12:04 am, Thursday, 3 April 2025
Aniversary Banner Desktop

ধ্বংসের দারপ্রান্তে কালুহাটি পাদুকা পল্লী

মোজাম্মেল হক, চারঘাট থেকে: প্রায় সমাগত ঈদুল ফিতর। এসময় দম ফেলানোর ফুসরত থাকেনা কারখানা মালিক ও কারিগরদের। কিন্তু রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবতে বসেছে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কালুহাটি পাদুকা পল্লী। ৮২ টি কারখানার মধ্যে চালু আছে মাত্র ১১টি কারখানা।

হাজারো শ্রমিক, ক্রেতা ও বিক্রেতায় মুখরিত বড়াল পাড়ের এ পল্লীতে নেমেছে সুনশান নিরবতা। এ অবস্থায় কয়েক হাজার শ্রমিকের রুটি রোজগার অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ১৯৮০ সালে চারঘাটের বড়াল নদের পাড়ে গড়ে উঠে এই পাদুকা পল্লী।

পর্যায়ক্রমে সেখানে ৮২টি কারখানা গড়ে উঠে। এসব কারখানায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ১০ হাজার শ্রমিক যুক্ত ছিল। যার মধ্যে দুই হাজার জন নারী শ্রমিক। রোজার ঈদের মৌসুমে ৬০-৬৫ কোটি টাকার জুতা-সেন্ডেল বিক্রি হতো।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের অর্ডার মোতাবেক জুতা-সেন্ডেল সরবরাহ করা হতো। কালুহাটি পল্লীর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল দেশ জুড়ে। দেশের একমাত্র বেকারহীন গ্রামের তকমাও পেয়েছিল কালুহাটি।

কারখানা মালিকরা বলছেন, ২০১৩ সালের নির্বাচনে শাহরিয়ার আলমের জয়লাভের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর হবার পর পাদুকা পল্লীর আলো ফিকে হতে শুরু করে। ততদিনে বিভিন্ন প্রভাবশালী কোম্পানি মেশিনের সাহায্যে তৈরি জুতা-সেন্ডেল বাজারে নিয়ে আসে।

এতে কালুহাটির হাতে তৈরি জুতা-সেন্ডেলের চাহিদাও কমতে থাকে। প্রতিযোগিতায় টিকতে কারখানা মালিকরা ছোট-খাট মেশিন কিনতে বিভিন্ন দপ্তরে ঋণের আবেদন করেন। এ সুযোগে শাহরিয়ার আলমের আস্থাভাজন স্থানীয় ইউপি সদস্য জেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক কামাল হোসেন ও তার ভাগিনা সোহেল রানা কারখানা না থাকলেও পাদুকা সমবায় সমিতি গঠন করেন।

বিভিন্ন কারখানা মালিককে ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমিতিতে ভেড়ান। প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশ নিয়ে কারখানা মালিকদের নামে এসএমই ফাউন্ডেশন ও সমবায় অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করেন।

কিন্তু তাতে দুই মামা-ভাগিনার পকেট ভারি হলেও কারখানা মালিকদের কোনো উপকারে আসেনি। করোনাকালীন সময়েও কারখানা সমিতির নামে বিভিন্ন সুবিধা এনে নিজেরা ভোগ করেছেন।

করোনাকালে ৬০-৬৫ কোটির ব্যবসা নেমে আসে ১৫-২০ কোটিতে। মার্কেটে টাকা বকেয়া পড়ে কারখানা মালিকদের।

এ অবস্থায় ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প বাঁচাতে উদ্যোগ নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের এসএমই ফাউন্ডেশন। পাদুকা উদ্যোক্তাদের আধুনিক প্রযুক্তি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০২৩ সালে প্রায় ৬৩ লক্ষ টাকায় কালুহাটি পাদুকা ক্লাস্টারে ১৩টি অত্যাধুনিক মেশিনসহ দেশের প্রথম পাদুকা কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) স্থাপন করে তারা।

সিএফসি স্থাপনে এসএমই ফাউন্ডেশন ও চারঘাট পাদুকা শিল্প সমবায় সমিতির সাথে চুক্তিনামা হয়।

কিন্তু মেশিন স্থাপনে প্রকৃত কারখানা মালিকদের মতামত নেয়া হয়নি। প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম  যুবলীগ নেতা কামাল হোসেন ও তার ভাগিনাকে সিএফসি স্থাপনের জমি নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়।

