
ঝালকাঠি প্রতিনিধি:

ঝালকাঠি জেলায় ৪৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে ৯৫ ভাগ ধান কৃষকের গোলায় উঠেছে। ধান চাষাবাদে ট্রাক্টর, কাটিং মেশিনেরও প্রয়োগ আছে বেশ কিছু জায়গায় এবং মাড়াই পুরোটাই হচ্ছে মেশিনে।
এছাড়াও কীটনাশক স্প্রে করা ও ফসল ঝাড়াইসহ এখন সবই হচ্ছে যন্ত্রের সাহায্যে। বেড়েছে আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার। কৃষিকাজে এসব যান্ত্রিকীকরণের ফলে সাশ্রয় হচ্ছে অর্থ, শ্রম ও সময়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝালকাঠি জেলায় এখন কৃষিতে জমি তৈরি, বীজতলা প্রস্তুতি, কীটনাশক স্প্রে ও ফসল কাটা-মাড়াই-ঝাড়াইসহ এখন সবই হচ্ছে যন্ত্রে। বেড়েছে আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার। ফলে বদলে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম বাংলার কৃষির দৃশ্যপট। আদি কৃষি পরিণত হচ্ছে আধুনিক কৃষিতে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষাবাদ, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে জমিতে ধান রোপণ ও কর্তন করা যায়। এতে কৃষকের শ্রমিক, সময় ও অর্থের সাশ্রয় হয়। চারা রোপণে যন্ত্রটি ব্যবহার করলে রোপণ খরচ ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ পর্যন্ত কমানো সম্ভব বলে জানা যায়। আবার স্বল্প শ্রমিক দিয়েই হয়ে যাচ্ছে ধান কাটা ও মাড়াই। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে ঘণ্টায় চার বিঘা জমির ধান কাটা যাচ্ছে। বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে ফসল মাড়াই ও ঝাড়াই পর্যন্ত যান্ত্রিকভাবে অনেকটাই হচ্ছে।
কৃষক এছাক আলী (৪৮) জানান, জমি প্রস্তুত থেকে রোপণ পর্যন্ত আগে দীর্ঘ সময় লাগতো। আবার শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়েও বিপাকে পড়তে হত আমাদের। সময়ের ব্যবধানে গত কয়েক বছরে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ায় কৃষকদের সেই কষ্ট এখন লাঘব হতে চলেছে। এখন আর শ্রমিকদের অপেক্ষায় দিন গুণতে হয় না আমাদের। কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের ফলে স্বল্প সময়েই কয়েক বিঘা জমি চাষাবাদ করা যাচ্ছে।
কৃষক ছালাম হাওলাদার জানান, এক সময় গরু চড়ানোর জন্য জমি কয়েক বছর পতিত রাখা হতো। ১-২ বছরে এক ফসল হতো। এখন কৃষি বহুমুখীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ হচ্ছে। ফলে কৃষিতে ফসলের বৈচিত্র্য আসছে। উৎপাদন বাড়ছে। উন্নত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত করণের ব্যবস্থা হলে কৃষি আরও এগিয়ে যাবে। কীটনাশক ব্যবহারের জন্য ড্রোন ব্যবহার করতে পারলে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন।
রাজাপুর উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া গ্রামের ধান মাড়াই মেশিনের পরিচালক হানিফ হাওলাদার (৫০) জানান, তিন বিঘা জমির ধান মাড়াই করতে এক ঘণ্টা সময় লাগে। প্রতি ৩০ মণ ধানে এক মণ ধান মাড়াই খরচ হিসেবে নেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, আগে তিন বিঘা জমির ধান মাড়াই করতে গরু বা মহিষের পাল এক রাত শেষ হয়ে যেত। আমরা তা মেশিনের মাধ্যমে এক ঘণ্টায় সম্পন্ন করি।
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় ৪৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। কৃষকের ধান উৎপাদনে সফলতা এবং সঠিক বাজার দর পান সেজন্য কৃষি বিভাগ পরামর্শ দেওয়াসহ বাজার মনিটরিংয়ে জোরদার ভূমিকা রাখছে।
তিনি আরও জানান, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ফলে কৃষিতে বিপ্লব হচ্ছে। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সময় অপচয় রোধসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে ফসল রক্ষা পাচ্ছে। বীজ থেকে শুরু করে ঝাড়াই-মাড়াই হচ্ছে যান্ত্রিকভাবে। সরকার যান্ত্রিকীকরণের জন্য সমতল এলাকায় ৫০ শতাংশ ও হাওর উপকূলীয় এলাকার জন্য ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে।
The post ঝালকাঠিতে আদি কৃষি পরিণত হচ্ছে আধুনিক কৃষিতে appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.