
ঝালকাঠি প্রতিনিধি:

ঝালকাঠির প্রশাসনের নজরদারির অভাবে অবৈধ ডাইসু (ট্রাক টলির) বেপরোয়া গতিতে চলাচল করছে। এতে প্রতিদিনই বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা, আহত হচ্ছে পথচারী ও যাত্রীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব যানবাহন অবাধে চললেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
জানা যায়, বেপরোয়া গতির এই যানগুলো শহরের প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করায় পথচারীদের চলাফেরায় অসুবিধা হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন সড়কে অনুমোদনহীন যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে তিন চাকার ডিজেলচালিত ডাইসু চলাচলের ফলে সড়কগুলো হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। এসব যানবাহনের চালকদের বেশিরভাগেরই নেই বৈধ লাইসেন্স বা কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ, ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। একদিকে চালকরা নিজেরাই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন, অন্যদিকে পথচারীদের জন্যও তৈরি হচ্ছে মৃত্যুঝুঁকি। রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স না থাকায় সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে। এই ট্রলিগুলোর চালকদের কোন প্রশিক্ষন বা ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।
স্থানীয়রা জানান, জেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা তিন চাকার এই ডাইসুগুলো মূলত ইট, বালু ও কাঠ পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে অদক্ষ চালকদের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে এগুলো ভয়ংকর হয়ে উঠছে। গত কয়েক বছরে উপজেলার সড়কগুলোতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ডাইসুর কারণে ঘটেছে। ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ডাইসু দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মো. নয়ন হোসেন নামে এক হেলপার। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নলছিটির সূর্যপাশা গ্রামের বাসিন্দা রুবেল হাওলাদার ডাইসু উল্টে চাপা পড়ে মারা যান। এছাড়া ২০২২ সালে শুকতারা ব্রিকস এলাকায় ইটবোঝাই ডাইসুর নিচে চাপা পড়ে ভাবনা নামে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে এবং ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়।
জেলায় ইটভাটাগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ৩ থেকে ৪শত টি ডাইসু (ট্রাক টলির) চলাচল করে। বিশেষ করে ঝালকাঠি পৌরসভা ভিতরে ভারী যানবাহনের চাপে সড়কের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে, বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা, অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ঝালকাঠি শহরবাসী। শব্দ ও বায়ুদূষণের কারণেও ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয়রা। ফজরের নামাজের পর থেকেই এসব যানবাহনের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন ঝালকাঠি বাসিন্দারা । রাস্তায় উড়তে থাকা ইটের গুঁড়া ও ধুলাবালিতে শ্বাসকষ্টসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার পৌর এলাকা, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সড়কগুলোসহ একাধিক এলাকায় অবৈধ যানবাহনের বেপরোয়া গতিতে মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটই চলছে । কখনো কখনো রাস্তার পাশে খাদে উল্টে পড়ে থাকতে দেখা যায় এসব ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ যানবাহন।
স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে অনুমোদনহীন যানবাহন বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন। একাধিকবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় মহলে প্রতিবাদ হলেও প্রশাসন নিরব ভ‚মিকা পালন করছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব অবৈধ যানবাহনের মালিকদের মধ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছেন, ফলে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পান না সাধারণ মানুষ। মৌখিকভাবে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হলেও তেমন কোনো প্রতিকার মেলেনি। ইটভাটা যেসব এলাকায় বেশি, সে এলাকায় এসব অবৈধ যানবাহনের দাপটও বেশি।
ঝালকাঠির সাধারণ মানুষ দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা চান, প্রশাসন অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করুক এবং অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিক। সামনে ঈদুল ফিতর, তখন ডাইসুর দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে সড়ক পরিণত হতে পারে মৃত্যুক‚পে। স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অনুমোদনহীন যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, দক্ষ চালকদের প্রশিক্ষণ ও সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। অন্যথায় ঝালকাঠিতে বিভিন্ন উপজেলার সড়কে দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে।
ঝালকাঠির টিআই মোঃ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ইতোমধ্যে অনেকগুলি অবৈধ (ট্রাক টলির) তিন চাকা ওয়ালা গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। এবং এই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত আছে।
ঝালকাঠি পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায় জানান, বিষয়টি নজরে আসছে। এব্যাপারে অভিযান পরিচালনা করে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
The post ঝালকাঠিতে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অবৈধ ট্রাক ট্রলির বেপরোয়া চলাচল থামছে না appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.