8:45 am, Wednesday, 29 January 2025
Aniversary Banner Desktop

বরিশাল চেম্বার-আইনজীবী সমিতিতেও থাবা:হাট ঘাট টার্মিনাল সবই বিএনপির

বিশেষ প্রতিনিধি:

বরিশালের সবকিছুই এখন বিএনপির দখলে। নগরীর ১৭টি হাট-বাজার, ৯টি ঘাট আর ২টি বাস টার্মিনাল শুধু নয়, আইনজীবী সমিতি, চেম্বার অব কমার্স এমনকি বিসিক শিল্পনগরীতে থাকা মালিকদের সংগঠনেও থাবা পড়েছে দলটির নেতাদের। অভিযোগ উঠেছে, বালুমহাল, ড্রেজিংয়ের ব্যবসা ও থ্রি হুইলার স্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত চাঁদা নেওয়ার। নগরে থাকা সব সরকারি দপ্তরের টেন্ডারও এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন বিএনপির ঠিকাদাররা। ৫ আগস্টের পর শুরু হওয়া এসব দখল-চাঁদাবাজি এখনো চলছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দলের একজন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না কিছুই। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলছেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ৩ জনকে ইতোমধ্যে শাস্তি দিয়েছি আমরা। এ রকম তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর যখন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ঠিক সেই সময় নগরের ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় জনব্যবহার্য একটি পুকুর ভরাট করে দখল চেষ্টার অভিযোগ ওঠে বিএনপির এক নেত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। তিনি বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন। প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ওই পুকুরটির মালিকানা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে চালানো হয় দখলের চেষ্টা। অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে শিরিনের দলীয় পদ-পদবি স্থগিত এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে বিএনপি। 

বিএনপির দখলে ২ বাস টার্মিনাল : নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল দখলের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ারের ছোট ভাই মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে। বর্তমানে সেখানকার আয়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। এছাড়া ২টি পরিবহণ লাইন দখলের অভিযোগও রয়েছে কখনোই বিএনপির কোনো পদ-পদবি কিংবা আন্দোলন সংগ্রামে না থাকা মোশাররফের বিরুদ্ধে। 

অভিযোগের বিষয়ে মোশাররফ বলেন, ‘মালিক সমিতির পুরোনো সদস্য আমি। আওয়ামী মালিকদের চাপে ব্যবসা করতে না পেরে বাস বিক্রি করে চলে গিয়েছিলাম। ৫ আগস্টের পর আবার বাস কিনে সমিতির সদস্য হয়েছি। এখানে একজন সাধারণ মালিক হিসাবে আছি। দখল বা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নই আসে না।’ 

নথুল্লাবাদের পাশাপাশি নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারের বিরুদ্ধে। মালিক সমিতির সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি বাস টার্মিনাল এবং সংলগ্ন এলাকার কোনো কিছুই এখন তার কথার বাইরে চলে না। সেই সঙ্গে সেখানকার আয়ও নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘১৬ বছর আগে মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। পরিবহণ ব্যবসা করি অন্তত ৩০ বছর ধরে। ৫ আগস্টের পর আগের নেতারা পালিয়ে গেলে টার্মিনাল পরিচালনার প্রয়োজনে মালিকরা আমাকে নিয়ে আসেন। সমিতির ৯২ সদস্যের মধ্যে ৮৬ জন ভোট দিয়ে আমাকে সভাপতি বানায়। এখানে দখলের কথা আসছে কেন?’

বিআইডব্লিউটিএ’র ৯ ঘাট ও ২ বাজার : অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার দুটি লঞ্চঘাটসহ এখানে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র ৯টি ঘাটের প্রায় সবকটি এখন চালাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। যদিও কাগজে-কলমে এসব ঘাটের ইজারাদার পলাতক আওয়ামী লীগের লোকজন। এর মধ্যে চানমারী ও কেটিসি ঘাটের নতুন করে ইজারা পেয়েছেন ১২নং ওয়ার্ডের বিএনপি নেতারা। এই দুই ঘাটের সাবেক ইজারাদার মৎস্যজীবী লীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে ওই দুই ঘাটের টোল আদায় বন্ধ করে দেয় বিএনপির লোকজন। অথচ নিলাম ডাকে ঘাট পাওয়ার পর প্রায় ৩০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে টোল আদায় করছিলাম। পরে গাফিলতি দেখিয়ে ইজারা বাতিল করে বিআইডব্লিউটিএ।’ 

