
॥ সোনালী রিপোর্ট ॥
১৯৯৩ সালের কথা। রাজশাহীতে ভালো মানের কোন দৈনিক পত্রিকা তখন ছিল না। পিছিয়ে পড়া রাজশাহী থেকে সে সময় অফসেটে ছাপা একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সোনালী প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং’র তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ। রাজশাহীর প্রকাশনা জগতে সোনালী প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং-ই প্রথম অফসেট ছাপাখানা যার স্বপ্নদ্রষ্টাও অ্যাড. আব্দুস সামাদ, যিনি দৈনিক সোনালী সংবাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানও।
অবশেষে অ্যাড. আব্দুস সামাদ ও লিয়াকত আলীর উদ্যোগে জননেতা ফজলে হোসেন বাদশা, বিশিষ্ট শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রাজশাহী থেকে প্রথম অফসেটে ছাপা দৈনিক পত্রিকা হিসেবে সোনালী সংবাদের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পাঠকের হাতে পৌঁছে সোনালী সংবাদ। অফসেটে ছাপা রাজশাহীর প্রথম দৈনিক পত্রিকা। ঝকঝকে ছাপায় সোনালী সংবাদ প্রথম দিনেই ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মো. লিয়াকত আলী দায়িত্বশীলতার সাথে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া সোনালী সংবাদের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে জননেতা ফজলে হোসেন বাদশা এবং পত্রিকার চেয়ারম্যান হিসেবে বিশিষ্ট শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী সরকার পত্রিকার সুষ্ঠু পরিচালনায় গুরুদায়িত্ব পালন করেন। সোনালী সংবাদের এই সুদীর্ঘ পথচলা কোন সময়ই ছিল না মসৃণ।
শুরুতে সোনালী প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং-এর কার্যালয় থেকেই পত্রিকার যাবতীয় কাজ শুরু করা হয়। তখন সেখানে নিয়মিত অফিস করতেন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক প্রয়াত ওয়াজেদ মাহমুদ, তৎকালীন বার্তা সম্পাদক ও পরবর্তীতে নির্বাহী সম্পাদক প্রয়াত মোলাজ্জেম হোসেন সাচ্চু, সিটি এডিটর প্রয়াত বুলবুল চৌধুরী, তৎকালীন স্টাফ রিপোর্টার ও পরবর্তীতে চিফ রিপোর্টার প্রয়াত তবিবুর রহমান মাসুম, তৎকালীন সম্পাদনা সহকারী ও বর্তমানে স্টাফ রিপোর্টার তৈয়বুর রহমানসহ আরও কয়েকজন।
তখন পত্রিকার ঢাকা ব্যুরো’র দায়িত্ব দেয়া হয় সাংবাদিক গোলাম রহমান দুলুকে। একদম শুরুতে বা বলা যেতে পারে পত্রিকা মার্কেটে আসার আগে পত্রিকা প্রকাশে ভালো ভূমিকা রেখেছিলেন আহসানুর রহমান ও আকবারুল হাসান মিল্লাত (বর্তমানে সোনার দেশের সম্পাদক)।
১৯৯৪ সালের পয়লা মে সোনালী সংবাদের কার্যালয় নগরীর জামাল সুপার মার্কেটে স্থানান্তর করা হয়। মার্কেটের দোতলার একটি কক্ষ ভাড়া করে কার্যালয় করা হয়। সেখানে যোগ দেন পত্রিকার বিভিন্ন বিভাগের আরও কয়েকজন সহকর্মী। এদের মধ্যে তৎকালীন স্টাফ রিপোর্টার এ কে এম শহিদুল ইসলাম, উত্তম কুমার দাস, শওকত রেজা, তৎকালীন সাব এডিটর ও বর্তমানে বার্তা সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম বাবু, ফটো সাংবাদিক সালাহউদ্দিন, স্টাফ রিপোর্টার মেহেবুব আলম বর্ণ ও মাহবুব তুষার-এর নাম উল্লেখযোগ্য। মূলত প্রবীণ-নবীন এক ঝাঁক সংবাদকর্মীকে নিয়ে শুরু হয় সোনালী সংবাদের পথচলা।
এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি সোনালী সংবাদকে। বৃদ্ধি পায় অফিসের পরিসর ও কর্মীর সংখ্যা। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই যোগ দেন তৎকালীন সাব এডিটর, পরে বার্তা সম্পাদক আবদুল করিম (বর্তমানে অবসরে), ফটো সাংবাদিক শাহাদত হোসেন বাদশা (বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী), আরও পরে যোগ দেন প্রয়াত বার্তা সম্পাদক আনোয়ারুল আলম ফটিক, ফটো সাংবাদিক আব্দুল জাবিদ অপু (বর্তমানে চিফ ফটো সাংবাদিক), ফটো সাংবাদিক কবির তুহিনসহ (বর্তমানে অবসরে) অনেকেই। সাধারণ বিভাগের মধ্যে শুরু থেকে আব্দুর রহমান এখন অবসরে।
অবসরে গেছেন একাউন্ট শাখার মাজিরুল ইসলাম। সাধারণ শাখায় দায়িত্ব পালন করছেন প্রধান নির্বাহী একরামুল হক মাসুদ, বিজ্ঞাপন ম্যানেজার রেজাউল করিম রেজা। বর্তমানে যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক হিসেবে মাইনুল হাসান জনি, চিফ রিপোর্টার নাজমুল ইসলাম, মফস্বল সম্পাদক ও ডিজিটাল বিভাগের ইনচার্জ জগদীশ রবিদাস, স্টাফ রিপোর্টার তৈয়বুর রহমান, প্রধান সম্পাদনা সহকারী জহিরুল ইসলাম, কম্পিউটারে শেখ সালাউদ্দিন তুফান, ইসমাইল হোসেন রঞ্জন এবং সদ্য যোগদান করেছেন জাহিদুল ইসলাম রুসেল, পেস্টিং এ মাসুম আলী ও রজব আলী, হিসাব কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন, বিজ্ঞাপন সহকারী মারুফ আলম, ফটো রিপোর্টার শাহরিয়ার শেখ সুমন, মেশিন ইনচার্জ আবুল খয়ের মুন্সি, অফিস সহকারী জসিম উদ্দিন। এছাড়ও সকল বিভাগেই কর্মরত আরও অনেকেই পত্রিকাকে এগিয়ে নিতে অবদান রেখে চলেছেন।
