8:33 pm, Wednesday, 7 May 2025
Aniversary Banner Desktop

কানাডার অস্তিত্ব রক্ষায় ট্রুডোর দলের ওপরই ভোটারদের ভরসা, ট্রাম্পকে শুভকামনা

কানাডায় জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টিকে সরিয়ে রক্ষণশীলরা ক্ষমতায় আসবে এ ব্যাপারে পাঁচ মাস আগেও কারও সন্দেহ ছিল না। ট্রুডো জনপ্রিয়তা তখন তলানিতে। হু হু করে বাড়িভাড়া বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় সামলাতেই তখন জেরবার সাধারণ নাগরিকদের। এর জন্য সম্পূর্ণ দোষ গিয়ে পড়ে সরকারের অর্থনৈতিক ও অভিবাসননীতির ওপর। সেসব এখন ইতিহাস।

জনগণের চাপে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন ট্রুডো। ঘোষণা আসে আগাম নির্বাচনের। মধ্যবর্তী দিনগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন সাবেক ব্যাংকের চাকরি থেকে রাজনীতিতে আসা মার্ক কার্নি।

কানাডায় ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল আসতে আরও হয়ত খানিকটা সময় লাগবে। তবে এরই মধ্যে মার্ক কার্নির দল লিবারেল পার্টির সদরদপ্তরে উৎসব শুরু হয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিবিসি জানিয়েছে, লিবারেলরা আবারও অটোয়ায় সরকার গঠন করতে চলেছে।

তবে, ৩৪৩ আসনের হাউস অব কমন্সে লিবারেলরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, নাকি জোট সরকার গঠন করতে হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে মার্ক কার্নিই যে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, তা অনেকটা নিশ্চিত।

কানাডায় লিবারেলদের এই জয়ের পেছনে কুবেক (Québec) প্রদেশে ভোটারদের মনোভাব বদলে যাওয়াকে বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জনসংখ্যার দিক থেকে অন্টারিওর পরই এই প্রদেশের অবস্থান। এখানে আসন ৭৮টি। ঐতিহাসিকভাবে এই প্রদেশে ফরাসী জাতীয়তাবাদী দল ব্লক কুবেকোয়া, পার্টি কুবেকোয়া ও কুবেকোয়া সলিডায়ারের মতো দলগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পেয়েছে। এর পেছনে আছে কুবেকের স্বাধীনতা আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস। এই প্রশ্নে ১৯৯৫ সালে গণভোট আয়োজন হয়েছিল এখানে। সেবার এক শতাংশের ব্যবধানে স্বাধীনতার প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষে ভোট পড়ে যথাক্রমে ৪৯ দশমিক ৪২ শতাংশ ও ৫০ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

এবারের নির্বাচনে কুবেকের স্বাধীনতার প্রশ্নটি কিছু ভোটারের কাছে আপাতত গৌণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কানাডার ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ এবং কটু মন্তব্য কুইবেকের ভোটারদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এখানকার ভোটাররা মনে করছেন, অটোয়া নয় বরং ওয়াশিংটন ডিসিই এখন তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। ওয়াশিংটনকে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে দরকার শক্তিশালী ফেডারেল সরকার। আর এই মুহূর্তে কেবল লিবারেল পার্টির পক্ষেই তা করা সম্ভব। তাই ভেদভাব ভুলে কুবেকের বড় একটি অংশের ভোট এবার লিবারেলদের ঝুলিতে গেছে।

কুবেক সিটির ৭০ বছর বয়সী সুজান দ্যুমোঁ নিজেকে স্বাধীনতাপন্থি হিসেবে পরিচয় দেন। বিবিসিকে বলেন, ভোটের ব্যাপারে তিনি আবেগ থেকে নয় বরং বাস্তবতা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্তরে স্বাধীন কুবেকের স্বপ্ন থাকলেও, তার মতে এখন ওয়াশিংটনকে মোকাবিলা করতে পারে এমন একটি শক্তিশালী সরকার দরকার।

