৫৫-৬০ টাকা। দেশীয় পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তিনি বলেন, গত ১৫ দিন দেশীয় পেঁয়াজ অভ্যন্তরীন বাজারের চাহিদা পূরণ করায় আমদানীকৃত এ মসল্লা জনিত পণের চাহিদা কমেছে। এই সূত্র বলেছে ইতিপূর্বে কৃত্রিমভাবে ভারত দক্ষিণাঞ্চলে কুটনীতিক চালের মাধ্যমে এক চেটিয়া বাজার সৃষ্টি করে। গত ৪ মাস আর এ সুযোগ নেই। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে প্রতিবেশী দেশ পেঁয়াজের ব্যবসায় পিছিয়ে পড়েছে।
খুলনা গেজেট/ টিএ
The post প্রতিযোগিতায় খুলনার বাজারে পিছিয়ে পড়েছে ভারতীয় পেঁয়াজ appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.
ঠিকানা : গুলশান, ঢাকা, বাংলাদেশ || তথ্য, খবর ও বিজ্ঞাপন : +8809611719385 || ইমেইল : songbadpatra24@gmail.com
Visit : songbadpatra.com
All rights reserved © সংবাদপত্র-2024