
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর পবা উপজেলায় বাসের চাপায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার এক নারী যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শিশুসহ আহত হয়েছেন আরও চারজন। এছাড়াও রাজশাহীর বাঘায় বাসের চাপায় মাজদার রহমান নামের এক ভ্যানচালকের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত দুই বন্ধু চারদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার দিনগত রাতে মারা গেছে। অপরদিকে পাবনার সুজানগরে পদ্মা নদীতে বেড়াতে গিয়ে নৌকা ডুবে নিখোঁজ স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
পবা প্রতিনিধি জানান, রাজশাহীর পবা উপজেলায় বাসের চাপায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার এক নারী যাত্রী নিহত হয়েছেন। একই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুসহ আরও চারজন।
শনিবার উপজেলার হরিপুর মোড়ে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত শারমিন (২৫) গোদাগাড়ী উপজেলার হুজরাপুর এলাকার শামীম হোসেনের মেয়ে। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে, নিহত ও আহতরা সবাই অটোরিকশার যাত্রী ছিলেন।
দামকুড়া থানার ওসি রবিউল ইসলাম বলেন, বাসের চাপায় অটোরিকশার একজন নারী যাত্রী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন। আহতদের অবস্থা গুরুতর। তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে বাসটি ফেলে বাসের চালক ও তার সহযোগীরা পালিয়ে গেছে।
বাঘা প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী বাঘায় বাসের চাপায় মাজদার রহমান (৬০) নামের এক ভ্যানচালকের মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের সাজির বটতলা মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মাজদার মনিগ্রাম ইউনিয়ানের হাবাসপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনের ন্যায় ভ্যান নিয়ে বের হন মাজদার রহমান। তিনি মনিগ্রাম ইউনিয়নের সাজির বটতলা মোড়ে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাস ভ্যানটিকে চাপা দেয়। এতে গুরুতর আহত হন মাজদার। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক ভ্যানচালককে মৃত ঘোষণা করেন। মাজদার রহমানের ছেলে রাব্বি হোসেন বলেন, সকাল ১০টার দিকে ভ্যান নিয়ে বাবা বের হয়েছিলেন।
রাতে খবর পায় তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। বাঘা থানার ওসি আফম আসাদুজ্জামান বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘাতক বাসটি জব্দ করা হলেও এর চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছেন।
পাবনা (ঈশ্বরদী) প্রতিনিধি জানান, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত দুই বন্ধু চারদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার দিনগত রাতে মারা গেছে। গত শুক্রবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নয়ন হোসেন (১৭) রাত ২টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মো. হৃদয় হোসেন (১৭) মারা যায়।
এরা দুইজনেই চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। নয়ন হোসেন গাইবান্ধা জেলার কামাল হোসেনের ছেলে এবং ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের বাড়াহুসিয়া গ্রামের মফিজ উদ্দিনের নাতি। সে নানার বাড়িতে থেকে স্কুলে পড়াশুনা করত। হৃদয় হোসেন ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর পূর্বপাড়া গ্রামের হাদিস ব্যাপারীর ছেলে। নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঈদের দিন (৩১ মার্চ) বিকেলে মোটরসাইকেল নিয়ে দুই বন্ধু ঘুরতে বের হয়।
একপর্যায়ে তারা পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুর দেবত্তর সড়কের বেরুয়ান সরাবারিয়া নামক স্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে মোটরসাইকেলটি রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে তারা গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে আটঘরিয়া হাসপাতালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
এদিকে নয়নের অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং হৃদয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। দাশুড়িয়া দরগা বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে জানান, নয়ন ও হৃদয় দুজনই ১০ এপ্রিল থেকে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। দুই বন্ধুর মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতের স্বজনরা জানান, তাদের মরদেহ এখনো হাসপাতালে রয়েছে। দুপুরের মধ্যে মরদেহ আনার চেষ্টা চলছে। দুই বন্ধুকে একসঙ্গে খালিশপুর কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হবে।
পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনার সুজানগরে পদ্মা নদীতে বেড়াতে গিয়ে নৌকা ডুবে নিখোঁজ স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টার দিকে লাশ দুটি উদ্ধার করে নৌপুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। গত শুক্রবার বিকেল ৬টার দিকে নৌকা ডুবে তারা নিখোঁজ হয়েছিলেন।
সুজানগর থানার ওসি মজিবর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মারা যাওয়া দুজন হলেন, সদর উপজেলার কোলচরী গ্রামের দুলাল প্রামাণিকের ছেলে হৃদয় প্রামাণিক (২৩) ও তার স্ত্রী মৌ আক্তার (১৯)। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার বিকেলে সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়ায় কাঞ্চন পার্ক এলাকায় পদ্মা নদীতে বেড়াতে যান অনেকে।
একপর্যায়ে ২০ থেকে ২৫ জন শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ওঠেন। হঠাৎ করে স্রোতের টানে ডুবে যায় নৌকাটি। পরে আশপাশের লোকজনের সহায়তায় সবাই নদী থেকে উদ্ধার হতে পারলেও স্বামী-স্ত্রী নিখোঁজ হন। সুজানগর ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলীম বলেন, খবর পেয়ে সুজানগর ফায়ার সার্ভিস, রাজশাহী থেকে আসা ডুবুরি দল ও নাজিরগঞ্জ নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। কিন্তু শুক্রবার দুজনের সন্ধান মেলেনি।
শনিবার সকাল থেকে আবার অভিযান শুরু করে সকাল ১০টার দিকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
The post রাজশাহী অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনায় চার, পদ্মা নদীতে ডুবে দু’জনের মৃত্যু appeared first on সোনালী সংবাদ.