পত্রিকা বিপণনের সুবিধার্থে পরবর্তীতে সোনালী সংবাদের কার্যালয় জামাল সুপার মার্কেট থেকে নগর ভবনের সামনের একটি ভাড়া বাড়িতে চলে যায়। পরে কুমারপাড়ায় সোনালী সংবাদের কার্যালয় স্থানান্তর করা হয়। ২০১৮ সালের ঈদুল আজহার কয়েক দিন আগে পত্রিকার অফিস কুমারপাড়া থেকে রাণীবাজারে স্থানান্তরিত হয়। সেখান থেকে ২৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে বোয়ালিয়া থানার মোড়ে স্থানান্তর করা হয়।
এখানেই এখন পত্রিকার বর্তমান ঠিকানা। আজ পত্রিকার ৩১ বর্ষপূর্তি ও একই সাথে ৩২ বছরে পদার্পণ। দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় পত্রিকাটির চলার পথ কখনোই মসৃণ ছিল না। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এ পর্যায়ে আসতে হয়েছে সোনালী সংবাদকে। পত্রিকা মিডিয়া লিস্ট হওয়ার পরেও অনেক দিন নিউজ প্রিন্টের সরকারি কোটা দেয়া হয়নি সোনালী সংবাদকে।
এ নিয়ে অনেক দেন দরবার ও তদবির করা হয়। খবর প্রকাশ করা হয়। এমনকি প্রতীকী প্রতিবাদ স্বরূপ অনেক দিন সোনালী সংবাদের প্রথম পৃষ্ঠার একটি কলামের অংশ বিশেষ ‘কালো’ রাখা হত। এছাড়াও দীর্ঘদিন সরকারি বিজ্ঞাপন থেকে বঞ্চিত রাখা হয় সোনালী সংবাদকে। এতেও দমিয়ে রাখা যায়নি সোনালী সংবাদকে।
সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতার কারণে পত্রিকাটি রাজশাহী অঞ্চলের শীর্ষ পত্রিকা ও গণমানুষের মুখপত্রে পরিণত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে প্রগতিশীল ধারায় পত্রিকাটি এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে।
রাজশাহীর মত পিছিয়ে পড়া অঞ্চল থেকে একটি দৈনিক পত্রিকা অত্যন্ত সুনামের সাথে দীর্ঘ সময় টিকে থাকা এবং প্রচার সংখ্যা ও গুণগত মানের দিক থেকে শীর্ষে থাকা কম কথা নয়। এর পিছনে রয়েছে পত্রিকাটির সংবাদ পরিবেশনে সংশ্লিষ্টদের সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতা। এর কারণে পত্রিকাটি রাজশাহী অঞ্চলের গণ মানুষের মুখপত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় সোনালী সংবাদ পেয়েছে পাঠককুল। পেয়েছে অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা। এটি সোনালী সংবাদের জন্যে বিরাট প্রাপ্তি। এত কিছুর পরেও আমরা আমাদের মাঝ থেকে হারিয়েছি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদকে, হারিয়েছি প্রতিষ্ঠাতা প্রধান সম্পাদক ওয়াজেদ মাহমুদকে, নির্বাহী সম্পাদক মোলাজ্জেম হোসেন সাচ্চুকে, হারিয়েছি বার্তা সম্পাদক আনোয়ারুল আলম ফটিককে, অকালে হারিয়েছি চিফ রিপোর্টার মাহাতাব চৌধুরীকে, চিফ রিপোর্টার তবিবুর রহমান মাসুমকে, হারিয়েছি সিনিয়র সাব এডিটর আফতাব আহম্মেদকে, নুরুজ্জামান খান চৌধুরী বাবু, পত্রিকার ভোলাহাট প্রতিনিধি ও ইতিহাস অনুসন্ধানী লেখক সালাউদ্দিনকে, হারিয়েছি ধামইরহাট প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান বদুলকে, হারিয়েছি জীবননগর প্রতিনিধি ওলিউল ইসলামকে, হারিয়েছি বদলগাছী প্রতিনিধি মাহবুব আলমগীর, বিট পিয়ন চঞ্চল, অফিস পিওন টেকন ও নবিরকে। আজকের এই দিনে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি সোনালী সংবাদের নিয়মিত লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালেয়র বাংলা বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক ড. অমৃতলাল বালা ও ড. সুজিত সরকারকে।
পত্রিকার এ পর্যায়ে আসতে তাদের অবদান ভুলবার নয়। পত্রিকার ৩১ বছর পূর্তি ও ৩২ বছরে পদার্পণে তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং প্রার্থনা করছি তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি। সেই সাথে সোনালী সংবাদকে বর্তমান অবস্থায় এগিয়ে নিতে পত্রিকার সাথে সম্পৃকত এবং বর্তমানে অন্যত্রে অবস্থানকারী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
সোনালী/জগদীশ রবিদাস
The post ৩২ বছরে সোনালী সংবাদের সেকাল-একাল appeared first on সোনালী সংবাদ.