কামাল হোসেন এ সুযোগে কালুহাটি বাজারে বিএনপির এক সমর্থকের জোরপূর্বক দখলকৃত জমিতে সিএফসি স্থাপনে এসএমই ফাউন্ডেশনকে চুক্তিবদ্ধ করে। এ অবস্থায় অন্য পক্ষ মফিজ উদ্দিন ও তার ছেলে শাহ আলম জমির কাগজপত্র নিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।

তবে সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের ক্ষমতার দাপটে আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও সে জমিতে সিএফসি স্থাপন করা হয়। সিএফসিকে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন কামাল হোসেন।

কিন্তু গত পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর শাহরিয়ার আলম, যুবলীগ নেতা কামাল হোসেন ও সোহেল রানা সকলেই আত্নগোপনে চলে যায়।

এ অবস্থায় মফিজ উদ্দিন ও তাঁর ছেলে শাহ আলম এবং তাদের সমর্থকরা পাদুকার সিএফসি দখল করে নিয়েছে। বিএনপি সমর্থকরা সিএফসির সেন্টারের ভেতরেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।

বর্তমানে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে আধুনিক প্রযুক্তির এসএমই ফাউন্ডেশনের সিএফসি। এদিকে ভূয়া কারখানা দেখিয়ে কামাল হোসেন ও সোহেল রানারা নামে-বেনামে এসএমই ফাউন্ডেশন ও সমবায় থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেনি।

তাতে প্রকৃত কারখানা মালিকরা সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করলেও গত পাঁচ বছরে নতুন করে কোনো ঋণ সহযোগিতা পায়নি তারা। এতে করোনাকালে বিভিন্ন মার্কেটে টাকা পাওনা থাকায় কারখানাগুলো পুঁজির অভাবে ভুগছিল।

এ অবস্থায় গত জুন মাসে বিসিক কর্তৃপক্ষ পাদুকা পল্লীর কারখানাগুলো পরিদর্শন করে প্রতিটি কারখানাকে পাঁচ লাখ টাকা হারে ঋণের অনুমোদন দেয়। গত আগস্ট সেই ঋণ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাঁচ আগস্ট পতনের পর সেই ঋণও বন্ধ হয়ে গেছে।

সরেজমিন পাদুকা পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টারের দরজাগুলো ভেঙে দেয়াল তুলে মেশিনগুলো আবদ্ধ করেছে জমির মালিক মালিকানা দাবিকৃতরা। ঈদের মৌসুমেও কারখানাগুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।

মন্ডল সুজ কারখানার মালিক জাকারিয়া হোসেন বলেন, মাস ছয়েক বন্ধ রাখার পর ঈদকে কেন্দ্র করে কারখানা চালু করেছি। আগে রোজার এক মাসে ১৫-২০ লাখ টাকার ব্যবসা করতাম। কিন্তু এ বছর পাঁচ লাখ টাকার ব্যবসাও হবে না।

প্রতিবার ১৮-২০ জন শ্রমিক রাখলেও এবার মাত্র তিনজন শ্রমিক রেখেছি। বাইরের জেলার ব্যবসায়ীরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অর্ডার একেবারেই নেই। স্মার্ট সুজ কারখানার মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, পাদুকা সমিতির উপদেষ্টা কামাল হোসেন ও তার ভাগিনা সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সদস্যদের নামে ঋণ এনে নিজেরা ভোগ করেছেন। এখন তাদের কোনো খোঁজ নেই।

ঋণের টাকাও পরিশোধ করেও নতুন ঋণ পাচ্ছি না। পাঁচ আগস্টের পর থেকে সিএফসিও বন্ধ রয়েছে। হাত দিয়ে আধুনিক জুতা তৈরি সম্ভব না। এজন্য কারখানাও বন্ধ রেখেছি। আমার মত অনেকেই এ মৌসুমে কারখানা চালু করতে পারেনি।

পাদুকা কারিগর আব্দুল মতিন বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে এখানে জুতা-সেন্ডেল তৈরির কাজ করি। রোজার ঈদে এত কাজের চাপ থাকে বাড়ির নারী ও ছুটিতে শিক্ষার্থীরা এসে কাজ করে।

কিন্তু এখন আমার নিজেরই কাজ নেই। বাধ্য হয়ে সকালে দিনমুজুর হিসাবে ও বিকালে কারাখানায় কাজ করছি। কাজ না থাকায় কেউ অন্য পেশা  বেছে নিয়েছেন আবার কেউ বেকার হয়ে বসে আছেন।

জেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, সিএফসি স্থাপনকৃত জমিটা আমার। কারো জমি দখল করে কিছু করা হয়নি। আমার বিরুদ্ধে উঠা সকল অভিযোগ মিথ্যা।

