দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দেশের অন্যতম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনভিপ্রেত ঘটনার আদ্যপান্ত তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ও কুয়েট এলামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড.আবু জাকির মোর্শেদ।
১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংগঠিত ঘটনার তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। দীর্ঘ ওই স্ট্যাটাসে কুয়েটের প্রতি তার অকৃত্তিম ভালোবাসা, রাজনীতিমুক্ত কুয়েট ক্যাম্পাস, ছাত্রদের উপর নৃশংস হামলা, ঘটনার দিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আসতে বিলম্ব, ভিসি’কে শারীরিক এবং মানসিকভাবে লাঞ্ছিত, শিক্ষক লাঞ্ছনার সাথে জড়িতদের বিচার, শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নতুন ভিসি’র চ্যালেঞ্জ, বিচারহীনতার সংস্কৃত অপরাধীকে পুনরায় অপরাধে উৎসাহিত করা, কুয়েটের রেপুটেশন ক্ষতিগ্রস্তসহ বেশ কিছু বিষয় সম্পর্কে তার মতামত তুলে ধরেছেন ওই স্ট্যাটাসে।
নীচে স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
“স্মরণকালের ভয়াবহ রক্তক্ষরণ হয়েছে – কারো শরীরে, কারো হৃদয়ে।
কুয়েটের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরছি।
১/ কুয়েটে যারা রাজনীতি প্রবেশ করাতে চেয়েছে বা চাচ্ছে (প্রকাশ্যে হোক বা ছদ্মবেশে), তাদের বিচার হতে হবে।
২/ “রাজনীতিমুক্ত কুয়েট ক্যাম্পাস” প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোনরকম মোনাফেকি করা যাবে না। মহান সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই মুনাফিকদেরকে ইহকাল এবং পরকালে লাঞ্ছিত করবেন।
৩/ কুয়েট ছাত্রদের উপরে নৃশংস হামলা করে রক্তাক্ত করার মত যারা দুঃসাহস দেখিয়েছে, তারা যেই দলেরই হোক না কেন তাদের বিচার হতে হবে।
৪/ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাসময়ে কেন কুয়েটে আসেনি, বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে তার প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে হবে। এক্ষেত্রে যে দোষী প্রমাণিত হবে তাকে বাংলাদেশের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় আইনের আওতায় নিয়ে বিচার করতে হবে।
৫/ ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ব্যবহার করে এক বা একাধিক গোষ্ঠী ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করার মত অপরাধ করেছে, যা ইতিপূর্বে বাংলাদেশের ইতিহাসে কোথাও হয়েছে কিনা আমার জানা নাই। এই ঘৃণ্য অপরাধের সাথে যারা জড়িত, তাদের বিচার হতে হবে।
৬/ ১৮ই ফেব্রুয়ারির শিক্ষার্থীদের উপর হামলা এবং সংঘর্ষের সময় থেকে শুরু করে অদ্যাবধি কতিপয় শিক্ষার্থীদের দ্বারা শিক্ষকবৃন্দ শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন, যা ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ককে একদম তলানিতে নিয়ে গিয়েছে। যারা সরাসরি শিক্ষক লাঞ্ছনার সাথে জড়িত, তাদের বিচার হতে হবে।
৭/ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ভাইস-চ্যান্সেলরকে অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। সেই সিদ্ধান্তের দ্বারা সংকটের সাময়িক সমাধান হয়েছে বলে হয়তোবা সরকার মনে করছে। কিন্তু, নতুন ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে যাকে নিয়োগ প্রদান করা হবে, উপরিউক্ত চাপগুলো মাথায় নিয়েই তাকে যোগদান করতে হবে। সকল অংশীদারকে সন্তুষ্ট করে ক্যাম্পাসে দ্রুত শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে নিয়ে আসা তার জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ।
৮/ বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাধীকে পুনরায় বা অন্য কাউকে অপরাধ করতে উৎসাহিত করে এবং নতুন অপরাধীর সৃষ্টি হয়। অপরাধের ধরণ/মাত্রা অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৯/ অনেকেই কুয়েটের সংকটকে সত্য/অর্ধসত্য/মিথ্যা মিশিয়ে বা অতিরঞ্জিত করে অথবা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে নিজেদের জনসমর্থনের জন্য ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে। এর দ্বারা জনসমাজে কুয়েটের রেপুটেশন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক ভর্তি কার্যক্রমে ভর্তি বাতিলের হিড়িক – তার একটি বড় উদাহরণ। যদি মনে করি যে কুয়েট আমার প্রাণের প্রতিষ্ঠান, তাহলে এই অপতৎপরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
আমি ১৮ ফেব্রুয়ারি হামলা-সংঘর্ষের সময় কুয়েট কনফারেন্স রুম হয়ে বিকাল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা অবধি কুয়েট শহীদ মিনার – কুয়েট হল – মেইন গেটে ছাত্রদের সঙ্গে ছিলাম; সন্ধ্যার পর থেকে সারারাত কুয়েট মেডিকেল সেন্টারে ছিলাম। ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত একাডেমিক এরিয়াতে ছিলাম। অনেক ঘটনার আমি প্রত্যক্ষদর্শী। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে সিন্ডিকেট কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির একজন সদস্য হিসেবে কাজ করেছি। আমি কুয়েটের একজন সাধারণ শিক্ষক। জীবনে কখনো রাজনীতি করিনি, বুঝিও না। আমি কোন পক্ষের নই। আমার একটাই পক্ষ – কুয়েট। সকল সংকট, বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে আবার জেগে উঠুক প্রাণের কুয়েট – এটাই ঐকান্তিক চাওয়া”
খুলনা গেজেট/এনএম
The post সকল সংকট, বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে জেগে উঠুক আবার প্রাণের কুয়েট: ড. আবু জাকির মোর্শেদ appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.