তিনি মনে করেন শুধু কুবেকে সক্রিয় আঞ্চলিক দল ব্লক কুবেকোয়া এই ভূমিকা পালন করতে পারবে না। তার কাছে কনজারভেটিভদের সমর্থন করা ‘অচিন্তনীয়’ ব্যাপার।

মন্ট্রিয়লের বাসিন্দা লুই প্লুফ মনে করেন ব্লক কুবেকোয়া তাদের রাজ্যের স্বার্থ রক্ষায় অবিচল হলেও কেন্দ্রের ক্ষমতায় কারা আসছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি চান অটোয়ায় শক্তিশালী ম্যান্ডেটসহ একটি সরকার আসুক। লিবারেল পার্টির ব্যাপারে কিছু সংশয় থাকা সত্ত্বেও, তিনি মার্ক কার্নিকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন।

শুধু কুবেকেই নয়, বিশ্লেষকরা বলছেন, কানাডাজুড়েই জাতীয়তাবাদের পালে হাওয়া লেগেছে। কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক এমিলি ফস্টার বলেন, কুবেকের বাসিন্দাদের যদি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে একটি বেছে নিতে হয় তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ার চেয়ে কানাডাকে বেশি পছন্দ করবেন। কুবেকের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলার উপযুক্ত সময় এটি নয়। স্পষ্টভাবে একটি জাতীয় সংকট এবং বিরোধিতার কেন্দ্রবিন্দু অটোয়া নয়, বরং ওয়াশিংটন।

ট্রাম্প: লিবারেলদের জন্য শাপে বর
ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর কানাডায় জনপ্রিয়তা বেড়েছিল কনজারভেটিভ পার্টির। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে যায় কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর। কানাডার সার্বভৌমত্ব নিয়েও হুমকি দিতে ছাড়েননি ট্রাম্প। আয়তনে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটিকে ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোর ইচ্ছার কথা জানানোর পাশাপাশি জাস্টিন ট্রুডোকে ‘গভর্নর’ বলে সম্বোধন করতে শুরু করেন তিনি। আর এতেই হাওয়া বদলে যায় কানাডার রাজনীতিতে। ডুবতে বসা লিবারেল পার্টি ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়। ভোটাররাও জানিয়ে দেন, দক্ষিণের বড় প্রতিবেশীদের দিক থেকে যত চাপই আসুক তারা সব সয়ে নেবেন— কিন্তু সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবেন না।

নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, আসন সংখ্যা এবং মোট ভোটে এগিয়ে আছে লিবারেলরা। তারা এরই মধ্যে ১৫৩টি আসনে জয় নিশ্চিত করেছে এবং আরও ১৫টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। মোট ভোটের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৩.৫ শতাংশ পেয়েছেন তাদের প্রার্থীরা।

প্রধান বিরোধী দল হতে চলেছে কনজারভেটিভ পার্টি। দলটি ১৩৩টি আসনে জয়ী হয়েছে এবং আরও ১১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। তারা পেয়েছে ৪১.৪ শতাংশ ভোট।

অন্যদিকে কুবেক প্রদেশের ব্লক কুবেকোয়া ২১টি আসনে জয়লাভ করেছে। দলটি আরও দুইটি আসনে এগিয়ে রয়েছে। নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে পাঁচ জনের বিজয়ী হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে সিবিসি। আরও দুইটি আসনে এগিয়ে আছে এই দলটি।

যেভাবে জয়ের ধারায় ফিরে এল লিবারেল পার্টি
কানাডার আইন অনুযায়ী এই নির্বচন হওয়ার কথা ছিল আগামী অক্টোবরে। কিন্তু আগেই পার্লামেন্টে রাজনৈতিক মিত্রদের কাছে থেকে সমর্থন হারাতে থাকেন জাস্টিন ট্রুডো। প্রথমে সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেয় জগমিত সিংয়ের নেতৃত্বাধীন মধ্য-বামপন্থি নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি। এর পর গত বছরের ডিসেম্বরে হঠাৎ করে অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগ করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে লিবারেল পার্টির ২১ এমপি ট্রুডোকে পদত্যাগ করতে প্রকাশ্যে আহ্বান জানান। এতেই তার রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়।

