সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ। দ্বিতীয় টেস্টে দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত খুশি নন। সংবাদ সম্মেলনে এসে জানালেন, এই সিরিজটা বাংলাদেশ দলেরই জেতা উচিত ছিল।
প্রথম টেস্টে সিলেটে বাজে পারফরম্যান্স, দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়ের স্বস্তি—এই দুই ম্যাচের সারাংশ টেনে শান্ত বলেন, ‘না, আমি আসলে খুব বেশি খুশি না। দুই ম্যাচের কথা যদি বলেন, এর থেকে ভালো ক্রিকেট খেলা উচিত ছিল। সিরিজটা আমাদের জেতা উচিত ছিল। প্রথম ম্যাচে আমরা ভালো খেলিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে আমরা কামব্যাক করেছি।’
টেস্ট সিরিজের এই ফিরে আসার গল্পে ব্যাটে-বলে অন্যতম নায়ক ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। চট্টগ্রামে ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি, বল হাতে পাঁচ উইকেট।
তবে মিরাজকে উপরে ব্যাটিংয়ে দেখা যেতে পারে কি না—এমন প্রশ্নে শান্ত হাসলেন, আবার জানালেন বাস্তবতা, ‘আমাকে আগে বলবেন আরেকটু ওপরে বলতে কত ওপরে? (হাসি)। হয়ত ৪-৫ বুঝাচ্ছেন। ওর বোলিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। সে এটা জানেও। এটা নিয়ে সে সবচেয়ে বেশি কাজও করে। এমন দায়িত্ব নিয়ে ৪-৫ এ ব্যাটিংয়ে নামাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং, বিশেষ করে এই ফরম্যাটে।’
তবে অধিনায়ক মিরাজের ব্যাটিং রোল নিয়ে সন্তুষ্ট, ‘সে ৬-৭ এ ব্যাট করছে, খুব ভালো জায়গায় ব্যাট করছে, যা দলকে ভালো জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। ৪-৫ এ জাকের, মুশফিক ভাই, লিটন খেললে উনারা খেলেন। যারা খেলেন, তারাও তাদের দায়িত্ব পালন করছে। মিরাজের রোলে মিরাজ ভালো করছে। এমন করতে পারলে আমাদের দল আরও ভালো জায়গায় যাবে।’
এই সিরিজে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী? শান্তর জবাব স্পষ্ট—তাইজুল ইসলামের দারুণ প্রত্যাবর্তন, ‘আমার মনে হয় তাইজুল ভাই প্রথম ম্যাচে বোলিংয়ের পর এই ম্যাচে যেভাবে কামব্যাক করেছেন সেটা বড় প্রাপ্তি। ওপেনিং জুটি, সাদমানের ভালো একশো, বিজয়ের দলে ফিরে ব্যাটিং—যদিও বড় রান হয়নি, কিন্তু ব্যাটিং ভালো করেছে। ওপেনিংয়ে এই জায়গাটা অনেক ভালো লেগেছে। এখানে ধারাবাহিক হতে হবে।’
সাকিব আল হাসানের কামব্যাক ইনিংসেও মুগ্ধ অধিনায়ক, ‘খুব যে ভালো লেগেছে—সাকিবের ব্যাটিংটা আজকে অনেক ভালো লেগেছে। টেইলে অতীতে দেখেছি তাইজুল ভাই অনেক বল ফেইস করেছেন। আজকে সাকিবের ব্যাটিংটা প্রথম ম্যাচ হিসেবে দারুণ ছিল।’
স্পিনারদের ভূমিকা নিয়ে শান্ত বরাবরের মতোই আত্মবিশ্বাসী। বিশেষ করে সোহেল ইসলামের প্রশংসাও এসেছে, ‘অবশ্যই দারুণ খেলেছে আজকে। সোহেল স্যার যেভাবে সাহায্য করেন সবাইকে। বোলারদের পাশাপাশি ব্যাটারদেরও সাহায্য করে। খুবই পজিটিভ ভাইব ছিল। আমার কাছে মনে হয় স্পিনাররা ভালোই করেছে। সবসময় ভালো করে। আমি স্পিনারদের নিয়ে একদমই চিন্তিত না।’
শেষ দিকে ব্যাটিংয়ে লোয়ার অর্ডারের অবদানের দিকেও নজর দিয়েছেন শান্ত, ‘টেস্ট ম্যাচ জেতার জন্য আপনার ৫ জন জেনুইন বোলার লাগবেই। তারা এখন ১০ রান বা ৫০ বল ফেইস করতেও মনোযোগ দিচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে জাকের ৯৭ করেছিল, তার সঙ্গে টেইলও ছিল। এখন সবাই গুরুত্ব দিচ্ছে ব্যাটিংয়ে। আমি মনে করি খুবই জরুরি।’
তবে সবার রান পাওয়া শান্তকে তেমন স্বস্তি দেয়নি। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় স্কোরবোর্ড এমন না যে, সবাই ৪০ করলেই ভালো। বরং চাইব কেউ একজন ১৫০ বা ২০০ করুক। এই জায়গা থেকে আত্মবিশ্বাস পাওয়ার কিছু নেই। সেট হওয়ার পর সফট ডিসমিসাল হয়েছে, এটা ঠিক না।’
সামনে শ্রীলঙ্কা সফর। সেটার দিকেও নজর শান্তর, ‘শ্রীলঙ্কা সিরিজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাইব টপ অর্ডারে বড় রান হোক। কেউ যেন ১০০ করে আবার ৪০-৫০ রানে থেমে না যায়। সেখানে ভালো উইকেট থাকে, সেখানে যেন পেসাররাও ভালোভাবে চালিয়ে যেতে পারে।’
শেষদিকে ম্যাচ দ্রুত শেষ করার প্রসঙ্গেও পরিষ্কার জবাব দিলেন অধিনায়ক, ‘না, তাড়া ছিল না। একটা নিয়ম ছিল, সেটা নিশ্চিত হচ্ছিলাম। আবার আলোও কমে গিয়েছিল, তখন ব্যাট করা কঠিন ছিল। কালও দেখা গেছে জুটি হলে ম্যাচ ঘুরতে পারত। তাই ফিল্ডাররা তাড়াহুড়া করেছে, বোলাররাও সেই সুযোগটা নিয়েছে।’
সবশেষে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের রান না পাওয়া নিয়েও কথা বলেছেন শান্ত, ‘উনাকে দেখে মনে হয়নি আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি ছিল। আমারও না। তবে সফট ডিসমিসালগুলো উচিত হয়নি। সামনে চাইব যেন আমরা এমন পরিস্থিতিতে আউট না হই।’
The post খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘সিরিজ জেতা উচিৎ ছিল’ appeared first on Bangladesher Khela.