বরগুনা প্রতিনিধি:

বরগুনা: বরগুনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মাহবুবুল আলম মান্নু ১৯৯৭ সালে বিয়ে করেন ডেনমার্কের কোপেন হেগেনের তরুণী রোমানা মারিয়া বসিকে। বিয়ে করে নিয়ে আসেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশে তিন বছর সংসার করার পর রোমানা ফিরে যান নিজ দেশে। এরপর তাদের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।  

যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও রোমানাকে ফিরে পাওয়ার আশা ছাড়েননি মান্নু, আর বিয়ে না করে ছিলেন অপেক্ষায়।  

দীর্ঘ ২৪ বছর অপেক্ষার পরে ফেসবুকের মাধ্যমে রোমানা মারিয়া আবার খুঁজে পান মান্নুকে। এরপরই তাদের ভালোবাসা পুনরায় পূর্ণতা পায়। তিনি আবার চলে আসেন বরগুনায়। 

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ডেনমার্ক থেকে ঢাকায় এসে বিকেল ৫টার দিকে মাহবুবুল আলম মান্নুর সঙ্গে বাসে করে বরগুনায় আসেন রোমানা। পরে সন্ধ্যায় মান্নুর পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে আবার তাদের বিয়ে হয়। 

জানা যায়, ১৯৯৭ সালে ডেনমার্কে প্রবাসজীবনের একপর্যায়ে রোমানার প্রেমে পড়েন বরগুনার তরুণ মান্নু। রোমানাকে বিয়ে করে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন তিনি। নতুন দেশে, নতুন সংস্কৃতিতে রোমানার সংসার ভালোই কাটছিল। কিন্তু ২০০০ সালে পারিবারিক কারণে রোমানাকে ফিরে যেতে হয় ডেনমার্কে। তখন মান্নুরও যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ভাগ্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নানা কারণে আর যাওয়া হয়নি তার। তিন বছর পর্যন্ত তারা যোগাযোগ রাখলেও শেষ পর্যন্ত রোমানা পরিবারের চাপে পড়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। মান্নুকে ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেন।  

অন্যদিকে মান্নু থেকেছেন একা। পরিবার ও পরিচিতদের শত অনুরোধেও আর বিয়ে করেননি তিনি। তার চোখে ছিল শুধু রোমানার জন্য অপেক্ষা। তিনি বিশ্বাস রেখেছিলেন, একদিন না একদিন ফিরে আসবে তার ভালোবাসা। রোমানার দ্বিতীয় সংসারও সুখকর হয়নি। মন খারাপের সেই জীবনে রোমানা যখন ভেঙে পড়েন, তখন বারবার মনে পড়ে হারানো স্বামী মান্নুর কথা। অবশেষে বছর কয়েক আগে ডিভোর্স দেন সেই দ্বিতীয় স্বামীকেও। তারপর থেকেই শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। একপর্যায়ে ফেসবুকে গত জানুয়ারি মাস থেকে নতুন করে আলাপ শুরু হয় মান্নু-রোমানার। শেষমেশ ২০২৫ সালের ১০ এপ্রিল বিকেলে রোমানা পা রাখেন বাংলাদেশের মাটিতে। সোজা বাসে করে বরগুনা এসে পৌঁছান প্রিয় মানুষ মান্নুর কাছে। সন্ধ্যায় পরিবারের সামনে আবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। 

মান্নু বলেন, তাকে জোর করেই এক সময় পাঠিয়েছিলাম। আমি জানতাম না আর কখন যেতে পারব। পরিবারের চাপে রোমানা আমাকে ডিভোর্স দেয়। কিন্তু আমি কখনো তাকে ভুলতে পারিনি। সে এক সময় ফিরে আসবে ভেবেছি, আর সেই আশায় একাই থেকেছি। অবশেষে সে ফিরেছে। এবার আর হারাতে চাই না। ভালোবাসা হারিয়ে যেতে পারে, ছেঁড়া পাতার মতো উড়ে যেতে পারে সময়ের ঝড়ে। কিন্তু যদি মন থেকে ভালোবাসা হয়, তবে একদিন সেই পাতা ঠিকানায় ফিরে আসে প্রেমের বাতাসে ভেসে।  

তিনি বলেন, বিয়ের কিছুদিন পর ২০০০ সালে এক রকম বাধ্য হয়েই রোমানাকে ডেনমার্কে পাঠিয়ে দিই। তখন আমারও যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু নানা জটিলতায় আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছিলাম না, কবে যেতে পারব। তাই ওর বাবা-মাকে সিদ্ধান্ত নিতে বলি। রোমানা তিন বছর পর্যন্ত আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। কিন্তু শেষমেশ পরিবারের চাপেই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করতে বাধ্য হয় সে। আমি আর কোনো সম্পর্কে জড়াইনি। সব ভুলে থেকেছি, কিন্তু ওকে ভুলতে পারিনি। এরপর বছর সাত-আট আগে রোমানার সেই দ্বিতীয় সম্পর্কেও টানাপোড়েন শুরু হয়। মনের অমিল থেকে সে ডিভোর্স দেয়। তারপর থেকেই সে চেষ্টা করতে থাকে আবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার। অবশেষে গত জানুয়ারিতে ফেসবুকে আমার প্রোফাইল খুঁজে পেয়ে আবার যোগাযোগ করে। একপর্যায়ে সে নিজেই বলল আমাকে আবার জীবনসঙ্গী হিসেবে চায়। আমি দ্বিধা করিনি। এবার সে ভালোবাসার টানেই বাংলাদেশে ফিরে এসেছে।

The post ২৪ বছর পর বরগুনার মান্নুর জীবনে ফিরলেন ডেনমার্কের রোমানা appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.