গত ৬ জানুয়ারি ট্রুডো ঘোষণা করেন যে, দলে উত্তরসূরি নির্বাচন হওয়ার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাবেন। দলের ভেতর নির্বাচনে ব্যাংক অব কানাডার প্রাক্তন গভর্নর মার্ক কার্নি জয়লাভ করেন। গত মাসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন কার্নি। তবে ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অন্য দলের সমর্থনের ওপর মুখাপেক্ষী থাকতে হয় তাকে। কারণ কানাডায় এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৭০টি আসন ছিল না তার দলের। সেই আশায় আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন কার্নি।

কানাডায় এমন এক সময়ে নির্বাচন হচ্ছে যখন লিবারেলরা বিশ্বজুড়ে ক্ষমতা হারাচ্ছে। সর্বশেষ ফ্রান্স ও জার্মানির পর আমেরিকাতেও অভিবাসনবিরোধীরা হয় জয়ী হয়েছে নয়ত পার্লামেন্টে শক্তি বাড়িয়েছে। কিন্তু কানাডার নির্বাচন সেই ধারা ভেঙে দিয়েছে। ট্রুডো পদত্যাগ করার পর লিবারেল পার্টি রাজনীতির বাইরের এক ব্যক্তিকে নেতা হিসেবে বেছে নেয়। কার্নি তার নির্বাচনী প্রচারণায় বার বার একটি কথাই বলেন যে, ট্রাম্প শুধু কানাডার অর্থনীতির জন্যই হুমকি নন, বরং দেশটির সার্বভৌমত্বের জন্যও বিপজ্জনক।

ট্রাম্প যদিও কার্নিকে ট্রুডোর মতো অপছন্দ করেন না বলে ধারণা করা হয়, তবুও আমেরিকা ও কানাডার মধ্যে সম্পর্কের ফাটল সহসাই মিলিয়ে যাবে না। ইতোমধ্যে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, কানাডা এখন নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে আমেরিকার চেয়ে ইউরোপের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। নিশ্চিতভাবেই এটা ট্রাম্পের বিরক্তির কারণ হবে।

কানাডার অর্থনীতি আমেরিকার বাজারে রপ্তানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত তেল, গাড়ি ও পেট্রোলিয়াম পণ্য। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে যন্ত্রপাতি, কাঠ, অ্যালুমিনিয়াম ও কৃষি পণ্য। ২০২৪ সালে কানাডা যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৪৩৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে; যা তাদের মোট রপ্তানির ৭৫ দশমিক ৯ শতাংশ।

তাই যদি একটি পুরোদস্তুর বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়, তবে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে কানাডা। ভোটারদের কাছে কার্নির প্রতিশ্রুতি— কানাডাকে অর্থনৈতিক মন্দা থেকে রক্ষা করতে তিনি তার ক্ষমতার মধ্যে থাকা সবকিছু করবেন। আর, এর জন্য তিনি ইউরোপের মতো নত থাকার নীতি গ্রহণ করবেন নাকি চীনের মতো পাল্টা শুল্ক আরোপ করে জবাব দেবেন তা জানতে হয়ত আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

খুলনা গেজেট/এএজে

The post কানাডার অস্তিত্ব রক্ষায় ট্রুডোর দলের ওপরই ভোটারদের ভরসা, ট্রাম্পকে শুভকামনা appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

ndax login

https://ndaxlogi.com

latitude login

https://latitude-login.com

phantom wallet

https://phantomwallet-us.com

phantom

atomic wallet

atomic

https://atomikwallet.org

jupiter swap

jupiter

https://jupiter-swap.com

https://images.google.com/url?q=https%3A%2F%2Fsecuxwallet.us%2F

secux wallet

secux wallet

secux wallet connect

secux

https://secuxwallet.com

jaxx wallet

https://jaxxwallet.live

jaxxliberty.us

gem visa login

jaxx wallet

jaxx wallet download

https://jaxxwallet.us

toobit-exchange.com Toobit Exchange | The Toobit™ (Official Site)