সিএফসির বিষয়টি সমাধানের জন্য একাধিকবার বসতে চেয়েছি কিন্তু কোনো পক্ষই রাজি হয়নি। কালুহাটি পাদুকা শিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, আমি সমিতির কোনো টাকা অনিয়ম করিনি।

বরং সরকার পতনের পর আমার কারখানার মালামাল লুট করা হয়েছে। সিএফসি স্থাপনের সময় ব্যক্তিগত যে টাকা খরচ করেছি সে টাকাও সমিতি আমাকে এখনো ফেরত দেয়নি। এলাকাতেও যেতে পারছিনা।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, পাদুকা শিল্প আমাদের উপজেলার অন্যতম গর্বের জায়গা।

কিন্তু রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতায় চোখের সামনে ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ৬০-৬৫ কোটি টাকার ব্যবসা এ মৌসুমে ২-৩ কোটিতে নেমেছে।

এ বিষয়ে কার্যকারী ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের উপমহাব্যবস্থাপক (ক্লাস্টার উন্নয়ন) আবু মঞ্জুর সাঈফ বলেন, পাদুকা শিল্পের যে সমিতি গঠন করা সভাপতি-সম্পাদক কারোরই কারখানা ছিল না। মূলত নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে তারা সমিতি গঠন করেছিল। এজন্য সিএফসিকে তারা কখনই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেনি। তবে বর্তমান সময়ে কেউ মেশিনগুলো ব্যবহার করতে চাইলে ব্যবহার করতে পারবে। সব মিলিয়ে এখন ধ্বংসের দারপ্রান্তে কালুহাটি পাদুকা পল্লী।

The post ধ্বংসের দারপ্রান্তে কালুহাটি পাদুকা পল্লী appeared first on সোনালী সংবাদ.

Tag :

ndax login

https://ndaxlogi.com

latitude login

https://latitude-login.com

phantom wallet

https://phantomwallet-us.com

phantom

atomic wallet

atomic

https://atomikwallet.org

jupiter swap

jupiter

https://jupiter-swap.com

https://images.google.com/url?q=https%3A%2F%2Fsecuxwallet.us%2F

secux wallet

secux wallet

secux wallet connect

secux

https://secuxwallet.com

jaxx wallet

https://jaxxwallet.live

jaxxliberty.us

gem visa login

jaxx wallet

jaxx wallet download

https://jaxxwallet.us

toobit-exchange.com Toobit Exchange | The Toobit™ (Official Site)

secuxwallet.com SecuX Wallet - Secure Crypto Hardware Wallet

jaxxliberty.us Jaxx Liberty Wallet | Official Site

Atomic Wallet Download

Atomic

Aerodrome Finance

ধ্বংসের দারপ্রান্তে কালুহাটি পাদুকা পল্লী

Update Time : 11:09:37 pm, Saturday, 29 March 2025

মোজাম্মেল হক, চারঘাট থেকে: প্রায় সমাগত ঈদুল ফিতর। এসময় দম ফেলানোর ফুসরত থাকেনা কারখানা মালিক ও কারিগরদের। কিন্তু রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবতে বসেছে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কালুহাটি পাদুকা পল্লী। ৮২ টি কারখানার মধ্যে চালু আছে মাত্র ১১টি কারখানা।

হাজারো শ্রমিক, ক্রেতা ও বিক্রেতায় মুখরিত বড়াল পাড়ের এ পল্লীতে নেমেছে সুনশান নিরবতা। এ অবস্থায় কয়েক হাজার শ্রমিকের রুটি রোজগার অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ১৯৮০ সালে চারঘাটের বড়াল নদের পাড়ে গড়ে উঠে এই পাদুকা পল্লী।

পর্যায়ক্রমে সেখানে ৮২টি কারখানা গড়ে উঠে। এসব কারখানায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ১০ হাজার শ্রমিক যুক্ত ছিল। যার মধ্যে দুই হাজার জন নারী শ্রমিক। রোজার ঈদের মৌসুমে ৬০-৬৫ কোটি টাকার জুতা-সেন্ডেল বিক্রি হতো।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের অর্ডার মোতাবেক জুতা-সেন্ডেল সরবরাহ করা হতো। কালুহাটি পল্লীর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল দেশ জুড়ে। দেশের একমাত্র বেকারহীন গ্রামের তকমাও পেয়েছিল কালুহাটি।

