
বিশেষ প্রতিনিধি:

যানজট কিছুতেই পিছু ছাড়ছেনা নগরবাসীর। যানজটে একটা জটিল পরিস্থিতি মহাসড়ক থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও। ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা লোকবল সংকট ও সিটি প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কথা বলে দায় সারছেন।
নগরীর রুপাতলী, চৌমাথা, বটতলা মসজিদ, সাগরদি ও নথুল্লাবাদ ছাড়াও শহরের ভিতরে যানজটে অস্থির নগরবাসী। নতুন বাজার থেকে নথুল্লাবাদের যানজট এখন স্থায়ী ও গাঁ সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু রমজান মাস এলেই এই যানজট আরো দীর্ঘস্থায়ী হয় চকবাজার ও পোর্ট রোড বাজার এলাকায়।
সচেতন মহলের দাবী, পোর্ট রোড ও চকবাজার পুরোটাই এখন ব্যবসায়ীদের দখলে। বড় বড় ব্যবসায়ীদের থেমে থাকা ট্রাকগুলো রাতের মধ্যে মালামাল ওঠানামা করালেই হয়। খোদ গীর্জামহল্লা, লেচুশাহ মাজারের বিপরীত দিকে ঘরোয়া রেস্তোরা ভ্রাম্যমান ইফতার বিক্রি হচ্ছে রাস্তার উপরে। ইফতারির পূর্ব মুহুর্তে লেচুশাহ মাজার সংলগ্ন রাস্তায় ব্যাপক যানজট হয়। সিটি কর্পোরেশনের রোড ইন্সপেক্টরকে ম্যানেজ করে গীর্জামহল্লায় ঘরোয়া, আলজাজিরা সহ বেশ কয়েকটি হোটেল রাস্তার উপরে বিকেলের দিকে ইফতার পসরা সাজিয়ে যানজটের সৃষ্টি করে।
গতকাল ১৮ মার্চ চকবাজার এলাকায় দেখা গেল বিশাল যানজট। যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেল, আধা ঘন্টার উপর হয়েছে তারা আটকে আছেন। ওপাশে দুটো বড় ৫ টনি ট্রাক ডুকছে ফলপট্টি হয়ে পোর্ট রোডে। পোর্ট রোডে এসে দেখা গেল পুরো সড়কে ১০/১২টি ট্রাক তরমুজ পরিবহনের জন্য মালামাল ওঠানোর কাজে ব্যস্ত। বাজারের ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দিয়ে চলছে তাদের আগ্রাসন।
এ নিয়ে আর কোনো কথা বলতে রাজী নয় পোর্ট রোড বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। তবে বেশ কয়েকজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী বললেন, বেলা দুটোর পর থেকে তারা ট্রাক সাজাতে পারতেন। ইচ্ছে করে আমাদের ক্ষতি করে ট্রাক দিয়ে জায়গা দখল করে রেখেছে। আর একটি নতুন ট্রাক আসলে তবেই এই ট্রাক জায়গা ছেড়ে যায় বলে জানান তারা। ইজারাদার খান হাবিব এর ভাই এবং বিএনপি নেতারা এখন এগুলো দেখাশোনা করে বলে জানান তারা।
এদিকে প্রতিদিন সন্ধ্যার পরপরই এই চাপ দ্বিগুণ আকার ধারণ করে বলে জানান কাকলী মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবল শাহিন। তিনি বলেন, এই সদর রোডে সবগুলো মার্কেট ও বিল্ডিংই এই যানজটের জন্য দায়ী। কারণ কারোই কোনো গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা নেই।
বরিশালের সামাজিক আন্দোলনের নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, এই নগরীর কোথাও কোনো পরিকল্পনা নেই। যাচ্ছে তাই অবস্থা। ব্যস্ততম সড়ক আটকে মিছিল মিটিং চলে, সড়কের পাশে ভবন নির্মাণ হয় কিন্তু কারো পার্কিং থাকেনা। সবমিলিয়ে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনি দ্রুত এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি রফিকুল আলম ও শাহ সাজেদা বলেন, গত তিনমাসে নগরীতে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অটোরিকশা ও ইজিবাইক। বেশিরভাগ রিকশা ও ইজিবাইকগুলো যাত্রিহীন ছুটে বেড়াচ্ছে। কোনটায় দু/একজন যাত্রী। প্রয়োজনের তিনগুণ যানবাহনের চাপ এখানে। তারউপর রমজানের শেষে ঈদের কেনাকাটার ভিড়। চকবাজার, নতুন বাজার ও পোর্ট রোড তো এখনই অনওয়ে হওয়া জরুরী।
বরিশালের ট্রাফিক বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শরফুদ্দিন বলেন, আমরা বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার যানজট নিরসনের জন্য বিসিসির কাছে লিখিত কিছু প্রস্তাবনা আগেই দিয়েছি। নগরীতে কতগুলো যানবাহন চলবে, ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলবে কিনা এসব বিষয় ঠিক করতে হবে সিটি প্রশাসনকে। বিসিসি কিছু না করলে আমরা নিরুপায়। আর চকবাজার ও পোর্ট রোড এলাকা দু-একদিনের মধ্যেই অনওয়ে করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমি নিজে আজ সারাদিন ঐ এলাকায় যানজট সামলাতে হিমশিম খেয়েছি।
৫৮ বর্গকিলোমিটারের বরিশাল নগরীতে মাত্র পাঁচ হাজার যানবাহন চলাচলের সক্ষমতা থাকলেও বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে চলছে অন্তত ৫০ হাজার যানবাহন। এরমধ্যে সাত হাজারের মতো সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বৈধতা থাকলেও অবৈধভাবে চলছে এরচেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি থ্রী-হুইলার। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে অবৈধ যানবাহন তৈরির গ্যারেজ। আর এসব গাড়ি সড়কে নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়সহ যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণে তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।
নগরবাসীর দাবি, যানজট থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পেতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপের পাশাপাশি অবৈধ গাড়ি তৈরির কারখানা বন্ধ করতে হবে।
The post যানজটে নাকাল নগরবাসী ! appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.