8:40 pm, Monday, 20 January 2025

এক যুগ ধরে বন্ধ বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি

বিশেষ প্রতিনিধি:

১৭০ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি। লাইব্রেরিয়ান না থাকা এবং পরিচালনা পর্ষদের নজরদারি ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় ১৪ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এ লাইব্রেরি বিভিন্ন সময় সচল করার দাবি উঠলেও তাতে কর্ণপাত করেনি জেলা প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রিটিশ সরকারের প্রচেষ্টায় ১৮৫৪ সালে বরিশালে এনেক্স ভবনের পাশে ১৭ শতাংশ জমির ওপরে প্রতিষ্ঠা করা হয় বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি। পরে ১৯৮৫ সালে ১৪ হাজারের বেশি বই সমৃদ্ধ লাইব্রেরিটি নগরীর বান্দ রোডে স্থানান্তর করা হয়।

সেখানে ৫৮ শতাংশ জমির ওপর নির্মাণ করা হয় একতলার পাবলিক লাইব্রেরি ভবন। সে সময় প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষ লাইব্রেরিতে বই পড়তে যেতেন। এরপর নানা সমস্যার কারণে ঐতিহাসিক গণগ্রন্থাগারটি ২০০৪ সালে বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে লাইব্রেরিটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সেসব উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

লাইব্রেরিটির কার্যক্রম সচল করার জন্য সর্বশেষ ২০১২ সালের প্রথম দিকে ৭ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। পদাধিকারবলে কমিটির সভাপতি হন জেলা প্রশাসক। ওই সময় লাইব্রেরির ১ হাজার ১০০ জন সদস্য ছিলেন।

এর মধ্যে ৬০০ জন ছিলেন আজীবন সদস্য। বাকিরা সাধারণ সদস্য ছিলেন। তবে এর কয়েক মাসের মাথায় প্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে সচল করার উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন।

সরেজমিনে দেখা যায়, জরাজীর্ণ লাইব্রেরি ভবন। ভবনের দেয়াল ও ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। বইয়ের তাকগুলো তালাবদ্ধ। এর অধিকাংশ বই নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, লাইব্রেরির নিরাপত্তা প্রহরী নেই। পরিত্যক্ত লাইব্রেরি ভবন ও এর আশপাশের এলাকা মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া রাতে চলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড।

পাবলিক লাইব্রেরির এমএলএসএস শহিদ গাজি বলেন, ‘এক সময়ে দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ লোক বই পড়তে আসতেন। এখন সেই পরিবেশ নেই। তাই পাঠকও আসেন না। ১৪ বছর ধরে পাঠকের আশায় আছি।

ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে বরিশালের এ ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। তবে এখনো আশায় আছি, লাইব্রেরিটি আবারও মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। লাইব্রেরি অঙ্গনে ফিরে আসবে প্রাণচাঞ্চল্য।’

এ বিষয়ে জাতীয় কবিতা পরিষদ বরিশাল শাখার সভাপতি তপংকর চক্রবর্তী বলেন, লাইব্রেরির সভাপতি জেলা প্রশাসক। লাইব্রেরি পুনরায় চালু করার জন্য আগের জেলা প্রশাসকদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম।

কিন্তু তারা আগ্রহ দেখাননি। বর্তমানে যে জেলা প্রশাসক আছেন তার কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। আমি মনে করি, বরিশালের অন্য যেকোনো উন্নয়নকাজে হাত দেওয়ার আগে তিনি পাবলিক লাইব্রেরিটি চালু করবেন।

ঐতিহ্যবাহী এ লাইব্রেরি সদস্য লেখক ও গবেষক আনিচুর রহমান খান স্বপন বলেন, ‘ভারত ও বাংলায় প্রথম যে চারটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তার একটি হলো বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি। অত্যন্ত সমৃদ্ধ এই লাইব্রেরিটি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ।

এটা দুঃখজনক ব্যাপার। অব্যবস্থাপনার কারণে লাইব্রেরিটি এখন সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত পড়ে আছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক লাইব্রেরিটি চালুর দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এর ফলে লাইব্রেরিতে থাকা বইয়ের বিশাল সংগ্রহশালা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এই বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরিতে বসে বই পাড়ার মতো পরিবেশ সৃস্টি করা হলে নতুন নতুন পাঠকের সৃস্টি হবে। আশা রাখি, বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী লাইব্রেরি পুনঃউজ্জীবিত করবে।

এসব বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি নিয়ে সবার মাঝে আগ্রহ রয়েছে। আমরাও চাই লাইব্রেরিটি টিকে থাকুক।

প্রয়োজনীয় সংস্কার ও জনবল নিয়োগ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি একটি প্রতিবেদন তৈরি করবেন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

The post এক যুগ ধরে বন্ধ বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.

