তালতলী ((বরগুনা) প্রতিনিধি:
মোটা অংকের চাঁদার বিনিময়ে তালতলী উপজেলা মৎস্য বিভাগ, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ ম্যানেজ করে বঙ্গোপসাগর উপকুলে নিষিদ্ধ বেহুন্দি জাল দিয়ে দেদারসে মাছের পোনা ও জলজ প্রাণী নিধন করছেন জেলেরা। অভিযোগ রয়েছে দাদন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মৎস্য ব্যবসায়ী সোনাকাটা ইউনিয়ন ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি মজিবর ফরাজী ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ টুকু সিকদার চার দপ্তরকে ম্যানেজ করে জেলেদের দিয়ে ছোট চিড়িংসহ মাছের পোনা নিধন করাচ্ছেন। বছরের পর বছর বেহুন্দি জাল দিয়ে কোটি কোটি টাকার মাছের পোনা নিধণ করলেও চার দপ্তর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এতে ধ্বংস হচ্ছে সামদ্রিক নানা প্রজাতির জীব বৈচিত্র। দ্রæত নিষিদ্ধ বেহুন্দি জাল দিয়ে মাছের পোনা নিধন বন্ধের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অবশ্য সকল দপ্তর মোটার অংকের চাঁদা নেয়ার কথা অস্বীকার করছেন।
জানাগেছে, বঙ্গোপসাগরের উপকুল তালতলী উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত এক হাজার জেলে পরিবার রয়েছে। ওই জেলেরা নিষিদ্ধ বেহুন্দি জাল দিয়ে চিড়িংসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করছে। নভেম্বর মাস থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত চলে এ মৎস্য নিধণ। অভিযোগ রয়েছে দাদন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দাদন ব্যবসায়ী সোনাকাটা ইউনিয়ন ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি মজিবুর ফরাজী ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ টুকু সিকদার উপজেলা মৎস্য বিভাগ, পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ ম্যানেজ করে জেলেদের দিয়ে পোনা মাছ নিধন করাচ্ছেন। জেলেরা সাগরে নির্ভয়ে অবৈধ বেহুন্দি জাল দিয়ে চিড়িংসহ মাছের পোনা নিধন করছেন। আরো অভিযোগ রয়েছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ দাদন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আতাত করেই জেলেদের দিয়ে নিষিদ্ধ বেহুন্দি জাল দিয়ে সাগরে মাছ শিকার করাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে ফকিরঘাট কোষ্টগার্ড, নিদ্রা নৌ পুলিশ ও উপজেলা মৎস্য অফিস নাম মাত্র দু’একটি অভিযান পরিচালনা করলেও সাগরে জেলেদের খুঁজে পায় না তারা। এগুলো তাদের লোক দেখানো অভিযান বলে জানান স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ফকিরঘাট বাজারের বিএফডিসি ঘাট থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭০/৮০ টন ভূলা চিংড়ি ও পোনা মাছ মৎস্য ব্যবসায়ীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানী করছে।
শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, তালতলীর ফকিরহাট, আশারচর, নিশানবাড়িয়া, নিন্দ্রা সকিনাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নিষিদ্ধ বেহুন্দি জাল দিয়ে জেলেরা পোনা মাছ নিধন করছে। ওই নিষিদ্ধ জালে ছোট চিড়িং (ভুলা), ছোট পোমা, ফাহা ও লইট্টাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা আটকা পরছে। স্থানীয় শুটকি ব্যবসায়ী জামাল আকন ওই মাছের পোনা শুকিয়ে রাবিশ তৈরি করছেন।
স্থানীয় শহিদুল ইসলাম ও জাফর বলেন, জেলেরা প্রতিদিন যে পরিমান মাছের পোনা নিধন করছেন ওই পোনামাছ বড় হলে কয়েশ কোটি টাকা আয় হতো। নিষিদ্ধ বেহুন্দি জালে পোনা মাছ নিধন হওয়ায় সেই আয় হচ্ছে না। দ্রæত নিষিদ্ধ বেহুন্দি জাল বন্ধ হওয়ার দাবী তাদের।
তালতলী উপজেলার ফকিরহাটের জব্বার ও স্বজলসহ কয়েকজন জেলে বলেন, সারা বছর মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করি। বর্তমানে অন্য মাছ না থাকায় নিষিদ্ধ বেহুন্দি জাল দিয়ে পোনা মাছ শিকার করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে বলেন, নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছের পোনা শিকার করতে ১৫ দিন অন্তর অন্তর তিন হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দুই দাদন ব্যবসায়ী মজিবুর ফরাজী ও টিটু সিকদার এ টাকা তুলে প্রশাসন ম্যানেজ করেন। তারা আরো বলেন, ১৫ দিনে তারা অন্তত ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে বিভিন্ন দপ্তরে ভাগ করে দেয়।
ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মৎস্য ব্যবসায়ী মোঃ মজিবর ফরাজী জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার কথা অস্বীকার করে বলেন, জেলেরা নিজেরা নিজেরা নিষিদ্ধ জাল দিয়ে পোনা মাছ শিকার করছে এখানে আমার কোন হাত নেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ফকিরহাট দাদন ব্যবসায়ী টুকু সিকদার সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জেলেদের দাদন দিয়েছি। ওই হিসেবে তাদের কাছ থেকে কমিশন নেই। এর বাহিরে জেলেদের সঙ্গে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই। তিনি আরো বলেন, ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ৩৫ জন দাদন ব্যবসায়ী রয়েছে। তারা জেলেদের লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়েছে।
তালতলী নিদ্রা নৌ পুলিশের ইনচার্জ সাগর ভদ্র বলেন, জলযানের অভাবে সাগরে অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না। আগামী সপ্তাহে অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ বেহুন্দি জালে মাছ শিকারী জেলেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন বলেন, উপজেলা মৎস্য দপ্তরের নামে চাঁদা নেয়ার যে অভিযোগ উঠেছে এটি সত্য নয়, নিষিদ্ধ বেহুন্দি জাল দিয়ে পোনা মাছ শিকার অবৈধ। তিনি আরো বলেন, অভিযান পরিচালনা করলেও মাছ পাই কিন্তু জাল পাই না। এ সকল নিষিদ্ধ জাল পেলে আগুনে পুড়ে বিনষ্ট করে দেই।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা বলেন, উপজেলা মৎস্য বিভাগ কম্বিং অপারেশন চালাচ্ছেন। তারপরও যদি নিষিদ্ধ জাল দিয়ে জেলেরা মাছের পোনা নিধন করে থাকে, অভিযান চালিয়ে ওই জেলেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
The post মৎস্য অফিস, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড ম্যানেজ করে নিষিদ্ধ বেহুন্দি জালে পোনা নিধন appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.