কারখানা মালিকরা বলছেন, ২০১৩ সালের নির্বাচনে শাহরিয়ার আলমের জয়লাভের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর হবার পর পাদুকা পল্লীর আলো ফিকে হতে শুরু করে। ততদিনে বিভিন্ন প্রভাবশালী কোম্পানি মেশিনের সাহায্যে তৈরি জুতা-সেন্ডেল বাজারে নিয়ে আসে।

এতে কালুহাটির হাতে তৈরি জুতা-সেন্ডেলের চাহিদাও কমতে থাকে। প্রতিযোগিতায় টিকতে কারখানা মালিকরা ছোট-খাট মেশিন কিনতে বিভিন্ন দপ্তরে ঋণের আবেদন করেন। এ সুযোগে শাহরিয়ার আলমের আস্থাভাজন স্থানীয় ইউপি সদস্য জেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক কামাল হোসেন ও তার ভাগিনা সোহেল রানা কারখানা না থাকলেও পাদুকা সমবায় সমিতি গঠন করেন।

বিভিন্ন কারখানা মালিককে ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমিতিতে ভেড়ান। প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশ নিয়ে কারখানা মালিকদের নামে এসএমই ফাউন্ডেশন ও সমবায় অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করেন।

কিন্তু তাতে দুই মামা-ভাগিনার পকেট ভারি হলেও কারখানা মালিকদের কোনো উপকারে আসেনি। করোনাকালীন সময়েও কারখানা সমিতির নামে বিভিন্ন সুবিধা এনে নিজেরা ভোগ করেছেন।

করোনাকালে ৬০-৬৫ কোটির ব্যবসা নেমে আসে ১৫-২০ কোটিতে। মার্কেটে টাকা বকেয়া পড়ে কারখানা মালিকদের।

এ অবস্থায় ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প বাঁচাতে উদ্যোগ নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের এসএমই ফাউন্ডেশন। পাদুকা উদ্যোক্তাদের আধুনিক প্রযুক্তি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০২৩ সালে প্রায় ৬৩ লক্ষ টাকায় কালুহাটি পাদুকা ক্লাস্টারে ১৩টি অত্যাধুনিক মেশিনসহ দেশের প্রথম পাদুকা কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) স্থাপন করে তারা।

সিএফসি স্থাপনে এসএমই ফাউন্ডেশন ও চারঘাট পাদুকা শিল্প সমবায় সমিতির সাথে চুক্তিনামা হয়।

কিন্তু মেশিন স্থাপনে প্রকৃত কারখানা মালিকদের মতামত নেয়া হয়নি। প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম  যুবলীগ নেতা কামাল হোসেন ও তার ভাগিনাকে সিএফসি স্থাপনের জমি নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়।

কামাল হোসেন এ সুযোগে কালুহাটি বাজারে বিএনপির এক সমর্থকের জোরপূর্বক দখলকৃত জমিতে সিএফসি স্থাপনে এসএমই ফাউন্ডেশনকে চুক্তিবদ্ধ করে। এ অবস্থায় অন্য পক্ষ মফিজ উদ্দিন ও তার ছেলে শাহ আলম জমির কাগজপত্র নিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।

তবে সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের ক্ষমতার দাপটে আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও সে জমিতে সিএফসি স্থাপন করা হয়। সিএফসিকে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন কামাল হোসেন।

কিন্তু গত পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর শাহরিয়ার আলম, যুবলীগ নেতা কামাল হোসেন ও সোহেল রানা সকলেই আত্নগোপনে চলে যায়।

এ অবস্থায় মফিজ উদ্দিন ও তাঁর ছেলে শাহ আলম এবং তাদের সমর্থকরা পাদুকার সিএফসি দখল করে নিয়েছে। বিএনপি সমর্থকরা সিএফসির সেন্টারের ভেতরেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।

বর্তমানে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে আধুনিক প্রযুক্তির এসএমই ফাউন্ডেশনের সিএফসি। এদিকে ভূয়া কারখানা দেখিয়ে কামাল হোসেন ও সোহেল রানারা নামে-বেনামে এসএমই ফাউন্ডেশন ও সমবায় থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেনি।

তাতে প্রকৃত কারখানা মালিকরা সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করলেও গত পাঁচ বছরে নতুন করে কোনো ঋণ সহযোগিতা পায়নি তারা। এতে করোনাকালে বিভিন্ন মার্কেটে টাকা পাওনা থাকায় কারখানাগুলো পুঁজির অভাবে ভুগছিল।

