
আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই বুক ভরা আশা নিয়ে আমন ধানখেতে কাস্তে চালাবেন কৃষক। দিগন্ত জোড়া মাঠে হিমেল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে ধানের সোনালী শীষের সঙ্গে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। ঠিক এসময় আবহাওয়াজনিত কারণে কারেন্ট পোকার আক্রমণের খবরে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
চলতি আমন মৌসুমে তেরখাদা উপজেলাতে কারেন্ট পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ধান চাষিরা। বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করেও প্রতিরোধ পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় কারেন্ট পোকার আক্রমণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। একদিকে তেল, সার, কীটনাশক ও উৎপাদনের মজুরি বৃদ্ধির ফলে এমনিতেই বেকায়দায় রয়েছেন কৃষকরা। উৎপাদনের মজুরি খরচ, সার আর কীটনাশকের বাড়তি দামেই নাভিশ্বাস। এর মধ্যেই আবার আমন ধানে নতুন করে কারেন্ট পোকার আক্রমণ। যার ফলে কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
এই পোকার আক্রমণের কারণে প্রথমে ধানগাছ শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, চলতি মৌসুমে তেরখাদায় আমন ধান চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৯৪৯ হেক্টর জমিতে। উপজেলার ইখড়ি গ্রামের কৃষক বাদশা শেখ জানান, আমি ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছি। তার মধ্যে ২ বিঘা জমিতে কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধানখেত সব শেষ হয়ে গেছে। এখন খরচ উঠানোই কষ্টকর। বিভিন্ন ঔষুধ প্রয়োগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। অপর কৃষক রেজাউল জানান, সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছি। অনেক টাকা খরচ হয়েছে। অনাবৃষ্টির কারণে ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আজ ক্ষতির সম্মুখীন। এলাকার শত শত কৃষক আজ পথে বসতে চলেছে কারেন্ট পোকার আক্রমণে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণে এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণ জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা জানান, আর কিছুদিনের মধ্যেই ধান কাটা শুরু হবে। এমন অবস্থায় কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকা দমনে একাধিকবার কীটনাশক প্রয়োগ করেও তেমন ফল মিলছে না। প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুইবার কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে।
আক্রান্ত ধান গাছের গোড়ায় খুব ছোট আকৃতির এই পোকা দেখা যায়। দ্রুত ধানের ক্ষতি করে কারেন্ট পোকা। ইখড়ি দক্ষিন পাড়া এলাকায় সওয়ায় আলী শেখ বলেন, এবার তিনি ৪ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন। কিন্তু হঠাৎ কারেন্ট পোকা দেখা দিয়েছে। দুইবার বিষ ও পাইরাজিন স্প্রে করেছেন। কিন্তু সেভাবে ফল মিলছে না বলে জানান তিনি। ইখড়ি পশ্চিমপাড়া এলাকার আমনচাষি আল-আমিন বলেন, এবার প্রথম থেকে ধানের অবস্থা ভালো ছিল। আশা ছিল খুব ভালো ফলন হবে। কিন্তু কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দেওয়ায় ফলন কমার আশংকা করছেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ধানের চারা রোপণের আগেই ব্যবস্থা নিলে কারেন্ট পোকার আক্রমণ রোধ করা সম্ভব। এর মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা রোপণ, আইলের মাঝে বিলি কেটে দেওয়া, ইউরিয়া সারের যথাযথ প্রয়োগ, আগাম ও প্রতিরোধে সক্ষম জাতের চারা রোপণের মতো ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শিউলি মজুমদার বলেন, উপজেলার সব এলাকায় ঘুরে ধানে পোকার আক্রমনের ব্যপারে আমরা কৃষকদের সচেতন করেছি। ফলন বৃদ্ধির ব্যপারে পরামর্শ প্রদানসহ লিফলেট দিয়েছি। এবারে কিছু জমিতে কারেন্ট পোকার আক্রমন হলেও অন্যবারের চেয়ে ভালো ফলন হয়েছে।
খুলনা গেজেট/জেএম
The post তেরখাদায় আমন ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.