বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য লাকি ভেন্যু হিসেবে পরিচিত খুলনা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। খুলনার এই স্টেডিয়ামে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট তিন ধরনের ক্রিকেটই হয়েছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে এই স্টেডিয়ামে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় না। ২০০৪ সালে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ দিয়ে যাত্রা শুরু করা স্টেডিয়ামটির এখন বেহাল দশা। খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের আশা, একও সময়ের আন্তর্কাতিক মানের এই স্টেডিয়ামের জৌলুস ফিরুক, খুলনার মাটিতে আবারো ফিরুক আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
এই খুলনারই সন্তান জাতীয় দলের অন্যতম সদস্য মেহেদি হাসান মিরাজ। খুলনা স্টেডিয়ামে খেলা না থাকায় আক্ষেপ রয়েছে তারও। খুলনার মাটিতেই মিরাজের শৈশব কেটেছে। ক্রিকেটে তার হাতে খড়িও এই খুলনার মাটিতে। বয়স ভিত্তিক দল পেরিয়ে এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও দাপটের সঙ্গে খেলছেন মিরাজ।
বাংলাদেশের জার্সিতে নিয়মিত হলেও খুলনার মাটিতে ম্যাচ খেলতে না পারার আক্ষেপ মিরাজের কণ্ঠে, ‘খুলনার মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় না, এটি আমাকে কাঁদায়। আমার স্বপ্ন ছিল খুলনা স্টেডিয়ামে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলব। আমার ৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে খুলনার মাটিতে একটিও ম্যাচ খেলতে পারিনি। এটা অবশ্যই আমার জন্য কষ্টের বিষয়। কিন্তু স্টেডিয়ামের এখন যে পরিস্থিতি মনে হয় না খেলার মতো সুবিধা আছে। এটা নিয়ে আমি বেশ কয়েক জায়গাতে কথা বলেছিলাম। আশা করছি যারা দায়িত্বে আছেন তারা এটা (স্টেডিয়াম) নিয়ে কাজ করবেন।’
খুলনা স্টেডিয়ামকে আগের অবস্থায় ফেরাতে সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছেন মিরাজ। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে, বিপিএল’র ম্যাচ হয়েছে। কিন্তু কয়েকবছর ধরে এখানে সমস্যা হচ্ছে। যারা দায়িত্বে আছেন তাদের এমন একটি স্টেডিয়াম যেন বিলুপ্তি না হয়ে যায় সেদিকে ফোকাস করা উচিৎ। আমি এটা নিয়ে কথা বলেছিলাম, তারা অনেক ইতিবাচক আছে।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজে ব্যাটে-বলে পারফর্ম করেছেন মিরাজ। বাংলাদেশ সিরিজ ড্র করলেও সিরিজ সেরার পুরস্কার জেতেন এই অলরাউন্ডার। এমন পারফরম্যান্স করায় আইসিসি থেকেও একটা স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। এপ্রিল মাসের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন মিরাজ।
আইসিসির প্লেয়ার অব দ্য মান্থ হওয়া প্রসঙ্গে মিরাজ বলেন, ‘এই প্রথম আমি এই পুরস্কার পেয়েছি, খুব ভালো লাগছে। এর আগে আরও অনেকে হয়েছে, এবার আমি হয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা হল ভালো পারফরম্যান্স করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেমন কন্ট্রিবিউট করছেন, কতো ম্যাচ জেতাচ্ছেন, দেশকে আপনি কি দিচ্ছেন এটি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে মনে হয়- ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্সটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন অনেক হয়েছে আমি ভালো খেলেছি, কিন্তু ম্যাচ জিততে পারিনি। আবার এমনও পরিস্থিতি হয়েছে আমার হয়তো কন্ট্রিবিউট অনেক বেশি ছিল না। হয়তো ৩৯ রানের ইনিংস ছিল, কিন্তু সেটা উইনিং নক ছিল। এই জিনিসগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন খেলোয়াড় হিসেবে টিমকে উপরে নিয়ে যাওয়া এবং টিমকে জেতানো এটাই আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বড় সাফল্য।’
মিরাজ কথা বলেছেন খুলনায় জাতীয় ক্রিকেট লিগ নিয়েও। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক বছর খুলনার লিগ হয় না। শুধু খুলনা না, বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ক্লাব পর্যায়ের যে লিগগুলো হয়, তারপর এজ লেভেলের খেলাগুলোও। ক্লাব পর্যায়ের খেলা খুবই বাজে অবস্থায় চলে গেছে প্রত্যেকটা জায়গায়। কয়েকটা বিভাগে কন্টিনিউ লিগ হয়। আর বিভিন্ন জায়গায় ওই রকম হয় না।’
‘খুলনা ক্রিকেটের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এটকা জায়গা। এর আগে জাতীয় দলে খুলনার অনেক খেলোয়াড় ক্রিকেট খেলেছে। আমিও খুলনা থেকে খেলোয়াড় হয়েছি। খুলনায় আমি অনুশীলন করেছি। প্রতিনিয়ত খেলেছি, তখন সুবিধা ভালো ছিল। আমার কাছে মনে হয় এখন পরিবেশটা ওই রকম নেই। সবারই এগিয়ে আসা উচিৎ।’
নিজের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের গল্প বলতে গিয়ে মিরাজ বলেন, ‘ছোটবেলায় আমার মনে আছে খুলনার এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ক্রিকেট খেলিনি। সব মাঠেই খেলেছি। সুবিধা কম থাকলেও ম্যাচ খেলেছি আমরা। ম্যাচ খেলার একটা টেম্পারমেন্ট আছে, যতই অনুশীলন করেন। আমরা কাছে মনে হয় খুলনায় এখন সবাই অনুশীলন করে, ম্যাচ আর খেলে না। তাহলে কিভাবে উন্নতি হবে? ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। আমরা একাডেমির সঙ্গে অনেক ম্যাচ খেলতাম। এখন মনে হয় না, এরকম খেলা খুলনায় হয় না।’
খুলনা গেজেট/এএজে
The post খুলনায় আন্তর্জাতিক ম্যাচ চান মিরাজ appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.