secuxwallet.com SecuX Wallet - Secure Crypto Hardware Wallet

jaxxliberty.us Jaxx Liberty Wallet | Official Site

Atomic Wallet Download

Atomic

Aerodrome Finance

Wordpad Download

https://wordpad-download.com

কানাডার অস্তিত্ব রক্ষায় ট্রুডোর দলের ওপরই ভোটারদের ভরসা, ট্রাম্পকে শুভকামনা

Update Time : 07:11:16 pm, Tuesday, 29 April 2025

কানাডায় জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টিকে সরিয়ে রক্ষণশীলরা ক্ষমতায় আসবে এ ব্যাপারে পাঁচ মাস আগেও কারও সন্দেহ ছিল না। ট্রুডো জনপ্রিয়তা তখন তলানিতে। হু হু করে বাড়িভাড়া বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় সামলাতেই তখন জেরবার সাধারণ নাগরিকদের। এর জন্য সম্পূর্ণ দোষ গিয়ে পড়ে সরকারের অর্থনৈতিক ও অভিবাসননীতির ওপর। সেসব এখন ইতিহাস।

জনগণের চাপে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন ট্রুডো। ঘোষণা আসে আগাম নির্বাচনের। মধ্যবর্তী দিনগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন সাবেক ব্যাংকের চাকরি থেকে রাজনীতিতে আসা মার্ক কার্নি।

কানাডায় ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল আসতে আরও হয়ত খানিকটা সময় লাগবে। তবে এরই মধ্যে মার্ক কার্নির দল লিবারেল পার্টির সদরদপ্তরে উৎসব শুরু হয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিবিসি জানিয়েছে, লিবারেলরা আবারও অটোয়ায় সরকার গঠন করতে চলেছে।

তবে, ৩৪৩ আসনের হাউস অব কমন্সে লিবারেলরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, নাকি জোট সরকার গঠন করতে হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে মার্ক কার্নিই যে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, তা অনেকটা নিশ্চিত।

কানাডায় লিবারেলদের এই জয়ের পেছনে কুবেক (Québec) প্রদেশে ভোটারদের মনোভাব বদলে যাওয়াকে বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জনসংখ্যার দিক থেকে অন্টারিওর পরই এই প্রদেশের অবস্থান। এখানে আসন ৭৮টি। ঐতিহাসিকভাবে এই প্রদেশে ফরাসী জাতীয়তাবাদী দল ব্লক কুবেকোয়া, পার্টি কুবেকোয়া ও কুবেকোয়া সলিডায়ারের মতো দলগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পেয়েছে। এর পেছনে আছে কুবেকের স্বাধীনতা আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস। এই প্রশ্নে ১৯৯৫ সালে গণভোট আয়োজন হয়েছিল এখানে। সেবার এক শতাংশের ব্যবধানে স্বাধীনতার প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষে ভোট পড়ে যথাক্রমে ৪৯ দশমিক ৪২ শতাংশ ও ৫০ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

এবারের নির্বাচনে কুবেকের স্বাধীনতার প্রশ্নটি কিছু ভোটারের কাছে আপাতত গৌণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কানাডার ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ এবং কটু মন্তব্য কুইবেকের ভোটারদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এখানকার ভোটাররা মনে করছেন, অটোয়া নয় বরং ওয়াশিংটন ডিসিই এখন তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। ওয়াশিংটনকে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে দরকার শক্তিশালী ফেডারেল সরকার। আর এই মুহূর্তে কেবল লিবারেল পার্টির পক্ষেই তা করা সম্ভব। তাই ভেদভাব ভুলে কুবেকের বড় একটি অংশের ভোট এবার লিবারেলদের ঝুলিতে গেছে।

