সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বিএনপির দুইপক্ষের মধ্যে তখন রীতিমত ইট বৃষ্টি চলছে। ঢাল সড়কি নিয়ে সড়কের দুই প্রান্তে অবস্থান নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে মত্ত উভয় শিবির। পুলিশ ও সেনাবাহিনী কিছুটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চেষ্টা চালাচ্ছেন সংঘর্ষে লিপ্ত পক্ষদ্বয়কে নিবৃত করতে। এরই মধ্যে গাড়ি থেকে নেমে জ্যাকেট কিংবা হেলমেট ছাড়াই দৌড় দিলেন উভয় পক্ষের মধ্যবর্তী স্থানের উদ্দেশ্যে।
রীতিমত চমকে দেয়ার মত এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন শ্যামনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন। একজন নারী কর্মকর্তা হয়েও কোন ধরনের নিরাপত্তা সামগ্রী ছাড়াই দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে তার এমন উপস্থিতি চমকে দিয়েছে সবাইকে। সাহসিকতাপূর্ণ তার এমন ভূমিকার জন্য সাধারণ মানুষসহ সংঘর্ষে লিপ্ত থাকা দু’পক্ষই রীতিমত তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকাল ৫টার দিকে এমন দুঃসাহসিক কান্ড ঘটিয়ে ইউএনও মোছাঃ রনী খাতুন এখন শ্যামনগরের মানুষের কাছে ভাইরাল ইউএনওর খেতাব পেয়েছেন।
জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে বেশ উত্তেজনা চলছে। ইতিমধ্যে উপজেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদপন্থী নেতাকর্মীদের সাথে গত ১৯ ও ২০ জানুয়ারি সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান পন্থীদের দু’দফা সংঘর্ষেও ঘটনা ঘটেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার উভয় পক্ষ শ্যামনগর উপজেলা সদরে পৃথক কর্মসূচি আহবান করায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বিকাল ৪টার কিছু আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণের লক্ষ্যে বংশীপুর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা শ্যামনগরে প্রবেশের পথে প্রশাসনের বাধায় পিছু হটে। একপর্যায়ে তারা ফিরে যাওয়ার সময় ইসমাইলপুর এলাকায় পৌঁছে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। এসময় খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান ইউএনও মোছাঃ রনী খাতুন। এসময় নিজের দেহরক্ষী আনসার সদস্যসহ সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের পিছু ফেলে দৌড়ে চলে যান সংঘর্ষের মধ্যে। এসময় তার পাশে থাকা সাইফুল নামের এক আনসার সদস্য বুকে ও শ্যামনগর থানার ওসি হুমমায়ুুন কবীর পায়ে ইটের আঘাতপ্রাপ্ত হলেও দ্রুত দুই গ্রুপের মাঝখানে পৌঁছে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
এসময় তার উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ পক্ষদ্বয় কিছুটা নিবৃত হলে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল রিফাতকে সাথে নিয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় উভয় পক্ষকে ঘটনাস্থল থেকে হটিয়ে দেন।
এ বিষয়ে সোলায়মান কবীরের পক্ষের যুবদল সভাপতি শফিকুল ইসলাম দুলু জানান, নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করেই দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে তিনি ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। একজন নারী হয়ে তিনি অনেক সাহসী ভূমিকা রেখেছেন।
আব্দুল ওয়াহেদ পক্ষের নেতা আশেক ই এলাহী মুন্না জানান, অলৌকিকভাবে ইউএনও ম্যাডাম রক্ষা পেয়েছেন। তবে তিনি কোনো নিরাপত্তা ছাড়াই ওইভাবে সংঘর্ষের মধ্যে নাও ঢুকতে পারতেন। যদিও তার কারণেই পরবর্তীতে সংঘর্ষ থামানো গেছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন জানান, তিনি জ্ঞাতসারে এমন কাজ করেছেন। আরও বেশী ক্ষতি হওয়ার আগেই সংঘাত থামাতে কাউকে না কাউকে পদক্ষেপ নিতে হতো। তিনি সকলকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজার রাখার আহবান জানান।
প্রসঙ্গতঃ বুধবার বিকালে শ্যামনগর উপজেলার ইসমাইলপুর এলাকায় বিএনপির দু’পক্ষের ইট বৃষ্টির মধ্যে পড়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবীর ও ইউএনও’র বডিগার্ড আনছার সদস্য সাইফুল ইসলামসহ ২২জন আহত হয়। সংঘর্ষ এড়াতে এর আগে প্রশাসন শ্যামনগর সদরে ১৪৪ ধারা জারি করে। আহতদের মধ্যে আনছার সদস্য সাইফুলসহ পথচারী মেহেদী, বিএনপি কর্মী, আব্দুর রশিদ, আব্দুল মজিদ ও আব্দুর রাজ্জাককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রানী খাতুনের নেতৃত্বে রাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা এলাকায় টহল দিয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম
The post ইটবৃষ্টির মধ্যে বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষ থামাতে দৌড়ে গেলেন ইউএনও রনী খাতুন appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.
ঠিকানা : গুলশান, ঢাকা, বাংলাদেশ || তথ্য, খবর ও বিজ্ঞাপন : +8809611719385 || ইমেইল : songbadpatra24@gmail.com
Visit : songbadpatra.com
All rights reserved © সংবাদপত্র-2024