2:45 am, Friday, 24 January 2025

কুমির ভেবে ঘড়িয়াল বেঁধে রাখলেন স্থানীয়রা

আমাদের বরিশাল ডেস্ক:

পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীতে জেলের জালে আটকা পড়ে একটি ঘড়িয়াল। কিন্তু প্রাণীটিকে কুমির ভেবে দিঘির পাড় লঞ্চ টার্মিনালের পাশে বেঁধে রাখেন স্থানীয়রা।

শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে তেঁতুলিয়া নদীর ধুলিয়া পয়েন্টে ঘড়িয়ালটি আটকা পড়ে। 

বাউফল উপজেলা বন কর্মকর্তা বদিউজ্জামান খান সোহাগ জানান, স্থানীয়রা একটি কুমির বেঁধে রেখেছে বলে খবর পান তারা। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাণীটি যে ঘড়িয়াল সেটি নিশ্চিত হন।

তিনি জানান, এটি শান্ত প্রাণী। মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে স্থানীয় লোকজন ঘড়িয়ালটিকে আটকে রাখায় ঘড়িয়ালটি উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের আক্রমণ করেছে। তাদের পা কেটেছে, সেলাই লাগবে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রাণীটিকে অবমুক্ত করার ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা জানান, ঘড়িয়াল খুবই শান্ত স্বভাবের ও লাজুক প্রাণী। এক সময় বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, যমুনার শাখা নদী ও এর অববাহিকায় প্রচুর ঘড়িয়াল দেখা যেত। তবে বাসস্থান ধ্বংস, মাছ ধরার কারেন্ট জাল বা ‘গিল নেটে’ আটকে মৃত্যু, নদীতে ইঞ্জিনচালিত অতিরিক্ত যান চলাচল ইত্যাদি নানা কারণে গত ৬০ বছরে ঘড়িয়ালের সংখ্যা দ্রুত গতিতে কমে গেছে। বর্তমানে প্রাণীটি পৃথিবী থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

তিনি বলেন, ঘড়িয়াল প্রধানত মাছ খায় বলে প্রাণীটি জেলেদের কাছে মেছো কুমির হিসেবেও পরিচিত। সাধারণত, মার্চ থেকে মে মাসে নদীর জনশূন্য এলাকায় পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী ঘড়িয়াল বালিতে গর্ত করে ৪-৬২টি ডিম পাড়ে ও বাচ্চা ফোটায়। ২০১৬ সালে বন বিভাগ ও আইইউসিএন যৌথভাবে পরিচালিত এক জরিপে পদ্মা, মহানন্দা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতে মোট ৫৮টি ঘড়িয়ালের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া বাংলাদেশের পদ্মায় ৪টি এবং যমুনায় ঘড়িয়ালের ১টি ‘হটস্পট’ আবিষ্কৃত হয়েছে, যা বিলুপ্তির মুখে থাকা প্রাণীটি রক্ষার ক্ষেত্রে খুবই আশান্বিত হওয়ার মত খবর।

ঘড়িয়ালসহ সকল বন্যপ্রাণীর প্রতি সদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ঘড়িয়ালকে ‘মহাবিপন্ন’ বন্যপ্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। ২০০৭ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, পৃথিবীতে ২০০টির কম বুনো ঘড়িয়াল রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

The post কুমির ভেবে ঘড়িয়াল বেঁধে রাখলেন স্থানীয়রা appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.

Tag :

ndax login

https://ndaxlogi.com

latitude login

https://latitude-login.com

কুমির ভেবে ঘড়িয়াল বেঁধে রাখলেন স্থানীয়রা

Update Time : 12:06:44 pm, Sunday, 6 October 2024

আমাদের বরিশাল ডেস্ক:

পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীতে জেলের জালে আটকা পড়ে একটি ঘড়িয়াল। কিন্তু প্রাণীটিকে কুমির ভেবে দিঘির পাড় লঞ্চ টার্মিনালের পাশে বেঁধে রাখেন স্থানীয়রা।

শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে তেঁতুলিয়া নদীর ধুলিয়া পয়েন্টে ঘড়িয়ালটি আটকা পড়ে। 

বাউফল উপজেলা বন কর্মকর্তা বদিউজ্জামান খান সোহাগ জানান, স্থানীয়রা একটি কুমির বেঁধে রেখেছে বলে খবর পান তারা। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাণীটি যে ঘড়িয়াল সেটি নিশ্চিত হন।

তিনি জানান, এটি শান্ত প্রাণী। মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে স্থানীয় লোকজন ঘড়িয়ালটিকে আটকে রাখায় ঘড়িয়ালটি উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের আক্রমণ করেছে। তাদের পা কেটেছে, সেলাই লাগবে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রাণীটিকে অবমুক্ত করার ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা জানান, ঘড়িয়াল খুবই শান্ত স্বভাবের ও লাজুক প্রাণী। এক সময় বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, যমুনার শাখা নদী ও এর অববাহিকায় প্রচুর ঘড়িয়াল দেখা যেত। তবে বাসস্থান ধ্বংস, মাছ ধরার কারেন্ট জাল বা ‘গিল নেটে’ আটকে মৃত্যু, নদীতে ইঞ্জিনচালিত অতিরিক্ত যান চলাচল ইত্যাদি নানা কারণে গত ৬০ বছরে ঘড়িয়ালের সংখ্যা দ্রুত গতিতে কমে গেছে। বর্তমানে প্রাণীটি পৃথিবী থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

তিনি বলেন, ঘড়িয়াল প্রধানত মাছ খায় বলে প্রাণীটি জেলেদের কাছে মেছো কুমির হিসেবেও পরিচিত। সাধারণত, মার্চ থেকে মে মাসে নদীর জনশূন্য এলাকায় পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী ঘড়িয়াল বালিতে গর্ত করে ৪-৬২টি ডিম পাড়ে ও বাচ্চা ফোটায়। ২০১৬ সালে বন বিভাগ ও আইইউসিএন যৌথভাবে পরিচালিত এক জরিপে পদ্মা, মহানন্দা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতে মোট ৫৮টি ঘড়িয়ালের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া বাংলাদেশের পদ্মায় ৪টি এবং যমুনায় ঘড়িয়ালের ১টি ‘হটস্পট’ আবিষ্কৃত হয়েছে, যা বিলুপ্তির মুখে থাকা প্রাণীটি রক্ষার ক্ষেত্রে খুবই আশান্বিত হওয়ার মত খবর।

ঘড়িয়ালসহ সকল বন্যপ্রাণীর প্রতি সদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ঘড়িয়ালকে ‘মহাবিপন্ন’ বন্যপ্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। ২০০৭ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, পৃথিবীতে ২০০টির কম বুনো ঘড়িয়াল রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

The post কুমির ভেবে ঘড়িয়াল বেঁধে রাখলেন স্থানীয়রা appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.