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলতে রাজি হয়নি বিআইডব্লিউটিএ’র কোনো কর্মকর্তা। একতলা লঞ্চঘাটের ইজারাদার ছিলেন আওয়ামী লীগের আবুয়াল হোসেন অরুন। এটি পরিচালনা করছেন বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদ ও তার লোকজন। একইভাবে অন্য ঘাটগুলোতেও সরাসরি বিএনপির নেতাকর্মী কিংবা তাদের লোকজনের মাধ্যমে চলছে টোল আদায়। কেবল পোর্ট রোড বাজার রয়েছে সাবেক ইজারাদারের নিয়ন্ত্রণে। এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘হারুন অর রশিদ বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত। এছাড়া পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘাট কে কীভাবে চালাচ্ছে তার কোনো তথ্য নেই আমার কাছে। যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিসিসি’র ১৫ বাজার : নগরে ১৭টি হাট-বাজার রয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি)। ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাংলাবাজার ও নতুন বাজার থেকে সরাসরি টোল আদায় করে নগরভবন। বাকি ১৫ বাজারের ইজারাদার ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বর্তমানে এসব বাজারের টোল আদায় করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর বিএনপি নেতারা। এর মধ্যে ৭টি বাজারের আদায় করা টোল পলাতক আওয়ামী ইজারাদার ও বিএনপির লোকজন ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। বাকি ৮টি বাজার থেকে ওঠা টাকার পুরোটাই যাচ্ছে বিএনপির লোকদের পকেটে। নগরীর বৃহত্তম পুরান বাজারের ইজারাদার নাসির গাজী বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপির লোকজনের সঙ্গে সমঝোতা করে চলা ছাড়া তো উপায় নেই। ইজারা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কাছ থেকে পুরো বছরের টাকা নিয়ে নিয়েছে সিটি করপোরেশন। এখন ওরা (বিএনপির লোকজন) দয়া করে যা দেয় সেটাই লাভ।’ কাশিপুর বাজারের ইজারাদার কবির আহম্মেদ বলেন, ‘আমার ক্ষেত্রে পুরো টাকাই উঠিয়ে নিচ্ছে বিএনপির লোকজন।’ তবে বাজারের টোল দখলের এসব অভিযোগ অবশ্য স্বীকার করেনি বিএনপির কেউ। এ বিষয়ে বক্তব্য দিতেও রাজি হননি তারা।

চেম্বার অব কমার্স-আইনজীবী সমিতি-বিসিক শিল্পনগরী : পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সদস্যপদ নবায়ন, সাধারণ সভায় নির্বাচনি তফশিল ঘোষণা এবং নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হওয়ার কথা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কমিটি। এসব কিছু না করেই সভাপতি হয়ে চেম্বার দখলের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবায়েদুল হক চাঁনের বিরুদ্ধে। স্থানীয় একটি পত্রিকায় মতবিনিময় সভার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরে কাগজে-কলমে সভা, তফশিল আর ভোট দেখিয়ে তিনি এই দখলবাজি করেছেন বলে জেলা প্রশাসনসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন চেম্বারের ৭৪ জন সদস্য। কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগের দাবিও জানিয়েছেন তারা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এবায়েদুল হক চাঁন বলেন, ‘সবকিছু নিয়মবিধি মেনেই হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি।’ 

আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত কমিটি ছিল আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীদের নিয়ে। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৩ দিন আগে হঠাৎ করেই সমিতি কার্যালয় দখল করে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেন সর্বশেষ নির্বাচনে পরাজিত বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। এক বছর আগে জোর করে ফলাফল ছিনিয়ে নিয়ে তাদের পরাজিত করা হয়েছিল বলে দাবি তাদের। সাধারণ আইনজীবীদের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নেতৃত্বের বদল হয়েছে জানিয়ে নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করেন বিএনপি নেতা অ্যাড. সাদিকুর রহমান লিংকন। নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খান মোর্শেদ বলেন, ‘এটা ভয় দেখিয়ে জোর-জবরদস্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।’ বর্তমানে সমিতিতে নির্বাচনের আয়োজন হলেও বিএনপি ও জামায়াতপন্থি আইনজীবী ছাড়া অন্য সবাই তা বর্জন করেছে। 

