
দ্বিতীয়বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য ঋতুপর্ণা চাকমা তার বাড়ি নির্মাণ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও এখনো তার বাড়ি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়নি, বরং কিছু মহলের বাধার মুখে পড়েছেন।
২০২২ সালে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ঋতুপর্ণা ও তার সতীর্থরা সংবর্ধিত হন। সে সময় রূপনা চাকমাকে ঘর নির্মাণ করে দিলেও ঋতুপর্ণার অনুরোধ ছিল তার গ্রামের মানুষের সুবিধার্থে রাস্তা নির্মাণের। তখন জেলা প্রশাসন তাকে ঘরসহ রাস্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি।
২০২৪ সালে আবারও সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নতুন করে তাকে বাড়ি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। প্রশাসনের উদ্যোগে রাস্তার জন্য বরাদ্দ নিশ্চিত হয়েছে, গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে, এমনকি ঘর নির্মাণের অর্থ বরাদ্দও এসেছে। কিন্তু এখন তিনি শুনছেন, কিছু মহল তার বাড়ি নির্মাণে বাধা দিচ্ছে।
শনিবার (২২ মার্চ) ঋতুপর্ণা তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘২০২২ সালে প্রথমবারের মতো যখন সাফ চ্যাম্পিয়ন হই। তখন পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ সদস্য ছিলাম। আমি আর রুপনা চাকমা রাঙামাটি জেলার আর বাকি তিনজন খাগড়াছড়ি। রাঙামাটি জেলা আমাদের পাঁচজনকে রাজকীয়ভাবে সংবর্ধনা এবং সম্মানিত করেন। সেসময় স্বয়ং জেলা প্রশাসক আমার নিজ গ্রামের বাড়িতে এসেছেন আমার ঘরবাড়ি ও যাতায়াতের অবস্থান দেখে যান। সেবারে রুপনা চাকমাকে বাড়ি নিমার্ণ করে দেন জেলা প্রশাসন। যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সবই বাস্তবায়ন করে দেন।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো আমার কি চাওয়া পাওয়া আছে প্রশাসন থেকে, তখন আমি চেয়েছিলাম আমার এলাকাবাসী সুবিধার্থে যাতায়াতের জন্য রাস্তা। কারণ আমার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা নেই। আমি আমার নিজের জন্য কিচ্ছু চাইনি। রাঙামাটি জেলা প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিলেন রাস্তা সংস্কার করে দিবেন এবং সেই সঙ্গে আমাকে জায়গাসহ বাড়ি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। স্বয়ং আমাকে ডেকে নিয়ে ঘাগড়া বাজারে খাস জায়গা নির্ধারণ করে দেন এবং জায়গাটা আমারও পছন্দ হয়, সবকিছু ঠিকটাক হয়। যাইহোক রুপনার সবকিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, আমার মনেও বিশ্বাস আশা ছিল প্রশাসনের কাছ থেকে আমারও সবকিছু বাস্তবায়ন হবে। ’
এরপর আক্ষেপের সুরে তিনি আরও লেখেন, ‘দুঃখের বিষয় আমার কোনকিছু বাস্তবায়ন হয়নি। যাই হোক ঐ বিষয় নিয়ে আমি আর মাথা ঘামাইনি, অনুশোচনাও হয়নি । ২০২২ সাল গেলো সবকিছু ভুলে গেলাম আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে মনোযোগী হই।’
ঋতুপর্ণা আরও লেখেন, ‘২০২৪ সালে দ্বিতীয়বারে মতো বাংলাদেশ সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছি। দ্বিতীয়বারের মতো দেশবাসী সবাই মিলে আনন্দ, উল্লাস ভাগাভাগি করে উদযাপন করি। একইভাবে ২০২২ সালে যেভাবে আমাদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন, ঠিক দ্বিগুণ সেভাবেই আমাদের রাজকীয়ভাবে সংবর্ধনা এবং সম্মানিত প্রদান করেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। ২০২২ সালে যে আমাকে মিথ্যা আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এই নতুন বাংলাদেশ, এই নতুন প্রশাসনের কাছ থেকে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল বিগত ২০২২ সালের জায়গাসহ বাড়ির করে দেয়া এবং যাতায়াতের জন্য রাস্তা সংস্কার করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেটা বাস্তবায়ন হবে।’
গভীর নলকূপ স্থাপনের কথা জানিয়ে ঋতুপর্ণা আরও লেখেন, ‘দেরিতে হলেও কিছুদিন আগে আমাকে ইউএনও স্যার কাজী আতিকুর রহমান স্যার খুশির সংবাদটি জানিয়ে দেন, আমার এলাকার গ্রামবাসীর জন্য রাস্তা নির্মাণ বাবদ রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ হতে ইতোমধ্যে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। একমাস আগে জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ সদস্য রাস্তাটি পরিদর্শনও করেছেন। ইউএনও স্যার নিজ উদ্যোগে আমার বাড়িতে সুপেয় পানির জন্য নিজেই গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিয়েছেন।’
তিনি আরও লিখেন, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে একটা ঘর নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। প্রশাসন রাস্তা এবং জায়গাসহ বাড়ির করে দেয়ার অনুমোদন সম্মতি দিয়েছেন। আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রশাসনের প্রতি, সেই সঙ্গে খুবই এক্সাইটেড ছিলাম সংবাদটা শুনে। এতোদিন পর প্রশাসন আমাকে বাড়ি করে দেয়ার সদয় সম্মতি দিয়েছেন, কিন্তু এর মধ্যে আমি শুনতে পাচ্ছি কোনো এক মহল থেকে বাধা আসতে শুরু করেছে তাহলে কি আমার ঘাগড়ায় কি কোন ঠাঁই নেই?
সবশেষ নিজের অনুশোচনার কথা উল্লেখ করে ঋতুপর্ণা জানতে চান, ২০১৭ সাল থেকে আমি দেশের জন্য খেলছি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, নিজে জেলার মানুষের কাছে মূল্যায়নটা পেলাম কই?
The post বাড়ি নির্মাণে বাধা, সোশ্যালে সাফজয়ী ঋতুপর্ণার আক্ষেপ appeared first on Bangladesher Khela.