
নিজস্ব প্রতিনিধি:

এবারের আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বরিশাল রুটে লঞ্চযাত্রী সংখ্যা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ছুটি শুরুর আগেই লঞ্চগুলোর কেবিনের প্রায় ৯৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ফিরতি টিকিটেরও চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। ধারণা করা হচ্ছে, ডেকেও যাত্রীসংখ্যা স্বাভাবিকের থেকে কয়েকগুণ বেশি হবে, ফলে এবারে নৌ-রুটে ঈদযাত্রা অনেকটাই যাত্রীমুখো হবে।
যে কারণে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেকের যাত্রীর সংখ্যা বলে দেবে এবারের ঈদযাত্রায় লঞ্চমালিক পক্ষের কত লাভ হচ্ছে।
পদ্মা সেতু চালুর পর প্রায় তিন বছরে বরিশাল-ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ নৌরুটে যাত্রী সংখ্যা কমেছে। যার প্রভাবে লঞ্চ ব্যবসা অনেকটাই ধসের মুখে পড়ে। বাধ্য হয়ে রোটেশন প্রথায় প্রতিদিন চারটি লঞ্চ যাত্রী পরিবহনের কাজ শুরু করে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে। তারপরও যাত্রী সংকটে ভুগতে থাকে বিলাসবহুল লঞ্চগুলো।
যদিও এবার দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।
বরিশাল নদী বন্দর ঘুরে জানা গেছে, রমজান মাসজুড়েই লঞ্চগুলো ধুয়ে-মুছে সাজসজ্জার কাজ সম্পন্ন করে ঈদযাত্রার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিদিন দুই প্রান্ত থেকে মোট চারটি লঞ্চ চলাচল করলেও ২৭ মার্চ থেকে এর সংখ্যা ১২-১৩ টিতে গিয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ স্পেশাল সার্ভিসে লঞ্চের সংখ্যা স্বাভাবিক দিনের থেকে তিনগুণ হচ্ছে। এছাড়া স্পেশাল সার্ভিসের মধ্য দিয়ে এই রুটে যুক্ত হচ্ছে এক হাজার যাত্রী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নতুন লঞ্চ এমভি এমখান-৭।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, স্পেশাল সার্ভিসসহ বরিশাল-ঢাকা রুটে এবার মোট ১৯টি বিলাসবহুল লঞ্চ যাত্রী সেবায় নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া ভায়া রুটের আরো ২/৩টি লঞ্চ যাত্রী পরিবহণ করবে।
সুন্দরবন লঞ্চের স্টাফ জাকির হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর সারা বছরই যাত্রী সংকট থাকে। ঈদে ও কুরবানিতে কিছু যাত্রী হয়। যদিও ২৫ ও ২৬ মার্টের ট্রিপে আশানুরূপ যাত্রী হয়নি দেখা যায়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে ঈদের ছুটি শুরু হলে ভিড় বাড়বে।
অন্য লঞ্চের স্টাফ মনির হোসেন বলেন, বেশিরভাগ লঞ্চেই নতুন করে রং করা হয়েছে এবং কেবিনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের সবচেয়ে ভালো সেবা দিতে সকল লঞ্চ কোম্পানিই আগাম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
এদিকে এ রুটের নিয়মিত যাত্রীরা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে লঞ্চে যাতায়াত খুবই আরামদায়ক। ঈদের সময়ে সড়কে দেখা যায় বাসের বেপরোয়া প্রতিযোগিতা, অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছুটে চলায় দুর্ঘটনা প্রবণ হয়ে ওঠে। তাই ঈদের যাত্রাটায় ঝুঁকি এড়াতে লঞ্চে টিকিট নিয়েছেন তারা।
সড়কের চেয়ে লঞ্চ নিরাপদ দেখে পরিবারসহ লঞ্চেই যাতায়াত করবেন বলে জানিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, পরিবারসহ লঞ্চে বরিশাল এসেছেন ২৬ মার্চ আর এখন ফিরতি টিকিটের জন্য কাউন্টারে এসেছেন। তবে টিকিটের মূল্য কোনো অংশে কমানো হয়নি বলে জানান তিনি।
লঞ্চ কাউন্টারগুলোর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৯টি লঞ্চে বিভিন্ন মানের প্রায় পাঁচ হাজার কেবিন রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি লঞ্চেই ডেকে হাজারের অধিক যাত্রী বহন করতে পারে।
এমভি আওলাদ-১০ লঞ্চের ব্যবস্থাপক অভিজিৎ সরকার বলেন, যাত্রীদের সুবিধার্থে ১২ মার্চ থেকেই আমরা অগ্রিম টিকিট ছেড়েছি। ইতোমধ্যে কেবিনের প্রায় সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। এখন ডেকের যাত্রীর ওপর নির্ভর করতে হবে ঈদযাত্রায় কতটা লাভবান হবে কোম্পানি।
এমভি মানামী লঞ্চের ব্যবস্থাপক জিয়াউল ইসলাম মঞ্জু জানান, ইতোমধ্যে আসা–যাওয়ার ট্রিপে কেবিন প্রায় ৯৫ শতাংশ বিক্রি হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত যাত্রীর চাপ না থাকলেও আগামী কয়েকদিনে বোঝা যাবে আমরা কেমন থাকব।
এদিকে বরিশাল নদী বন্দরে কন্ট্রোল রুম, হেল্প ডেস্ক ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে। যাত্রী সেবায় মেডিকেল টিমও থাকবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় থানা পুলিশ, নৌ-পুলিশ, গোয়েন্দাসহ অন্যান্য বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
বরিশাল সদর নৌ-থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মহসিন বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নৌ-বন্দর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া কন্ট্রোল রুম থেকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা কাজ করছি। আশা করছি নৌপথে এবারের ঈদযাত্রা সুন্দর হবে।
The post ঢাকা-বরিশাল:কেবিনের টিকিট শেষের পথে, ডেকের যাত্রী বলে দেবে লাভ-লোকসানের কথা appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.