
স্টাফ রিপোর্টার ও বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার ধুনটে দুই ফ্রিল্যান্সারকে ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এসআইসহ পাঁচ সদস্য ও এক সিভিল চালককে গ্রেপ্তার করেছে কুন্দারহাট হাইওয়ে থানা পুলিশ। সোমবার বিকালে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রাব্বির বাবা সেলিম শেখ পুলিশসহ ৭জনের বিরুদ্ধে মামলা করছেন।
এদিকে এ ঘটনায় আরএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পাঁচ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান এ সিদ্ধান্ত নেন।
বরখাস্ত হওয়া পাঁচ পুলিশ সদস্য হলেন- আরএমিপর ডিবি শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহীন মোহাম্মদ অনু ইসলাম (বিপি-৮৫০৮১২৩৪১২), কনস্টেবল রিপন মিয়া (বিপি-৯৫১৫১৭৮৭৮৭), কনস্টেবল আবুল কালাম আজাদ (বিপি-৯৬১৫১৭৪৯০১), কনস্টেবল মাহবুর আলম (বিপি-৯৩১১১৪২০০৩) এবং কনস্টেবল বাশির আলী (বিপি-৯৩১২১৪৯০২২)। এদের সাথে থাকা গাড়ির ড্রাইভার মেহেদী হাসানকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা জানান, বগুড়ার ধুনট উপজেলার দীঘলকান্দি গ্রামের সেলিম শেখের ছেলে রাব্বি শেখ (১৯) ও একই গ্রামের মৃত শেরবান খাঁর ছেলে জাহাঙ্গির খাঁ (২৪) ফ্রিল্যান্সার। রাজশাহী ডিবি পুলিশের এসআই শাহীন মোহাম্মদ অনু ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ কনস্টেবল গত রোববার রাত ১১টার দিকে মাইক্রোবাসে দীঘলকান্দি গ্রামে আসেন। ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাব্বি ও জাহাঙ্গীরকে আটক করে মাইক্রোবাসে অন্যত্র নিয়ে যান।
এরপর সমঝোতার মাধ্যমে তাদের কাছে দুই লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে রাব্বি ও জাহাঙ্গীরের পরিবার বিষয়টি ধুনট থানা ও কুন্দারহাট হাইওয়ে থানা পুলিশকে অবহিত করেন।
কুন্দারহাট হাইওয়ে থানার ওসি মনোয়ারুজ্জামান জানান, পুলিশ পরিচয়ে দুই ফ্রিল্যান্সারকে অপহরণের পর টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি তাকে জানানো হয়। এরপর সোমবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে ধাওয়া করে একটি মাইক্রোবাস থামানো হয় এবং এতে থাকা ডিবি সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের কাছে ২ লাখ টাকা, ১টি ওয়াকি-টকি, ১টি হ্যান্ডকাফ ও ৭টি মোবাইল জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানিয়েছে, আরএমপি ডিবিতে কর্মরত কনস্টেবল ওহাব এ টিমকে জানায় বগুড়ার ধুনট উপজেলার দীঘলকান্দি গ্রামে রাব্বি ও জাহাঙ্গীর ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত। তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত না করে অনৈতিক সুবিধালাভের উদ্দেশে টাকা আদায় করেন। ওসি জানান, ঘটনাস্থল বগুড়ার ধুনটে হওয়ায় পরে তাদের ওই থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
বিকেলে ধুনট ওসি সাইদুল আলম জানান, ভুক্তভোগী রাব্বির বাবা সেলিম শেখ পলাতক কনস্টেবল ওহাবসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলা করছেন। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে বগুড়া কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইব্রাহিম খলিল বলেন, ওই ৫ পুলিশ সদস্য রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত। গতরাতে আমি রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিসে ছিলাম, কিন্তু তারা আমাকে কিছু না জানিয়েই বগুড়া গেছে। কেন গিয়েছে, তা তারাই ভালো বলতে পারবে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) জেদান আল মুসা জানান, অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্য গত রোববার ধুনোট উপজেলায় গিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগে দীঘরকান্দি গ্রামের রাব্বী ও জাহাঙ্গীর নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করেন। এরপর শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর এলাকায় গাড়ি থামিয়ে তাদের কাছে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
দর-কষাকষির পর নগদ ২ লাখ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আরও ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা আদায় করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে বগুড়া জেলা পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে শেরপুর ও শাজাহানপুর থানার সহযোগিতায় মাইক্রোবাসটি আটক করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে হাইওয়ে পুলিশের সহায়তায় শাজাহানপুর থানার বীরগ্রাম এলাকায় গাড়িটি আটক করা হয়।
The post ফ্রিল্যান্সারকে তুলে নিয়ে চাঁদা আদায় গ্রেপ্তারের পর বহিষ্কার হলেন মহানগর ডিবির পাঁচজন appeared first on সোনালী সংবাদ.