পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২৩ মে সকাল ৬টায় হোমস্টে ছাড়েন তারা। বেরিয়ে পড়েন ঘুরতে। ঘরছাড়ার সময় পরিবারের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল সোনম-রাজার। তারপর থেকে আর হদিস মেলে না তাদের। পারদ চড়ে পরিবারের অন্দরে। বাড়ে উদ্বেগ। ২৪ মে শিলং থানায় একটি নিখোঁজ মামলা করে রাজের পরিবার। সেই ভিত্তিতে শুরু হয় সার্চ অপারেশন।
কেটে যায় একটার পর একটা দিন। খবরের শিরোনামে আসেন সোনম-রাজা। নিখোঁজ বলেই শুরু হয় প্রচার। এরপর ২ জুন। আরও জট পাকায় রহস্য। মেঘালয়ের ওয়ে সিটং জলপ্রপাতের সামনে মেলে রাজার পচন ধরা দেহ। গোটা দেহ ও মুখে পচন ধরে যাওয়ার ফলে তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। সেই সময় পথ দেখায়, তার হাতে থাকা একটা ট্যাটু। যাতে লেখা রাজা। পরিবার নিশ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু রাজার দেহ মিললেও, সোনম কোথায়? তার খোঁজ তখনো পায়নি পুলিশ।
রাজার দেহ উদ্ধারের পরেই ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ। সেই রিপোর্টে বেরিয়ে আসে যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথার পেছনে ও সামনে আঘাত করা হয়েছে। মেঘালয়ের এক পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, রাজার মাথায় থাকা ধারালো অস্ত্রের ক্ষত দেখেই তারা ঠাওর করতে পেরেছিলেন, কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে। কারণ যে ধরনের অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হয়েছে, তা মেঘালয়ে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আরও জোরকদমে শুরু হয় তদন্ত।
রাজা রঘুবংশীর হত্যাকাণ্ড ঘিরে শুরু হয় ব্যাপক চাঞ্চল্য। কারণ পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডের বাঁকে বাঁকে রয়েছে রহস্য। আর নৃশংস এই পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন তারই স্ত্রী সোনাম। এতে সাহায্য করেছেন পরকীয়া প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা, যিনি আবার তিন বন্ধুকে ‘ভাড়াটে কিলার’ হিসেবে নিয়োগ করেন।
তাদের বিয়ে হওয়ার পাঁচ দিন পর রাজ কুশওয়াহ তার তিন শৈশব বন্ধু আনন্দ কুমরি (২৩), আকাশ রাজপুত (১৯) এবং বিশাল সিং চৌহানকে (২২) ইন্দোরের এক ক্যাফেতে ডেকে পাঠান। সেখানে তাদের টাকা দিয়ে রাজাকে খুন করার জন্য প্ররোচিত করেন। সেদিনই ঘাতকরা গৌহাটিতে পৌঁছে একটি কুড়াল অনলাইনে অর্ডার করে। এরপর তারা শিলংয়ে গিয়ে রাজা ও সোনামের থাকার জায়গার কাছে একটি হোটেলে ওঠে।
২৩ মে সোনাম ফটোশুটের অজুহাতে রাজাকে একটি নির্জন পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যান। ঘাতকরাও তাদের অনুসরণ করে। সেখানে পৌঁছে সোনাম প্রথমে ক্লান্ত হওয়ার ভান করে স্বামীর পেছনে হাঁটতে থাকেন।
সোনমের পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের পর তিন অভিযুক্ত ঘাতককেও রাতারাতি চালানো অভিযানে গ্রেফতার করা হয়। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আইন-শৃঙ্খলা) অমিতাভ ইয়াশ বলেন, সোনাম দাবি করেছেন, তাকে মাদক খাইয়ে গাজীপুরে আনা হয়েছিল যেন তিনি নিজেকে ভিকটিম হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন।
তবে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি, সোনাম একজন দুর্বল পরিকল্পনাকারী। পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না। তিনি ভেবেছিলেন ভিকটিম সেজে পার পেয়ে যাবেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। মেঘালয় পুলিশ বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে এবং প্রয়োজনে অন্যান্য রাজ্যের পুলিশ সহায়তা করবে বলেও জানানো হয়েছে।
The post হানিমুনে গিয়ে যে কৌশলে স্বামীকে হত্যা করেন সোনাম appeared first on Ctg Times.