
রাঙ্গাবালী ((পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন একটি নাম, একটি জনপদ, যেখানে প্রতিটি দিন যেন নদীভাঙনের সাথে এক অনির্বাণ সংগ্রাম। চারদিকে নদীঘেরা এই ইউনিয়নে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। তবে এখন এই জনপদের অস্তিত্বই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে আগুনমুখা নদীর আগ্রাসী স্রোতের কাছে।
এই অঞ্চলের মানুষ আগুনমুখা নদীকে আর নদী বলে ভাবেন না, তারা একে বলেন ‘মৃত্যুর মুখ’। কারণ, নদীটির তীব্র স্রোতে গত এক দশকে ভেঙে গেছে চালিতাবুনিয়ার শত শত ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও। ২০১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এই ভাঙন যেন আর থামছেই না। ইউনিয়নের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মূল ভূখণ্ড ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
চালিতাবুনিয়া, উত্তর চালিতাবুনিয়া, মধ্য চালিতাবুনিয়া, বিবির হাওলা এবং গোলবুনিয়া এইসব গ্রামগুলো এখন নদীভাঙনের প্রতিচ্ছবি। ভিটেমাটি হারিয়ে যারা একসময় ছিল উচ্চবিত্ত, তারা এখন মধ্যবিত্ত। মধ্যবিত্তরা হয়েছেন দিনমজুর, আর দিনমজুররা নিঃস্ব। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন লতার চরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর, আবার কেউ কেউ ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয়ণ কেন্দ্রে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙনের মুখে পড়া মানুষদের নিরাপত্তায় নেই কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা। এক সময়ের ঘরবাড়ির জায়গায় এখন শুধুই পানি আর ভাঙা মাটি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এখানে নেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেল্টার। যে একটি সাইক্লোন সেল্টার ছিল, সেটিও বিলীন হয়ে গেছে আগুনমুখার স্রোতে।
নদীভাঙন কিংবা ঘূর্ণিঝড় প্রতিটি দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। পানি উঠে যায় ঘরে, রান্না করার জায়গা থাকে না। কেউ কেউ অনাহারে থাকেন দিনের পর দিন। আবারও এমন পরিস্থিতি দেখা দিলেও প্রতিকারের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো টেকসই পরিকল্পনা নেয়া হয়নি।
চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ বিপ্লব হাওলাদার বলেন, “আমরা বিষয়টি লিখিতভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মোঃ মহিবুর রহমান মহিবকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু তিনি কখনোই আমাদের পাশে দাঁড়াননি। এখনই ব্যবস্থা না নিলে চালিতাবুনিয়ার নাম মানচিত্র থেকেও হারিয়ে যাবে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, মোঃ শাহ্ আলম জানান, “চালিতাবুনিয়ার নদী ভাঙন রোধে একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে কাজ শুরু করা হবে।”
সচেতনমহলের মতে, চালিতাবুনিয়াকে রক্ষায় এখনই দীর্ঘমেয়াদী ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে, সামনে আরও ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। এই অঞ্চলের মানুষ শুধু জীবন বাঁচাতে চায় না, তারা বাঁচাতে চায় তাদের ভবিষ্যৎ, তাদের পরিচয়।
The post আগুনমুখা নদীর তীব্র স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে জনপদ appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.