9:52 am, Monday, 27 January 2025
Aniversary Banner Desktop

অস্তিত্ব সংকটে দাকোপের নদীখাল, কৃষকের মনে আশঙ্কা

খুলনার দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন জলাভূমিতে অপরিকল্পিত বাঁধ আর স্রোতেই গতিপথ বদলে যাওয়ার কারণে উপজেলার শুকিয়ে যাওয়া-নদী খাল দখল করছে এলাকার প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যুরা। দখলকৃত এ সব খাল-নদীতে অবৈধভাবে মাছ চাষ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে উপজেলার প্রায় অর্ধশত খাল ও নদী এখন অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে। জলমহাল ইজারা বাতিল করাসহ খননের দাবি জানিয়েছে স্হানীয় কৃষক।

সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, দাকোপ উপজেলায় ২২৮টির বেশি নদী খাল রয়েছে। আশির দশকের খাল ও নদ-নদীর শাখা প্রশাখায় এখন জোয়ার ভাটা প্রবাহ না থাকায় এবং মানুষের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে দাকোপ উপজেলার এক তৃতীয়াংশ জলাশয় আজ হারিয়ে গেছে। ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে অধিকাংশ খাল ও নদী। এ কারণে এলাকার খাল-নদীর ঐতিহ্য এখন আর নেই। এক সময়ের শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত এ উপজেলার হাজারো পরিবারের জীবনযাপনের মূল চালিকা শক্তি ছিল এ সব খাল ও নদী। এ উপজেলার কৃষি মৎস্য, ব্যবসা-বাণিজ্য সংস্কৃতি নির্ভর করত এ সব প্রবাহমান খাল ও নদীর উপর। কিন্ত কালের পরিবর্তনে আজ অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে এ এলাকার জ্বলাভূমি।

এ সংকট রোধে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও সমন্বিত কোন চেষ্টা নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। ফলে দীর্ঘ বছরের অবহেলায় আজ হারিয়ে যেতে বসেছে দাকোপের পানি সম্পদ। ছোট-বড় নদী থেকে এলাকায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ার কারণে এখন এ এলাকার গ্রামাঞ্চলের পুকুরগুলিতে তেমনভাবে পানি থাকে না। নিচের স্তুরে পানি শূন্যতার কারণে গভীর-অগভীর নলকূপেও পূর্বের মত পানি উঠছে না বিশেষ করে চৈত্র মাস আসতে না আসতেই এলাকার অধিকাংশ খাল, বিল, পুকুরের পানি শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়, তখন রবি সর্ষের আবাদ করতে কৃষক জমিতে সেচ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে না। এখন সুপেয় পানির অভাবে ভুগছে গোটা দাকোপ উপজেলার মানুষ। এলাকায় ধীরে ধীরে পানি সংকটের কারণে উপজেলায় বসবাসরত মানুষের জন্য বিপর্যয় ধেয়ে আসছে।

উপজেলার চালনা পৌরসভাসহ ৯টি ইউনিয়ন ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, চালনা পৌরসভার আনন্দ নগর, বড়খলিসা, পার-চালনা, আচাভয়া ও পানখালী ইউনিয়নের মৌখালী, হোগলাবুনিয়া, খাটাইল খাল ও পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। পানখালি ও তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের মাঝ বরাবর ভদ্রা নদী এখন মৃত প্রায়, কামিনীবাসিয়ার খাল, তেতুল তলার খাল, বাজুয়া ইউনিয়নের বাজুয়া নদী, বেড়ের খাল, কচা খাল, মলেঙ্গা খাল এবং লাউডোব ইউনিয়নের দীর্ঘ ১১ কিলোমিটার লম্বা চড়া নদীর ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের গাবতলা, ধনপতি, মাছরাঙ্গা, মৌখালী, ধোপাদি লাইনের খাল, মেরিরখাল, কালিখাল বানিশান্তা ইউনিয়নের বুড়ির ডাবর খাল, ভোজনখালী খাল, খেজুরিয়া খাল, দাকোপ ইউনিয়নের সাহেবের আবাদ খাল, সিটিবুনিয়া খাল, সুতারখালী ইউনিয়নের কাটাবুনিয়া খাল, কেওড়াতলী খাল, কামারখোলা ইউনিয়নের জালিয়া কালীখাল, ভিটেভাঙ্গা খাল, শুকিয়ে গেছে। এছাড়া মরে যাওয়া খালের মধ্যে চালনা পৌরসভার পারচালনা খাল, কামারখোলা ইউনিয়নের জয়নগর নদী, তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের ভদ্রা নদী, লাউডোর বানিশান্তা ইউনিয়নের মাঝ সীমানা নদী, খুটাখালী খাল, আমতলা খাল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বাজুয়া, কৈলাশগঞ্জ লাউডোব তিলডাঙ্গা ও পানখালী ইউনিয়নের কৃষকরা জানালেন, এখানকার খাল-নদী শুকিয়ে জেগেছে হাজার হাজার হেক্টর জমি। কিন্ত খাল-নদী বাঁচিয়ে রাখার কথা বিবেচনা না করে গত সেটেলমেন্টের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন পন্থায় ম্যানেজ করে অনেকেরই সরকারি ভরাট খাল ও নদীকে নিজেদের জমিভূক্ত করে নিয়েছে। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত দখল হচ্ছে সরকারের অধিকাংশ খাল-নদী ও জলাশয়। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ এলাকার কৃষিনির্ভর প্রান্তিক চাষিরা। লাউডোব গ্রামের কৃষি বিদ দূগাপদ সরদার, অভিযোগ রাজনৈতিক পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে এখানকার সরকারি জলাশয়ের হাতবদল হয়ে থাকে। মূলত এ কারণে খাল-নদী দখল মুক্ত করা সম্ভব হয় না।