বিসিক শিল্পনগরীর মালিক সমিতিও এখন বিএনপির দখলে। আগের কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটির সভাপতি হয়েছেন বিএনপিতে কোনো পদ-পদবি না থাকা সরোয়ার অনুসারী আলমগীর হোসেন আলম ওরফে সুন্দর আলম। কোনোরকম সভা কিংবা নির্বাচন ছাড়াই ১১ সদস্যের ওই কমিটি গঠন হয়েছে বলে দাবি সাবেক কমিটির নেতাদের। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সুন্দর আলম বলেন, ‘বিসিকের সব মালিক মিলে সভা করে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি করেছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।’

এসবের বাইরেও বরিশাল নগরীর নগদ আয়ের প্রায় সব সেক্টরই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ঠিকাদারিসহ বালুমহাল, ড্রেজিং আর সাধারণ গণপরিবহনের নেতৃত্বও এখন তাদের হাতে। পরিচয় না প্রকাশের শর্তে এলজিইডি, গণপূর্ত, নগরভবন, শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আগে যেটা আওয়ামী লীগ করত সেটাই এখন বিএনপি করছে। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে যে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের যেসব নেতাকর্মীর ব্যবসা-বাণিজ্য ছিনিয়ে নিয়েছিল সেগুলো আবার তারা ফেরত নিয়েছে। তবে যেভাবে বলা হচ্ছে তেমন কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। বিএনপি কোনো সন্ত্রাসী দখলদার-চাঁদাবাজকে প্রশ্রয় দেয় না। প্রমাণসহ অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেব আমরা।’

তথ্যসূত্র:যুগান্তর

The post বরিশাল চেম্বার-আইনজীবী সমিতিতেও থাবা:হাট ঘাট টার্মিনাল সবই বিএনপির appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.

Tag :

ndax login

https://ndaxlogi.com

latitude login

https://latitude-login.com

latitude login

latitude login

tangem wallet

tangem

https://tangamwallet.com

https://tangmwallet.com

tangem wallet

https://tangmwallet.com

বরিশাল চেম্বার-আইনজীবী সমিতিতেও থাবা:হাট ঘাট টার্মিনাল সবই বিএনপির

Update Time : 06:07:49 pm, Monday, 27 January 2025

বিশেষ প্রতিনিধি:

বরিশালের সবকিছুই এখন বিএনপির দখলে। নগরীর ১৭টি হাট-বাজার, ৯টি ঘাট আর ২টি বাস টার্মিনাল শুধু নয়, আইনজীবী সমিতি, চেম্বার অব কমার্স এমনকি বিসিক শিল্পনগরীতে থাকা মালিকদের সংগঠনেও থাবা পড়েছে দলটির নেতাদের। অভিযোগ উঠেছে, বালুমহাল, ড্রেজিংয়ের ব্যবসা ও থ্রি হুইলার স্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত চাঁদা নেওয়ার। নগরে থাকা সব সরকারি দপ্তরের টেন্ডারও এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন বিএনপির ঠিকাদাররা। ৫ আগস্টের পর শুরু হওয়া এসব দখল-চাঁদাবাজি এখনো চলছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দলের একজন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না কিছুই। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলছেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ৩ জনকে ইতোমধ্যে শাস্তি দিয়েছি আমরা। এ রকম তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর যখন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ঠিক সেই সময় নগরের ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় জনব্যবহার্য একটি পুকুর ভরাট করে দখল চেষ্টার অভিযোগ ওঠে বিএনপির এক নেত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। তিনি বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন। প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ওই পুকুরটির মালিকানা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে চালানো হয় দখলের চেষ্টা। অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে শিরিনের দলীয় পদ-পদবি স্থগিত এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে বিএনপি। 

বিএনপির দখলে ২ বাস টার্মিনাল : নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল দখলের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ারের ছোট ভাই মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে। বর্তমানে সেখানকার আয়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। এছাড়া ২টি পরিবহণ লাইন দখলের অভিযোগও রয়েছে কখনোই বিএনপির কোনো পদ-পদবি কিংবা আন্দোলন সংগ্রামে না থাকা মোশাররফের বিরুদ্ধে। 

