তেরখাদা উপজেলার ছাগলাদহ ইউনিয়নের বুড়িমার গাছতলায় ৫৯তম বার্ষিক মহোৎসব বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ মে) দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা ভক্তদের আগমনে সারাদিন চলে ‘বুড়িমা’র জয়গান, উৎসব আর বাদ্যযন্ত্রের বাজনা। বুড়ি মায়ের সংকীর্তনে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ।
জেলা পুলিশ সুপার টি,এম, মোশাররফ হোসেনের দিক-নির্দেশনায় থানার ওসি মেহেদী হাসানের কঠোরতায় ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই মেলা সুন্দর ও শৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠান সফল করতে কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারি হেলালের নির্দেশে জেলা-উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি প্রতিনিধি দল মেলা পরিদর্শন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা যুব দলের আহ্বায়ক ইবাদুল হক রুবায়েদ, জেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান রুনু, উপজেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক চৌধুরী কওসার আলী, বিএনপি নেতা চৌধুরী ফখরুল ইসলাম বুলু, সাজ্জাদ হোসেন নান্টা, আজিবার শেখ, মিল্টান হোসেন মুন্সি, মোল্যা হুমায়ুন কবির।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বহু বছর ধরে বৈশাখের শেষ শনিবার অথবা মঙ্গলবার উপজেলার ছাগলাদহ ইউনিয়নের ছাগলাদহ বাজারে বুড়িমার গাছতলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহোৎসব ও একদিনের মেলা বসে। জনাকীর্ণ মেলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভিড়ে মিলনমেলায় পরিণত হয় তেরখাদাবাসীর। শুধু তেরখাদা বা খুলনা নয়; পার্শ্ববর্তী জেলা ও দূর-দুরন্ত থেকে আসেন বুড়িমার ভক্তরা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্বজনপ্রিয় এই বুড়িমা ছিলেন ঐর্শ্বিকজ্ঞানের আধার, নিঃস্ব-অসহায় মানুষের বন্ধু, পাপীর মন পরিবর্তন, রোগীদের সুস্থতাকারী বহুগুণে গুণান্বিত এক মহান যোগী মাতা। তাই সাধারণ মানুষ জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনে তার মধ্যস্থতা কামনা করেন। তাই এই তীর্থস্থানে আজও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ তার মধ্যস্থতায় ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভের জন্য আসেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি বিশাল বটবৃক্ষের ছায়াতলে বুড়িমার প্রতিমায় এসে সিঁদুর মাখানো, মিষ্টি-ফিরনি ও বিভিন্ন প্রসাদ বিতরণে মেতে ওঠেন পূজারিরা। পরে পাশের চিত্রা নদীতে পূণ্যস্নানের মনোবাসনা পূরণে মানত করে তারা। আবার মনোবাসনা পূর্ণ ব্যক্তিরা বুড়ি মাকে মানসীর বস্তু প্রদান করেন। গাছতলা প্রাঙ্গণে বিশাল মেলা বসে। মেলায় বিকিকিনি হয় গ্রাম্য বাংলার সব ঐতিহ্যবাহী পণ্য সামগ্রী। যেমন-কুলা, ঝুড়িসহ হস্ত ও কুটির শিল্পের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র। মেলায় প্রায় ৫ শতাধিক স্টল বসে। উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা উপজেলা থেকে নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধসহ প্রায় লক্ষাধিক লোকজনের সমাগম হয়।
মেলায় ঘুরতে আসা খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী জ্যোতি বিশ্বাস ও নন্দিনী বালা জানান, এবার প্রথম মেলায় আসা তাদের। মজা করে আমরা বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেছি। স্টল থেকে মিষ্টি পান কিনে খেয়েছি। খুব আনন্দ লাগছে বলে জানান তারা।
ছাগলাদাহ বুড়ো মায়ের গাছতলা মেলা কমিটির সভাপতি সূর্য কান্তি ঢালী বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক মিলন মেলা এটি। এই মিলন মেলায় সকলের মনোবাসনা পূর্ণ হয় বলে ভক্তবৃন্দ বিশ্বাস করেন।
তেরখাদা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী হাসান জানান, মেলায় আসা দর্শনার্থীরা বিনোদন শেষে যাতে শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরতে পারেন সে লক্ষ্যে মেলাস্থলে সার্বক্ষনিক পুলিশ মোতায়েন ছিল। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ভাবে মেলা সম্পন্ন হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এমএনএস
The post তেরখাদায় তিনশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী বুড়িমার গাছতলায় মিলনমেলা appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.