স্টাফ রিপোর্টার: গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা ও গণহত্যার প্রতিবাদে সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও সোমবার বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। একইসাথে কর্মসূচি থেকে ইসরায়েলের সকল পণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী মহানগরীর উদ্যোগে সোমবার বিকালে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রতিবাদে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি সাহেব বাজার বড় মসজিদ হতে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রাজশাহী মহানগরী আমির ড. মাওলানা কেরামত আলীর সভাপতিত্বে এবং মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক শাহাদাৎ হোসাইনের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ মিছিলোত্তর সমাবেশে আরও বক্তব্য প্রদান করেন মহানগরীর নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ সেলিম, মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মাহবুবুল আহসান বুলবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন সরকার, ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, মহানগরীর সেক্রেটারি ইমরান নাজির।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনডিএফ এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ডাঃ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, রাজশাহী মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক একেএম সরোয়ার জাহান প্রিন্স, তৌহিদুর রহমান সুইট, সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া, আমিনুল ইসলাম, কামরুজ্জামান সোহেল, ডাঃ হাসানুজ্জামান, সালাউদ্দিন আহমদ, হাফেজ নুরুজ্জামান, মাওলানা রুহুল আমিন, হড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদসহ জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন থানার আমির ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বিক্ষোভ মিছিলোত্তর সমাবেশে ড. কেরামত আলী বলেন, মানবতার দুশমন ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় ইতিহাসের নিকৃষ্টভাবে একের পর এক হামলা চালিয়ে নারী শিশুসহ নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে। ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরও ইসরাইল গাজায় এই নির্মম বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মদদ দিচ্ছে মানবতার বুলি আওড়ানো জাতিসংঘ ও আমেরিকা।
বিশ্ব মুসলিম নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতা বন্ধ এবং ফিলিস্তিনকে রক্ষার জন্য পুরো মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করে অবিলম্বে ইসরাইল অভিমুখে মার্চ করুন এবং অবৈধ ইসরাইলকে গুঁড়িয়ে দিন। অন্যথায় আপনাদের এই নিষ্ক্রীয়তা, অলসতা একদিন আপনাদের ঘাড়েও চেপে বসবে। এদিকে বিক্ষোভ চলাকালিন সময়ে বিভিন্ন সংগঠন মিছিলসহকারে যোগ দেন। এতে রাজশাহী মহানগরী জনসমুদ্রে পরিনত হয়।
অন্যদিকে মৃত শিশুর লাশ কোলে নিয়ে শোকে স্তব্ধ ফিলিস্তিনি এক পিতা। আর তার গলায় বিশ্বমোড়লদের বাঁধা শেকল আর উপহাস। এমন দৃশ্যের আবতারণা করে ফিলিস্তিন পরিস্থিতি তুলে ধরেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১ টা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো প্যরিসরোড একখন্ড ফিলিস্তিন হিসেবে ফুটে উঠে। আর এ অবস্থায় ইজরাইলের এমন বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার, প্রতিবাদ আর পণ্য বয়কটে ফেটে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
ঘণ্টাব্যাপী চলা এ মানববন্ধন থেকে বিশ্ব মুসলিম নেতাদের একত্রিত হয়ে ফিলিস্তিনের পাশে দাড়ানোর আহ্বান জানান তারা। পাশাপাশি ইজরাইলের সকল পণ্য বয়কটের আহ্বান আসে এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে।
একই সাথে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন গুলো এর প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এদিকে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একই কর্মসূচি পালন করেছে ক্যাম্পসের গোল চত্বরে।
এছাড়াও রাজশাহীর প্রায় ১০টি স্থানে বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই কর্মসূচি পালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ ও গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সোমবার ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
এসময় শিক্ষার্থীরা, ‘ফ্রম দ্যা রিভার টু দ্যা সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘লং লিভ প্যালেস্টাইন, লং লিভ গাজা’, ‘স্টপ জেনোসাইড ইন গাজা’, ‘ধ্বংস হোক ইসরায়েল’ লেখাসহ বিভিন্ন প্লেকার্ড প্রদর্শন করেন ও স্লোগান দেন। প্রতিবাদ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার শরীরে ফিলিস্তিনের পতাকা ও শেকল জড়িয়ে ফিলিস্তিনের জনগণের অসহায়ত্বের প্রতীকি চিত্র তুলে ধরেন।
সমাবেশে বক্তারা ফিলিস্তিনের জনগণের উপর ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদ জানান। এসময় তারা এই হামলার পেছনে আমেরিকাসহ জায়নবাদী রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদ আছে বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া সমাবেশে ইসরায়েলকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করতে তাদের পণ্য বর্জনের ডাক দেন। এসময় সারা বিশ্বের মুসলমানদের এক হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান বক্তারা।
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু আমাদের এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে আমরা এখানে দাঁড়ালেই ইসরায়েলি বাহিনী তাদের জঘন্য বর্বরতা বন্ধ করবে। আমরা যদি এই নিপীড়িত মানুষের জন্য কিছু করতে চাই তাহলে জ্ঞানের বিকল্প নেই।
কারণ যাদের সাথে লড়াই তারা মানুষ হিসেবে কিন্তু জ্ঞান-গরিমায় অনেক বড়। তারা অনেক বেশি জানে এবং পারে। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের মতো জ্ঞানী না হতে পারবো এবং মানবতা সমুন্নত না রাখতে পারবো ততক্ষণ আমরা জিততে পারবো না।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, গাজার অধিবাসীদের হত্যা মোকাবেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি হত্যা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আর কোনো কথা নয়। এবার আমাদের একশ্যানে যাওয়া উচিত। সারা মুসলিম বিশ্বের প্রতি আমার আহ্বান, আসুন আমরা সবাই এক হই। পশ্চিমা বিশ্বের মানবতার দিকে আমরা আর চেয়ে থাকবো না। মুসলিম নিধন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলি।
সমাবেশে সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার। এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, ছাত্র উপদেষ্টা সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম, ভেটেনারারি এন্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ইসমত আরা বেগম, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ। কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নগরীর আলুপট্টি মোড়ে গতকাল সন্ধ্যার পরে কেএফসি (কেন্ডাকী ফ্রাইড চিকেন) রাজশাহী শাখা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
The post ইসরায়েলের সকল পণ্য বয়কটের আহ্বান, গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে উত্তাল রাজশাহী appeared first on সোনালী সংবাদ.