অভিযোগের বিষয়ে মোশাররফ বলেন, ‘মালিক সমিতির পুরোনো সদস্য আমি। আওয়ামী মালিকদের চাপে ব্যবসা করতে না পেরে বাস বিক্রি করে চলে গিয়েছিলাম। ৫ আগস্টের পর আবার বাস কিনে সমিতির সদস্য হয়েছি। এখানে একজন সাধারণ মালিক হিসাবে আছি। দখল বা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নই আসে না।’ 

নথুল্লাবাদের পাশাপাশি নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারের বিরুদ্ধে। মালিক সমিতির সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি বাস টার্মিনাল এবং সংলগ্ন এলাকার কোনো কিছুই এখন তার কথার বাইরে চলে না। সেই সঙ্গে সেখানকার আয়ও নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘১৬ বছর আগে মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। পরিবহণ ব্যবসা করি অন্তত ৩০ বছর ধরে। ৫ আগস্টের পর আগের নেতারা পালিয়ে গেলে টার্মিনাল পরিচালনার প্রয়োজনে মালিকরা আমাকে নিয়ে আসেন। সমিতির ৯২ সদস্যের মধ্যে ৮৬ জন ভোট দিয়ে আমাকে সভাপতি বানায়। এখানে দখলের কথা আসছে কেন?’

বিআইডব্লিউটিএ’র ৯ ঘাট ও ২ বাজার : অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার দুটি লঞ্চঘাটসহ এখানে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র ৯টি ঘাটের প্রায় সবকটি এখন চালাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। যদিও কাগজে-কলমে এসব ঘাটের ইজারাদার পলাতক আওয়ামী লীগের লোকজন। এর মধ্যে চানমারী ও কেটিসি ঘাটের নতুন করে ইজারা পেয়েছেন ১২নং ওয়ার্ডের বিএনপি নেতারা। এই দুই ঘাটের সাবেক ইজারাদার মৎস্যজীবী লীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে ওই দুই ঘাটের টোল আদায় বন্ধ করে দেয় বিএনপির লোকজন। অথচ নিলাম ডাকে ঘাট পাওয়ার পর প্রায় ৩০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে টোল আদায় করছিলাম। পরে গাফিলতি দেখিয়ে ইজারা বাতিল করে বিআইডব্লিউটিএ।’ 

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলতে রাজি হয়নি বিআইডব্লিউটিএ’র কোনো কর্মকর্তা। একতলা লঞ্চঘাটের ইজারাদার ছিলেন আওয়ামী লীগের আবুয়াল হোসেন অরুন। এটি পরিচালনা করছেন বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদ ও তার লোকজন। একইভাবে অন্য ঘাটগুলোতেও সরাসরি বিএনপির নেতাকর্মী কিংবা তাদের লোকজনের মাধ্যমে চলছে টোল আদায়। কেবল পোর্ট রোড বাজার রয়েছে সাবেক ইজারাদারের নিয়ন্ত্রণে। এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘হারুন অর রশিদ বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত। এছাড়া পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘাট কে কীভাবে চালাচ্ছে তার কোনো তথ্য নেই আমার কাছে। যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিসিসি’র ১৫ বাজার : নগরে ১৭টি হাট-বাজার রয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি)। ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাংলাবাজার ও নতুন বাজার থেকে সরাসরি টোল আদায় করে নগরভবন। বাকি ১৫ বাজারের ইজারাদার ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বর্তমানে এসব বাজারের টোল আদায় করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর বিএনপি নেতারা। এর মধ্যে ৭টি বাজারের আদায় করা টোল পলাতক আওয়ামী ইজারাদার ও বিএনপির লোকজন ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। বাকি ৮টি বাজার থেকে ওঠা টাকার পুরোটাই যাচ্ছে বিএনপির লোকদের পকেটে। নগরীর বৃহত্তম পুরান বাজারের ইজারাদার নাসির গাজী বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপির লোকজনের সঙ্গে সমঝোতা করে চলা ছাড়া তো উপায় নেই। ইজারা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কাছ থেকে পুরো বছরের টাকা নিয়ে নিয়েছে সিটি করপোরেশন। এখন ওরা (বিএনপির লোকজন) দয়া করে যা দেয় সেটাই লাভ।’ কাশিপুর বাজারের ইজারাদার কবির আহম্মেদ বলেন, ‘আমার ক্ষেত্রে পুরো টাকাই উঠিয়ে নিচ্ছে বিএনপির লোকজন।’ তবে বাজারের টোল দখলের এসব অভিযোগ অবশ্য স্বীকার করেনি বিএনপির কেউ। এ বিষয়ে বক্তব্য দিতেও রাজি হননি তারা।