এ অবস্থায় গত জুন মাসে বিসিক কর্তৃপক্ষ পাদুকা পল্লীর কারখানাগুলো পরিদর্শন করে প্রতিটি কারখানাকে পাঁচ লাখ টাকা হারে ঋণের অনুমোদন দেয়। গত আগস্ট সেই ঋণ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাঁচ আগস্ট পতনের পর সেই ঋণও বন্ধ হয়ে গেছে।

সরেজমিন পাদুকা পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টারের দরজাগুলো ভেঙে দেয়াল তুলে মেশিনগুলো আবদ্ধ করেছে জমির মালিক মালিকানা দাবিকৃতরা। ঈদের মৌসুমেও কারখানাগুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।

মন্ডল সুজ কারখানার মালিক জাকারিয়া হোসেন বলেন, মাস ছয়েক বন্ধ রাখার পর ঈদকে কেন্দ্র করে কারখানা চালু করেছি। আগে রোজার এক মাসে ১৫-২০ লাখ টাকার ব্যবসা করতাম। কিন্তু এ বছর পাঁচ লাখ টাকার ব্যবসাও হবে না।

প্রতিবার ১৮-২০ জন শ্রমিক রাখলেও এবার মাত্র তিনজন শ্রমিক রেখেছি। বাইরের জেলার ব্যবসায়ীরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অর্ডার একেবারেই নেই। স্মার্ট সুজ কারখানার মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, পাদুকা সমিতির উপদেষ্টা কামাল হোসেন ও তার ভাগিনা সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সদস্যদের নামে ঋণ এনে নিজেরা ভোগ করেছেন। এখন তাদের কোনো খোঁজ নেই।

ঋণের টাকাও পরিশোধ করেও নতুন ঋণ পাচ্ছি না। পাঁচ আগস্টের পর থেকে সিএফসিও বন্ধ রয়েছে। হাত দিয়ে আধুনিক জুতা তৈরি সম্ভব না। এজন্য কারখানাও বন্ধ রেখেছি। আমার মত অনেকেই এ মৌসুমে কারখানা চালু করতে পারেনি।

পাদুকা কারিগর আব্দুল মতিন বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে এখানে জুতা-সেন্ডেল তৈরির কাজ করি। রোজার ঈদে এত কাজের চাপ থাকে বাড়ির নারী ও ছুটিতে শিক্ষার্থীরা এসে কাজ করে।

কিন্তু এখন আমার নিজেরই কাজ নেই। বাধ্য হয়ে সকালে দিনমুজুর হিসাবে ও বিকালে কারাখানায় কাজ করছি। কাজ না থাকায় কেউ অন্য পেশা  বেছে নিয়েছেন আবার কেউ বেকার হয়ে বসে আছেন।

জেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, সিএফসি স্থাপনকৃত জমিটা আমার। কারো জমি দখল করে কিছু করা হয়নি। আমার বিরুদ্ধে উঠা সকল অভিযোগ মিথ্যা।

সিএফসির বিষয়টি সমাধানের জন্য একাধিকবার বসতে চেয়েছি কিন্তু কোনো পক্ষই রাজি হয়নি। কালুহাটি পাদুকা শিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, আমি সমিতির কোনো টাকা অনিয়ম করিনি।

বরং সরকার পতনের পর আমার কারখানার মালামাল লুট করা হয়েছে। সিএফসি স্থাপনের সময় ব্যক্তিগত যে টাকা খরচ করেছি সে টাকাও সমিতি আমাকে এখনো ফেরত দেয়নি। এলাকাতেও যেতে পারছিনা।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, পাদুকা শিল্প আমাদের উপজেলার অন্যতম গর্বের জায়গা।

কিন্তু রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতায় চোখের সামনে ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ৬০-৬৫ কোটি টাকার ব্যবসা এ মৌসুমে ২-৩ কোটিতে নেমেছে।

এ বিষয়ে কার্যকারী ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের উপমহাব্যবস্থাপক (ক্লাস্টার উন্নয়ন) আবু মঞ্জুর সাঈফ বলেন, পাদুকা শিল্পের যে সমিতি গঠন করা সভাপতি-সম্পাদক কারোরই কারখানা ছিল না। মূলত নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে তারা সমিতি গঠন করেছিল। এজন্য সিএফসিকে তারা কখনই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেনি। তবে বর্তমান সময়ে কেউ মেশিনগুলো ব্যবহার করতে চাইলে ব্যবহার করতে পারবে। সব মিলিয়ে এখন ধ্বংসের দারপ্রান্তে কালুহাটি পাদুকা পল্লী।

The post ধ্বংসের দারপ্রান্তে কালুহাটি পাদুকা পল্লী appeared first on সোনালী সংবাদ.