স্থানীয়রা বলেন, অবৈধ দখলকৃত সরকারি খাল, নদী ও জলাশয় যতদ্রুত সম্ভব দখলমুক্ত করে ইজারা দেওয়া বন্ধ রেখে পুনঃখনন করা হলে এ এলাকার কৃষি ও ব্যবসা বাণিজ্যে উন্নয়নে আরও প্রসার ঘটবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার প্রদীপ কুমার দাম বলেন, খাল ও নদীতে অবৈধ নেট/পাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে তবে আমাদের পর্যাপ্ত জনবলের অভাব এই কার্যক্রমের গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করছে!

তিনি আরও বলেন যে, এই ধরনের কার্যক্রমকে সফল করতে হলে সমাজের সকল স্তরের মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।

প্রবাহমান খালগুলিকে যাতে ইজারা বহির্ভূত রাখা হয় এই বিষয়ে তিনি সামনে উপজেলা মাসিক মিটিংয়ের সভায় আলোচনা করেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম

The post অস্তিত্ব সংকটে দাকোপের নদীখাল, কৃষকের মনে আশঙ্কা appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

ndax login

https://ndaxlogi.com

latitude login

https://latitude-login.com

latitude login

latitude login

অস্তিত্ব সংকটে দাকোপের নদীখাল, কৃষকের মনে আশঙ্কা

Update Time : 11:07:49 am, Sunday, 26 January 2025

খুলনার দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন জলাভূমিতে অপরিকল্পিত বাঁধ আর স্রোতেই গতিপথ বদলে যাওয়ার কারণে উপজেলার শুকিয়ে যাওয়া-নদী খাল দখল করছে এলাকার প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যুরা। দখলকৃত এ সব খাল-নদীতে অবৈধভাবে মাছ চাষ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে উপজেলার প্রায় অর্ধশত খাল ও নদী এখন অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে। জলমহাল ইজারা বাতিল করাসহ খননের দাবি জানিয়েছে স্হানীয় কৃষক।

সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, দাকোপ উপজেলায় ২২৮টির বেশি নদী খাল রয়েছে। আশির দশকের খাল ও নদ-নদীর শাখা প্রশাখায় এখন জোয়ার ভাটা প্রবাহ না থাকায় এবং মানুষের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে দাকোপ উপজেলার এক তৃতীয়াংশ জলাশয় আজ হারিয়ে গেছে। ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে অধিকাংশ খাল ও নদী। এ কারণে এলাকার খাল-নদীর ঐতিহ্য এখন আর নেই। এক সময়ের শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত এ উপজেলার হাজারো পরিবারের জীবনযাপনের মূল চালিকা শক্তি ছিল এ সব খাল ও নদী। এ উপজেলার কৃষি মৎস্য, ব্যবসা-বাণিজ্য সংস্কৃতি নির্ভর করত এ সব প্রবাহমান খাল ও নদীর উপর। কিন্ত কালের পরিবর্তনে আজ অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে এ এলাকার জ্বলাভূমি।