কুবেক সিটির ৭০ বছর বয়সী সুজান দ্যুমোঁ নিজেকে স্বাধীনতাপন্থি হিসেবে পরিচয় দেন। বিবিসিকে বলেন, ভোটের ব্যাপারে তিনি আবেগ থেকে নয় বরং বাস্তবতা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্তরে স্বাধীন কুবেকের স্বপ্ন থাকলেও, তার মতে এখন ওয়াশিংটনকে মোকাবিলা করতে পারে এমন একটি শক্তিশালী সরকার দরকার।

তিনি মনে করেন শুধু কুবেকে সক্রিয় আঞ্চলিক দল ব্লক কুবেকোয়া এই ভূমিকা পালন করতে পারবে না। তার কাছে কনজারভেটিভদের সমর্থন করা ‘অচিন্তনীয়’ ব্যাপার।

মন্ট্রিয়লের বাসিন্দা লুই প্লুফ মনে করেন ব্লক কুবেকোয়া তাদের রাজ্যের স্বার্থ রক্ষায় অবিচল হলেও কেন্দ্রের ক্ষমতায় কারা আসছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি চান অটোয়ায় শক্তিশালী ম্যান্ডেটসহ একটি সরকার আসুক। লিবারেল পার্টির ব্যাপারে কিছু সংশয় থাকা সত্ত্বেও, তিনি মার্ক কার্নিকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন।

শুধু কুবেকেই নয়, বিশ্লেষকরা বলছেন, কানাডাজুড়েই জাতীয়তাবাদের পালে হাওয়া লেগেছে। কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক এমিলি ফস্টার বলেন, কুবেকের বাসিন্দাদের যদি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে একটি বেছে নিতে হয় তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ার চেয়ে কানাডাকে বেশি পছন্দ করবেন। কুবেকের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলার উপযুক্ত সময় এটি নয়। স্পষ্টভাবে একটি জাতীয় সংকট এবং বিরোধিতার কেন্দ্রবিন্দু অটোয়া নয়, বরং ওয়াশিংটন।

ট্রাম্প: লিবারেলদের জন্য শাপে বর
ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর কানাডায় জনপ্রিয়তা বেড়েছিল কনজারভেটিভ পার্টির। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে যায় কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর। কানাডার সার্বভৌমত্ব নিয়েও হুমকি দিতে ছাড়েননি ট্রাম্প। আয়তনে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটিকে ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোর ইচ্ছার কথা জানানোর পাশাপাশি জাস্টিন ট্রুডোকে ‘গভর্নর’ বলে সম্বোধন করতে শুরু করেন তিনি। আর এতেই হাওয়া বদলে যায় কানাডার রাজনীতিতে। ডুবতে বসা লিবারেল পার্টি ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়। ভোটাররাও জানিয়ে দেন, দক্ষিণের বড় প্রতিবেশীদের দিক থেকে যত চাপই আসুক তারা সব সয়ে নেবেন— কিন্তু সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবেন না।

নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, আসন সংখ্যা এবং মোট ভোটে এগিয়ে আছে লিবারেলরা। তারা এরই মধ্যে ১৫৩টি আসনে জয় নিশ্চিত করেছে এবং আরও ১৫টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। মোট ভোটের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৩.৫ শতাংশ পেয়েছেন তাদের প্রার্থীরা।

প্রধান বিরোধী দল হতে চলেছে কনজারভেটিভ পার্টি। দলটি ১৩৩টি আসনে জয়ী হয়েছে এবং আরও ১১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। তারা পেয়েছে ৪১.৪ শতাংশ ভোট।

অন্যদিকে কুবেক প্রদেশের ব্লক কুবেকোয়া ২১টি আসনে জয়লাভ করেছে। দলটি আরও দুইটি আসনে এগিয়ে রয়েছে। নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে পাঁচ জনের বিজয়ী হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে সিবিসি। আরও দুইটি আসনে এগিয়ে আছে এই দলটি।

