
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) আবাহনী–মোহামেডান ম্যাচে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়ানোয় এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তাওহিদ হৃদয়। তার এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আপিল করেছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। সে নিষেধাজ্ঞা থেকে তো মুক্তি মেলেইনি, উল্টো আরও ৩ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন মোহামেডান অধিনায়ক।
চলতি ডিপিএলে মোহামেডানের নেতৃত্ব সামলাচ্ছিলেন তামিম ইকবাল। এই বাঁহাতি ব্যাটার ডিপিএলে খেলার সময়ই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এর ফলে হৃদয়কে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। শনিবার (১২ এপ্রিল) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ হয়ে মেজাজ হারিয়ে বসেন এই তরুণ।
ম্যাচে আম্পায়ারের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার জেরে প্রাথমিকভাবে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন হৃদয়। সঙ্গে পেয়েছিলেন ৪ ডিমেরিট পয়েন্ট। কিন্তু ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র সমালোচনা এবং অশোভন ভাষা ব্যবহারের কারণে তার শাস্তির বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ ডিমেরিট পয়েন্টে। এখন তাঁর নিষেধাজ্ঞা হয়ে যাচ্ছে চার ম্যাচের।
মোহামেডানের ক্রিকেটারদের আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর ঘটনাটি আবাহনী ইনিংসের অষ্টম ওভার। পেসার ইবাদত হোসেনের বল আঘাত করে মোহাম্মদ মিঠুনের প্যাডে। সেই সময় আউটের জোরাল আবেদন করেন মোহামেডানের ক্রিকেটাররা। যদিও তাতে সাড়া দেননি অনফিল্ড আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। আম্পায়ারের নির্লিপ্তরায় হতাশ হন মোহামেডানের ক্রিকেটাররা।
সেই সময় আম্পায়ারের কাছে ছুঁটে আসেন মোহামেডান অধিনায়ক হৃদয়। অন্য ক্রিকেটাররাও ঘিরে ধরেন আম্পায়ারকে। এরপরেই আম্পায়ারের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন হৃদয়। দলটির ক্রিকেটারদের শান্ত করতে এগিয়ে আসেন লেগ আম্পায়ার হিসেবে থাকা শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। তবে মোহামেডানের খেলোয়াড়েরা তর্কে জড়ান তার সঙ্গেও।
হৃদয়কে তার সঙ্গে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। এরপর মোহামেডানের সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম এগিয়ে আসেন। এই আচরণে হৃদয়কে ম্যাচ শেষে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করে ৪ ডিমেরিট পয়েন্ট দেন ম্যাচ রেফারি নিয়ামুর রশিদ রাহুল। বিষয়টি সেখানেই থামেনি। ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমে হৃদয় ফের আম্পায়ারদের সমালোচনা করেন।
হৃদয় সৈকতের উদ্দেশে বলেন, তিনি আন্তর্জাতিক আম্পায়ার, আমরাও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। হৃদয় এও হুমকি দেন, ‘ঘটনা যদি অন্যদিকে যায়, আমি মুখ খুলব ইনশা আল্লাহ।’ আইসিসির আচরণবিধি অনুযায়ী, ম্যাচ-পরবর্তী এমন মন্তব্য লেভেল ২-এর ২.৮ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে রেফারির দ্বিতীয় দফা রিপোর্ট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সে নিয়ম মেনেই ম্যাচ রেফারি নিয়ামুর রশিদ তাঁর দ্বিতীয় প্রতিবেদনে হৃদয়ের ম্যাচ-পরবর্তী মন্তব্যকে ‘অশোভন, অশালীন এবং আম্পায়ারের প্রতি অবমাননাকর’ হিসেবে উল্লেখ করে আরও ৪ ডিমেরিট পয়েন্ট দেন।
বিসিবির আচরণবিধি অনুযায়ী, ম্যাচ শেষে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে মাঠের কোনো ঘটনায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে ডিমেরিট পয়েন্ট ও অর্থ জরিমানা করতে পারেন ম্যাচ রেফারি। হৃদয়ের ক্ষেত্রে সেই বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ডিমেরিট সংখ্যা দাঁড়ায় ৮, ফলে নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে চার ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে বিসিবির আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারি কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার মিঠু বলেন, ‘তাওহীদ হৃদয়ের এমন আচরণ অত্যন্ত হতাশাজনক। তিনি জাতীয় দলের খেলোয়াড়, তার কাছ থেকে শৃঙ্খলাপূর্ণ আচরণ প্রত্যাশিত। আইসিসি প্যানেল ও এলিট প্যানেলের আম্পায়ারদের সঙ্গে এমন অসংলগ্ন আচরণ আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। ভবিষ্যতে যেন কেউ এমন আচরণ না করে, দৃষ্টান্ত তৈরি করতে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে সব আইন মেনেই দেওয়া হয়েছে।’
The post এবার বড় শাস্তি পেলেন তাওহিদ হৃদয় appeared first on Bangladesher Khela.