তবে ১৯৯৬ সালে মোশারফ শেখ হাসিনার বাসার বাবুর্চি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। এরপর থেকে তার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গত ২৭ বছর ধরে তিনি শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাবুর্চি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলের পর, ৫ আগস্ট হাসিনার দেশত্যাগের সঙ্গে সঙ্গেই মোশারফও আত্মগোপনে চলে যান।
সম্প্রতি বড় কামদিয়া গ্রামের কৃষক মো. চাঁনমিয়া ফকিরের ছেলে মো. সাগর মিয়া জমি দখলের অভিযোগ এনে মোশারফের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেন। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোশারফ ফকির পরিবারের জমি জোরপূর্বক দখল করে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেন।
স্থানীয়রা জানায়, ৮১ নম্বর মৌজার ৬১৮ দাগে অবস্থিত ৪৩ শতাংশ জমি জবরদখল করে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করেন মোশারফ। জমি ছেড়ে দিতে বললে চাঁনমিয়া ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি, হুমকি এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এলাকা ছাড়া করে দেন তিনি।
চাঁনমিয়া ফকিরের ভাতিজা সেন্টু ফকির জানান, ‘আমার চাচা একজন দরিদ্র কৃষক। মোশারফ তার জমি দখল করে সেখানে পাকা ঘর নির্মাণ করেন এবং ঘরের ছাদে একটি প্রতীকী নৌকা তৈরি করে রাখেন। আমরা পুলিশের কাছে গেলেও কোনো প্রতিকার পাইনি।’
মোশারফের প্রতিবেশী মো. জামাল শেখ বলেন, ‘মোশারফের বাবা দিনমজুর ছিলেন। তিনি নিজে কখনো পড়ালেখা করতে পারেননি। কিন্তু ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসার বাবুর্চির চাকরি পাওয়ার পর থেকেই তার জীবনে আমূল পরিবর্তন আসে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মোশারফ বর্তমানে বড় কামদিয়া গ্রামে ২ বিঘা জমির ওপর বাড়ি এবং অতিরিক্ত ৩ বিঘা ফসলি জমির মালিক। ফরিদপুর শহরের হাড়োকান্দী ও রাজবাড়ি রাস্তামোড়ে দুটি বাড়ি রয়েছে যার একটি ১২ শতাংশ ও অন্যটি ৮ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত। এছাড়াও তার নামে ঢাকা ও ফরিদপুরে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট ও গাড়ি রয়েছে বলে এলাকাবাসীর দাবি।
২০১৫ সালে স্থানীয় যুবলীগ নেতা নুর ইসলামের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে এলাকাছাড়া হন মোশারফ। পরবর্তীতে আবার নুর ইসলামের সঙ্গে মিলে এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মোশারফ শেখের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায় এবং গ্রামের বাড়িতেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ফরিদপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাসানউজ্জামান বলেন, ‘একজন বাবুর্চির আয় থেকে এত সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব নয়। দুর্নীতির মাধ্যমে এসব অর্জিত হয়েছে বলে মনে করি। এখন সরকারের উচিত বিষয়টি তদন্ত করে দেখা।’
The post সম্পদ ও অভিযোগ—দুটোর পাহাড় গড়েছেন শেখ হাসিনার বাবুর্চি মোশারফ appeared first on Ctg Times.