
আপনি কাঁদছেন। গভীর রাতের নিরবতায়, কিংবা দিনের আলোতে মুখ লুকিয়ে। কারও জন্য, যাকে আপনি চোখে হারাতেন, যার একটুখানি উপস্থিতিই ছিল আপনার জীবনের আলো। আপনি তাঁর ভুল গুলো চোখ বন্ধ করে মেনে নিয়েছেন, প্রতিটি ব্যবধানের মাঝখানে নিজেকে দায়ী করে দারুণভাবে ভেঙে পড়েছেন। কারণ আপনি ভালোবেসে ছিলেন, নিঃস্বার্থভাবে, সমস্তটা দিয়ে। কিন্তু ঠিক তখনই, যাঁর জন্য আপনি নিঃশব্দে ভেঙে পড়েছেন, তিনি হয়তো কারও সামনে মুচকি হেসে বলছেন, “ও তো এমনই ছিল!” আপনার আবেগ, আপনার বিশ্বাস, আপনার অশ্রু—সব কিছুই তখন হয়ে দাঁড়ায় তার হাসির খোরাক। সে আপনার যন্ত্রণার গল্প শোনায়, যেন সেটি কোনও নাটক, কিংবা বিনোদনের বিষয়
। এই কি তবে সম্পর্ক? এই কি সেই মানুষ, যার জন্য আপনি সবকিছু ছাড়তে প্রস্তুত ছিলেন? আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি, যেখানে কান্না হয়ে উঠছে কৌতুকের বিষয়, ভালোবাসা হয়ে উঠছে খেলার বস্তু। যার প্রতি আপনি নিঃশর্ত ছিলেন, সে-ই আপনাকে অপমানিত করার গল্প সাজিয়ে বলছে অন্যের কাছে। এবং ভয়ংকর বিষয় হলো, এই কণ্ঠস্বর গুলোর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কেন আমরা এতটা হীনমন্য, এতটা নির্দয় হয়ে উঠছি? ভালোবাসা যেখানে ছিল আশ্রয়, সেখানে এখন বসতি গড়েছে প্রতারণা। সম্পর্কগুলো একতরফা না হলেও, অনুভূতিগুলো একতরফা হয়েই যাচ্ছে। একপক্ষ বোঝে, আরেকপক্ষ ব্যঙ্গ করে।
এটা কি কোনো ব্যক্তিগত ব্যর্থতা? না, এটা একেবারে সামাজিক ব্যর্থতা। আমরা হারিয়ে ফেলছি সহানুভূতি, লজ্জা আর সম্মানবোধ। কে কাকে কতটা ছোট করে বলতে পারে, এটাই যেন সম্পর্কের নতুন সংজ্ঞা হয়ে উঠেছে। এই অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে এখনই দাঁড়াতে হবে। নিজেকে ছোট মনে করবেন না, যদি আপনি কাঁদেন। অনুভব করতে পারা দুর্বলতা নয়, বরং তা-ই মানবিকতার সবচেয়ে বড় চিহ্ন। যে আপনার গল্প বলে হাসে, সে আপনার অনুভব বোঝেনি, এবং সে সেই অনুভবের যোগ্যও ছিল না। এই সমাজে মানবিক সম্পর্ক বাঁচাতে হলে, প্রথমে মুখোশ খুলে ফেলতে হবে তাদের—যারা কষ্টের গল্পকে হাসির রসদ বানায়। সম্পর্ক হোক সহানুভূতির, চোখের জল হোক সম্মানের, আর ভালোবাসা হোক দায়িত্বের। কারণ, সত্যিকারের সম্পর্ক কখনোই কাউকে ভাঙে না, তাকে গড়ে তোলে।
The post কান্নার গল্পে যারা হাসে, তাদের মুখোশ ফাঁস করতেই হবে appeared first on দৈনিক ময়মনসিংহের খবর.