যেভাবে জয়ের ধারায় ফিরে এল লিবারেল পার্টি
কানাডার আইন অনুযায়ী এই নির্বচন হওয়ার কথা ছিল আগামী অক্টোবরে। কিন্তু আগেই পার্লামেন্টে রাজনৈতিক মিত্রদের কাছে থেকে সমর্থন হারাতে থাকেন জাস্টিন ট্রুডো। প্রথমে সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেয় জগমিত সিংয়ের নেতৃত্বাধীন মধ্য-বামপন্থি নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি। এর পর গত বছরের ডিসেম্বরে হঠাৎ করে অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগ করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে লিবারেল পার্টির ২১ এমপি ট্রুডোকে পদত্যাগ করতে প্রকাশ্যে আহ্বান জানান। এতেই তার রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়।

গত ৬ জানুয়ারি ট্রুডো ঘোষণা করেন যে, দলে উত্তরসূরি নির্বাচন হওয়ার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাবেন। দলের ভেতর নির্বাচনে ব্যাংক অব কানাডার প্রাক্তন গভর্নর মার্ক কার্নি জয়লাভ করেন। গত মাসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন কার্নি। তবে ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অন্য দলের সমর্থনের ওপর মুখাপেক্ষী থাকতে হয় তাকে। কারণ কানাডায় এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৭০টি আসন ছিল না তার দলের। সেই আশায় আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন কার্নি।

কানাডায় এমন এক সময়ে নির্বাচন হচ্ছে যখন লিবারেলরা বিশ্বজুড়ে ক্ষমতা হারাচ্ছে। সর্বশেষ ফ্রান্স ও জার্মানির পর আমেরিকাতেও অভিবাসনবিরোধীরা হয় জয়ী হয়েছে নয়ত পার্লামেন্টে শক্তি বাড়িয়েছে। কিন্তু কানাডার নির্বাচন সেই ধারা ভেঙে দিয়েছে। ট্রুডো পদত্যাগ করার পর লিবারেল পার্টি রাজনীতির বাইরের এক ব্যক্তিকে নেতা হিসেবে বেছে নেয়। কার্নি তার নির্বাচনী প্রচারণায় বার বার একটি কথাই বলেন যে, ট্রাম্প শুধু কানাডার অর্থনীতির জন্যই হুমকি নন, বরং দেশটির সার্বভৌমত্বের জন্যও বিপজ্জনক।

ট্রাম্প যদিও কার্নিকে ট্রুডোর মতো অপছন্দ করেন না বলে ধারণা করা হয়, তবুও আমেরিকা ও কানাডার মধ্যে সম্পর্কের ফাটল সহসাই মিলিয়ে যাবে না। ইতোমধ্যে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, কানাডা এখন নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে আমেরিকার চেয়ে ইউরোপের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। নিশ্চিতভাবেই এটা ট্রাম্পের বিরক্তির কারণ হবে।

কানাডার অর্থনীতি আমেরিকার বাজারে রপ্তানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত তেল, গাড়ি ও পেট্রোলিয়াম পণ্য। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে যন্ত্রপাতি, কাঠ, অ্যালুমিনিয়াম ও কৃষি পণ্য। ২০২৪ সালে কানাডা যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৪৩৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে; যা তাদের মোট রপ্তানির ৭৫ দশমিক ৯ শতাংশ।

তাই যদি একটি পুরোদস্তুর বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়, তবে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে কানাডা। ভোটারদের কাছে কার্নির প্রতিশ্রুতি— কানাডাকে অর্থনৈতিক মন্দা থেকে রক্ষা করতে তিনি তার ক্ষমতার মধ্যে থাকা সবকিছু করবেন। আর, এর জন্য তিনি ইউরোপের মতো নত থাকার নীতি গ্রহণ করবেন নাকি চীনের মতো পাল্টা শুল্ক আরোপ করে জবাব দেবেন তা জানতে হয়ত আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

খুলনা গেজেট/এএজে

The post কানাডার অস্তিত্ব রক্ষায় ট্রুডোর দলের ওপরই ভোটারদের ভরসা, ট্রাম্পকে শুভকামনা appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.