Tag :

এক যুগ ধরে বন্ধ বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি

Update Time : 04:07:29 pm, Monday, 20 January 2025

বিশেষ প্রতিনিধি:

১৭০ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি। লাইব্রেরিয়ান না থাকা এবং পরিচালনা পর্ষদের নজরদারি ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় ১৪ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এ লাইব্রেরি বিভিন্ন সময় সচল করার দাবি উঠলেও তাতে কর্ণপাত করেনি জেলা প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রিটিশ সরকারের প্রচেষ্টায় ১৮৫৪ সালে বরিশালে এনেক্স ভবনের পাশে ১৭ শতাংশ জমির ওপরে প্রতিষ্ঠা করা হয় বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি। পরে ১৯৮৫ সালে ১৪ হাজারের বেশি বই সমৃদ্ধ লাইব্রেরিটি নগরীর বান্দ রোডে স্থানান্তর করা হয়।

সেখানে ৫৮ শতাংশ জমির ওপর নির্মাণ করা হয় একতলার পাবলিক লাইব্রেরি ভবন। সে সময় প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষ লাইব্রেরিতে বই পড়তে যেতেন। এরপর নানা সমস্যার কারণে ঐতিহাসিক গণগ্রন্থাগারটি ২০০৪ সালে বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে লাইব্রেরিটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সেসব উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

লাইব্রেরিটির কার্যক্রম সচল করার জন্য সর্বশেষ ২০১২ সালের প্রথম দিকে ৭ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। পদাধিকারবলে কমিটির সভাপতি হন জেলা প্রশাসক। ওই সময় লাইব্রেরির ১ হাজার ১০০ জন সদস্য ছিলেন।

এর মধ্যে ৬০০ জন ছিলেন আজীবন সদস্য। বাকিরা সাধারণ সদস্য ছিলেন। তবে এর কয়েক মাসের মাথায় প্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে সচল করার উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন।

সরেজমিনে দেখা যায়, জরাজীর্ণ লাইব্রেরি ভবন। ভবনের দেয়াল ও ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। বইয়ের তাকগুলো তালাবদ্ধ। এর অধিকাংশ বই নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, লাইব্রেরির নিরাপত্তা প্রহরী নেই। পরিত্যক্ত লাইব্রেরি ভবন ও এর আশপাশের এলাকা মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া রাতে চলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড।

পাবলিক লাইব্রেরির এমএলএসএস শহিদ গাজি বলেন, ‘এক সময়ে দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ লোক বই পড়তে আসতেন। এখন সেই পরিবেশ নেই। তাই পাঠকও আসেন না। ১৪ বছর ধরে পাঠকের আশায় আছি।

ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে বরিশালের এ ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। তবে এখনো আশায় আছি, লাইব্রেরিটি আবারও মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। লাইব্রেরি অঙ্গনে ফিরে আসবে প্রাণচাঞ্চল্য।’

এ বিষয়ে জাতীয় কবিতা পরিষদ বরিশাল শাখার সভাপতি তপংকর চক্রবর্তী বলেন, লাইব্রেরির সভাপতি জেলা প্রশাসক। লাইব্রেরি পুনরায় চালু করার জন্য আগের জেলা প্রশাসকদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম।

কিন্তু তারা আগ্রহ দেখাননি। বর্তমানে যে জেলা প্রশাসক আছেন তার কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। আমি মনে করি, বরিশালের অন্য যেকোনো উন্নয়নকাজে হাত দেওয়ার আগে তিনি পাবলিক লাইব্রেরিটি চালু করবেন।

ঐতিহ্যবাহী এ লাইব্রেরি সদস্য লেখক ও গবেষক আনিচুর রহমান খান স্বপন বলেন, ‘ভারত ও বাংলায় প্রথম যে চারটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তার একটি হলো বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি। অত্যন্ত সমৃদ্ধ এই লাইব্রেরিটি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ।

এটা দুঃখজনক ব্যাপার। অব্যবস্থাপনার কারণে লাইব্রেরিটি এখন সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত পড়ে আছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক লাইব্রেরিটি চালুর দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এর ফলে লাইব্রেরিতে থাকা বইয়ের বিশাল সংগ্রহশালা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এই বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরিতে বসে বই পাড়ার মতো পরিবেশ সৃস্টি করা হলে নতুন নতুন পাঠকের সৃস্টি হবে। আশা রাখি, বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী লাইব্রেরি পুনঃউজ্জীবিত করবে।

এসব বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি নিয়ে সবার মাঝে আগ্রহ রয়েছে। আমরাও চাই লাইব্রেরিটি টিকে থাকুক।

প্রয়োজনীয় সংস্কার ও জনবল নিয়োগ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি একটি প্রতিবেদন তৈরি করবেন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

The post এক যুগ ধরে বন্ধ বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.