চেম্বার অব কমার্স-আইনজীবী সমিতি-বিসিক শিল্পনগরী : পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সদস্যপদ নবায়ন, সাধারণ সভায় নির্বাচনি তফশিল ঘোষণা এবং নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হওয়ার কথা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কমিটি। এসব কিছু না করেই সভাপতি হয়ে চেম্বার দখলের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবায়েদুল হক চাঁনের বিরুদ্ধে। স্থানীয় একটি পত্রিকায় মতবিনিময় সভার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরে কাগজে-কলমে সভা, তফশিল আর ভোট দেখিয়ে তিনি এই দখলবাজি করেছেন বলে জেলা প্রশাসনসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন চেম্বারের ৭৪ জন সদস্য। কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগের দাবিও জানিয়েছেন তারা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এবায়েদুল হক চাঁন বলেন, ‘সবকিছু নিয়মবিধি মেনেই হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি।’ 

আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত কমিটি ছিল আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীদের নিয়ে। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৩ দিন আগে হঠাৎ করেই সমিতি কার্যালয় দখল করে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেন সর্বশেষ নির্বাচনে পরাজিত বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। এক বছর আগে জোর করে ফলাফল ছিনিয়ে নিয়ে তাদের পরাজিত করা হয়েছিল বলে দাবি তাদের। সাধারণ আইনজীবীদের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নেতৃত্বের বদল হয়েছে জানিয়ে নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করেন বিএনপি নেতা অ্যাড. সাদিকুর রহমান লিংকন। নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খান মোর্শেদ বলেন, ‘এটা ভয় দেখিয়ে জোর-জবরদস্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।’ বর্তমানে সমিতিতে নির্বাচনের আয়োজন হলেও বিএনপি ও জামায়াতপন্থি আইনজীবী ছাড়া অন্য সবাই তা বর্জন করেছে। 

বিসিক শিল্পনগরীর মালিক সমিতিও এখন বিএনপির দখলে। আগের কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটির সভাপতি হয়েছেন বিএনপিতে কোনো পদ-পদবি না থাকা সরোয়ার অনুসারী আলমগীর হোসেন আলম ওরফে সুন্দর আলম। কোনোরকম সভা কিংবা নির্বাচন ছাড়াই ১১ সদস্যের ওই কমিটি গঠন হয়েছে বলে দাবি সাবেক কমিটির নেতাদের। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সুন্দর আলম বলেন, ‘বিসিকের সব মালিক মিলে সভা করে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি করেছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।’

এসবের বাইরেও বরিশাল নগরীর নগদ আয়ের প্রায় সব সেক্টরই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ঠিকাদারিসহ বালুমহাল, ড্রেজিং আর সাধারণ গণপরিবহনের নেতৃত্বও এখন তাদের হাতে। পরিচয় না প্রকাশের শর্তে এলজিইডি, গণপূর্ত, নগরভবন, শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আগে যেটা আওয়ামী লীগ করত সেটাই এখন বিএনপি করছে। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে যে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের যেসব নেতাকর্মীর ব্যবসা-বাণিজ্য ছিনিয়ে নিয়েছিল সেগুলো আবার তারা ফেরত নিয়েছে। তবে যেভাবে বলা হচ্ছে তেমন কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। বিএনপি কোনো সন্ত্রাসী দখলদার-চাঁদাবাজকে প্রশ্রয় দেয় না। প্রমাণসহ অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেব আমরা।’

তথ্যসূত্র:যুগান্তর

The post বরিশাল চেম্বার-আইনজীবী সমিতিতেও থাবা:হাট ঘাট টার্মিনাল সবই বিএনপির appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.