এ সংকট রোধে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও সমন্বিত কোন চেষ্টা নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। ফলে দীর্ঘ বছরের অবহেলায় আজ হারিয়ে যেতে বসেছে দাকোপের পানি সম্পদ। ছোট-বড় নদী থেকে এলাকায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ার কারণে এখন এ এলাকার গ্রামাঞ্চলের পুকুরগুলিতে তেমনভাবে পানি থাকে না। নিচের স্তুরে পানি শূন্যতার কারণে গভীর-অগভীর নলকূপেও পূর্বের মত পানি উঠছে না বিশেষ করে চৈত্র মাস আসতে না আসতেই এলাকার অধিকাংশ খাল, বিল, পুকুরের পানি শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়, তখন রবি সর্ষের আবাদ করতে কৃষক জমিতে সেচ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে না। এখন সুপেয় পানির অভাবে ভুগছে গোটা দাকোপ উপজেলার মানুষ। এলাকায় ধীরে ধীরে পানি সংকটের কারণে উপজেলায় বসবাসরত মানুষের জন্য বিপর্যয় ধেয়ে আসছে।

উপজেলার চালনা পৌরসভাসহ ৯টি ইউনিয়ন ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, চালনা পৌরসভার আনন্দ নগর, বড়খলিসা, পার-চালনা, আচাভয়া ও পানখালী ইউনিয়নের মৌখালী, হোগলাবুনিয়া, খাটাইল খাল ও পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। পানখালি ও তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের মাঝ বরাবর ভদ্রা নদী এখন মৃত প্রায়, কামিনীবাসিয়ার খাল, তেতুল তলার খাল, বাজুয়া ইউনিয়নের বাজুয়া নদী, বেড়ের খাল, কচা খাল, মলেঙ্গা খাল এবং লাউডোব ইউনিয়নের দীর্ঘ ১১ কিলোমিটার লম্বা চড়া নদীর ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের গাবতলা, ধনপতি, মাছরাঙ্গা, মৌখালী, ধোপাদি লাইনের খাল, মেরিরখাল, কালিখাল বানিশান্তা ইউনিয়নের বুড়ির ডাবর খাল, ভোজনখালী খাল, খেজুরিয়া খাল, দাকোপ ইউনিয়নের সাহেবের আবাদ খাল, সিটিবুনিয়া খাল, সুতারখালী ইউনিয়নের কাটাবুনিয়া খাল, কেওড়াতলী খাল, কামারখোলা ইউনিয়নের জালিয়া কালীখাল, ভিটেভাঙ্গা খাল, শুকিয়ে গেছে। এছাড়া মরে যাওয়া খালের মধ্যে চালনা পৌরসভার পারচালনা খাল, কামারখোলা ইউনিয়নের জয়নগর নদী, তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের ভদ্রা নদী, লাউডোর বানিশান্তা ইউনিয়নের মাঝ সীমানা নদী, খুটাখালী খাল, আমতলা খাল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বাজুয়া, কৈলাশগঞ্জ লাউডোব তিলডাঙ্গা ও পানখালী ইউনিয়নের কৃষকরা জানালেন, এখানকার খাল-নদী শুকিয়ে জেগেছে হাজার হাজার হেক্টর জমি। কিন্ত খাল-নদী বাঁচিয়ে রাখার কথা বিবেচনা না করে গত সেটেলমেন্টের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন পন্থায় ম্যানেজ করে অনেকেরই সরকারি ভরাট খাল ও নদীকে নিজেদের জমিভূক্ত করে নিয়েছে। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত দখল হচ্ছে সরকারের অধিকাংশ খাল-নদী ও জলাশয়। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ এলাকার কৃষিনির্ভর প্রান্তিক চাষিরা। লাউডোব গ্রামের কৃষি বিদ দূগাপদ সরদার, অভিযোগ রাজনৈতিক পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে এখানকার সরকারি জলাশয়ের হাতবদল হয়ে থাকে। মূলত এ কারণে খাল-নদী দখল মুক্ত করা সম্ভব হয় না।

স্থানীয়রা বলেন, অবৈধ দখলকৃত সরকারি খাল, নদী ও জলাশয় যতদ্রুত সম্ভব দখলমুক্ত করে ইজারা দেওয়া বন্ধ রেখে পুনঃখনন করা হলে এ এলাকার কৃষি ও ব্যবসা বাণিজ্যে উন্নয়নে আরও প্রসার ঘটবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার প্রদীপ কুমার দাম বলেন, খাল ও নদীতে অবৈধ নেট/পাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে তবে আমাদের পর্যাপ্ত জনবলের অভাব এই কার্যক্রমের গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করছে!

তিনি আরও বলেন যে, এই ধরনের কার্যক্রমকে সফল করতে হলে সমাজের সকল স্তরের মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।

প্রবাহমান খালগুলিকে যাতে ইজারা বহির্ভূত রাখা হয় এই বিষয়ে তিনি সামনে উপজেলা মাসিক মিটিংয়ের সভায় আলোচনা করেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম

The post অস্তিত্ব সংকটে দাকোপের নদীখাল, কৃষকের মনে আশঙ্কা appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.