
রাহাদ সুমন,বিশেষ প্রতিনিধি॥

গত বছরও ঈদের সময় বৃদ্ধা মা,স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য নতুন পোষাক,কসমেটিক্স,খেলনা সামগ্রী ও নানা খাবার নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছিলেন বরিশালের বানারীপাড়ার পূর্ব সলিয়াবাকপুর গ্রামের হাফেজ মো. জসিম উদ্দিন। ঈদের দিন স্ত্রী সুমী আক্তার, মেয়ে জান্নাত ও ছেলে সাইফকে নিয়ে ঘুরতে যেতেন তিনি। কিন্তু এবার সেই জসিম উদ্দিনকে ছাড়া ঈদের আনন্দের বদলে গোটা পরিবারে বিষাদ নেমে এসেছে। ঈদের দিন স্ত্রী ও দুই অবুঝ সন্তান বার বার তার কবরের কাছে গিয়ে চোখের জলে ভেসেছেন। দেড় বছর বয়সী রেখে যাওয়া ছেলে সাইফের বয়স এখন ২ বছর ৩ মাস। সেই ছোট্ট সাইফ সবার মাঝে বাবাকে খুঁজে ফিরছে। স্ট্রোকের রোগী বৃদ্ধা মা মেহেরুন্নেছা বেগমের কান্না যেন থামছেই না। জসিম উদ্দিনের স্ত্রী সুমি আক্তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কান্না-বিলাপ করে বলেন,স্বামীকে হারিয়ে তাদের সব আনন্দ চিরকালের জন্য শেষ হয়ে গেছে। ঈদ তাদের কাছে এখন বড়ই বেদনার। বাবার জন্য ছেলে-মেয়ে দুটি হাহাকার করছে। ছোট্ট ছেলেটি বাবার জন্য কাঁদছে আবার হাত দিয়ে আমার (মায়ের) চোখের জল মুিছয়ে দিচ্ছে। এবার আর ওদের জন্য নতুন পোষাক,খেলনা,খাবার নিয়ে বাবা আসেননি। মৃত্যু তাকে বাড়ির আঙিনায় চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন। তাকে ছাড়া আমরা বড় আসহায়। মহান আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন,সবার কাছে এই দোয়া চাই। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়–য়া মেয়ে জান্নাত (১১) কান্নাভেজা কন্ঠে বলেন,বাবা বাড়িতে আসলে তাদের দুই ভাই-বোনের জন্য বিভিন্ন খেলনা, খাবার ও পোশাক নিয়ে আসতেন। আদর করে বুকে জড়িয়ে ধরতেন। সেই প্রিয় বাবা আর কোন দিন আসবেন না, আদর করে বুকে জড়িয়ে ধরবেন না। বাবাকে ছাড়াই আমাদের জীবনে প্রতিবছর ঈদ ফিরে আসবে। কাকে বাবা বলে ডাকবো আমরা। প্রসঙ্গত,গত বছরের ১৮ জুলাই দুপুরে ঢাকার উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরে কোটা আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান হাফেজ মাওলানা জসিম উদ্দিন। ওই দিন রাতেই বরিশালের বানারীপাড়ার পূর্ব সলিয়াবাকপুর গ্রামের বাড়িতে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয়। পরের দিন ১৯ জুলাই সকালে বাড়ির পাশে তার এক সময়ের বিদ্যাপীঠ পূর্ব সলিয়াবাকপুর দারুল উলুম হোসাইনিয়া কওমি কেরাতিয়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। তিনি ওই গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নান হাওলাদের ছেলে। জানা গেছে,গত প্রায় ১৫ বছর ধরে ঢাকায় থাকতেন হাফেজ মাওলানা জসিম উদ্দিন। উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে এমএসএ ওয়ার্কশপে চাকরি করতেন। ঘটনার দিন ৭ নম্বর সেক্টরে ফরহাদ অটো পার্টসের দোকানে যান মাইক্রোবাসের পার্টস কিনতে। সেখান থেকে নিজ ওয়ার্কশপে ফিরতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। বৃদ্ধা অসুস্থ মাকে দেখভাল করতে স্ত্রী ও সন্তানদের গ্রামের বাড়িতে রেখে ছিলেন জসিম উদ্দিন। সেই মাসহ স্বজনদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশের যাত্রী হন তিনি।
The post শহীদ হাফেজ জসিম উদ্দিনের মা,স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানের চোখের জলে ভেসে গেছে ঈদের আনন্দ ! appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.