ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : কোম্পানির দেওয়া আইস্ক্রিমের ভ্যান নিয়ে দুই পায়ে প্যাডেল মেরে পৌরশহরের বিভিন্ন বাজার,মাঠ ও রাস্তায় ঘুরে বিক্রি করে বেড়ান আইস্ক্রিম। আজকে সাড়ে ৬ ঘন্টায় তীব্র রোদে পুড়ে ৫০ টি আইস্ক্রিম বিক্রি করেছেন পর্শদি রায়(৮৫)। এতে তার আয় হয়েছে ১ শত ৫০ টাকা। যা দিয়ে তাকে চালাতে হবে তার সংসার।কোনভাবেই যা সম্ভব না,এই চিন্তায় থুতনিতে হাত রেখে চেয়ে আছেন মাঠের দিকে। এরকম চিন্তীত অবস্থায় তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বিরামপুর পৌর- শহরের ঐতিহ্যবাহী আনসার মাঠে রাস্তার পাশে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিরামপুর পৌরশহরের ৪ নং ওয়ার্ডের ইসলামপাড়ার ঐতিহ্যবাহী আনসার মাঠ প্রাঙ্গনে আইসক্রিম বিক্রির উদ্দেশ্যে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন পর্শদি রায়।এসময় তাঁকে আইসক্রিমের ভ্যান নিয়ে কখন বেড় হয়েছেন জিজ্ঞেস করলে সে জানায়,আজ সকাল ১১ টায় তিনি এ ভ্যান নিয়ে বেরিয়েছিলেন। বিকেল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ৫০ টি আইস্ক্রিম।মোট ৩ শত ৫০ টাকার আইস্ক্রিম এর মধ্যে ৫ টাকা মূল্যের ৩০ টি ও ১০ টাকা মূল্যের ২০ টি আইস্ক্রিম বিক্রি করেন তিনি।এই ৩৫০ টাকার আইস্ক্রিম বিক্রি করে তার আয় হয়েছে ১৫০ টাকা।তিনি জানান,এই পেশায় তার কোন মূলধনের প্রয়োজন হয়না। আইস্ক্রিম কারখানা থেকে সবকিছু দেওয়া হয়। শুধু সকালে এসে আইস্ক্রিম নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন। আজকে ২৪০ পিস আইস্ক্রিম নিয়ে বেড়িয়ে ছিলেন।তিনি জানান শীত, গরম, রোদ, বৃষ্টি যাই হোক না কেন আইসক্রিম বিক্রি করতে যেতেই হবে তাকে। তানা হলে সংসার চলবে কি করে? তাঁর এইসব আইসক্রিম দুধ, চিনি, এলাচি, বাদাম, কিসমিচ আর গরম মসলার মিশ্রণে তৈরি হয়। স্বাদের সঙ্গে সুঘ্রাণেরও যে নিবিড় একটা সম্পর্ক আছে, সেটা তুলোর মতো নরম। আইসক্রিমে কামড় দিয়ে স্বাধ নিতে পারেন যে কেউ । তাই শীত, গরম মৌসুমে আইসক্রিম বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু শীত কালে বেচাকেনা একটু কম হয়।
পর্শাদি রায় বিরামপুর পৌরশহরের ৩নং ওয়ার্ডের কাজি পাড়ার বাসিন্দা। কষ্ট করে ৩ মেয়ের বিয়েশাদী দিয়ে নিজ স্ত্রীকে নিয়ে কোনমত একটি ঘরে তাঁর বসবাস। তিনি এর আগে খাদ্য গোডাউন ও নতুন বাজারের কাঁচাবাজারে বস্তার কাজ (লেবারীর) করতেন। বয়সের ভারে এখন আর ভারি কাজ করতে পারেননা ।
গত ৪ থেকে ৫ বছর ধরে প্যাডেল চালিত শিমু সুপার আইস্ক্রিম বিক্রি করে সংসারের বোঝা বয়ে যাচ্ছেন তিনি। সরকারের পক্ষ থেকে বয়স্ক ভাতা পান কিন্তু তাতে কি আর দিন চলে। তিনি বলেন অন্যান্য সময় বেচাকেনা করে ৬০০-৭০০ টাকা আয় হয় তার। কিন্তু বর্তমানে স্কুল কলেজ সব বন্ধ তাতেও আবার রমজান মাস।এসময়টা দিন পার করা তার জন্য অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সমাজে পর্শাদি রায়ের মতো অনেক পরিবার রয়েছে। তাঁহারা দিন আনে দিন খায়, এসমস্ত পরিবারের পাশে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।