নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার গন্ডাবেড় গ্রামে দেখা দিয়েছে এক ভয়াবহ ও অশনি সংকেত—যেখানে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও আইনের শাসন কার্যত অচল, আর শাসন চালাচ্ছে একটি প্রভাবশালী ‘সিন্ডিকেট’। সরকারি প্রশাসনের চোখের সামনে, একটি নিরীহ গ্রাম হয়ে উঠেছে অনিয়ম, দখল ও সন্ত্রাসের পরীক্ষাগার। এখানে আইন প্রয়োগ হয় না প্রশাসনের হাতে, হয় ‘ঘুষে কেনা রায়ের’ মাধ্যমে; আর ‘আইনে গেলে হবে না’—এই ভয়ঙ্কর বাক্যটি হয়ে উঠেছে গণমানুষের গলার ফাঁস।
বিচার নয়, চলে দর কষাকষিঃ গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, পারিবারিক বিরোধ থেকে জমি সংক্রান্ত বিরোধ,এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব নিয়েও এখন প্রথমে হাজির হয় এই চক্র। তাদের কাছে গেলে শোনা যায় সেই চিরচেনা জবাব—“আইনে গেলে হবে না, আমরা দেখছি।” অর্থাৎ, আইন নয়, রায় নির্ধারিত হয় ‘কে কত হাদিয়া দিতে পারে’ তার ওপর। কেউ এর বাইরে গিয়ে প্রতিবাদ করলেই, তাকে এবং তার পরিবারকে একঘরে করে সামাজিক ভাবে বয়কট করা হয়। ধর্মের নামে নদী দখল? সবচেয়ে উদ্বেগ জনক ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি, যখন সরকার-স্বীকৃত কার্ডধারী জেলেদের নদী থেকে তাড়িয়ে দেয় এই চক্র। জেলেরা নিয়ম মাফিক মাছ ধরছিলেন, কিন্তু সিন্ডিকেট দাবি করে বসে, তারা মসজিদের নামে নদী লিজ নিয়েছে। অথচ উপজেলা প্রশাসনের লিজ রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যায়, এমন কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অবৈধ উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু তার পরদিনই বহিরাগত ভাড়াটে লোক এনে সিন্ডিকেট সদস্যরা সেই নিরীহ জেলেদের নৌকা ও জাল ভাঙচুর করে এবং পুনরায় নদী থেকে তাড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনা প্রশাসনের ক্ষমতা ও নিষ্ক্রিয়তাকে বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। সাংবাদিক নিগৃহীত, প্রশাসন নীরব! এই ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া স্থানীয় সাংবাদিকরাও এই চক্রের লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন।কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি,নেওয়া হয়নি কোনো আইনি:পদক্ষেপ। স্থানীয়দের দাবি, চক্রটি প্রকাশ্যে রাজনৈতিক ভাবে নিরপেক্ষ বলে দাবি করলেও বাস্তবে ক্ষমতাসীন দলের ছায়াতলে থেকেই প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে। প্রশাসন চুপ, জনপ্রতিনিধিরা নীরব—এমন অবস্থায় গ্রামের সাধারণ মানুষ চরম অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। প্রশ্ন গুলো এখন আর কেবল একটি গ্রামের নয়ঃ এই ঘটনার পর একটি মৌলিক প্রশ্ন সামনে এসেছে—সিন্ডিকেট কি রাষ্ট্রের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে? যখন সরকারি কর্মকর্তার আদেশ মানা হয় না, পেশাজীবীদের রুটি-রুজি কেড়ে নেওয়া হয়, ধর্মের অপব্যবহার করা হয়, তখন তা কেবল স্থানীয় সমস্যা নয়—এটি এক জাতীয় সংকটের পূর্বাভাস। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অপরাধ চক্রকে দ্রুত আইনের আওতায় না আনলে ভবিষ্যতে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। প্রশাসন হয়ত তখন আর কিছুই করতে পারবে না। প্রতিবাদই এখন সময়ের দাবিঃ একজন সাহসী স্থানীয় নাগরিক বলেন, “ভয় নয়, প্রতিবাদই মুক্তির পথ—সিন্ডিকেট নয়, রাষ্ট্র ও আইন হোক সর্বোচ্চ ক্ষমতা।” এই ঘটনায় জাতীয় প্রশাসন, মানবাধিকার সংস্থা, জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যমের সক্রিয় হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। কারণ যদি এখনই প্রতিবাদ না ওঠে, তাহলে বাংলার আরও শত শত গ্রাম এই দানবীয় শাসনের অধীন চলে যাবে—আর স্বাধীনতার গল্প রয়ে যাবে শুধু পাঠ্য বইয়ে।
The post দূর্গাপুরে দখল,ভয়,ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে জনগণের আর্তনাদ,প্রশাসনের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন! appeared first on দৈনিক ময়মনসিংহের খবর.