নিরব দুপুরে হঠাৎ যেন এক বজ্রপাত। চেলসির আর্জেন্টাইন তারকা এনজো ফার্নান্দেজের একটা সিদ্ধান্ত, যেন ভেঙে চুরমার করে দিল ভালেন্তিনা সেরভান্তেসের সাজানো পৃথিবী। কখনো ভালোবাসার উষ্ণতা, কখনো অভিমানভরা দূরত্ব তাদের গল্পটা যেন এক পরিপূর্ণ সিনেমার মতো। ছোটবেলার প্রেম, স্বপ্নের মতো একসঙ্গে গড়ে তোলা জীবন, আর তাদের ভালোবাসার নিদর্শন দুই সন্তান। তবু গত বছরের অক্টোবর মাসে, সেই গল্পে হঠাৎ করেই থেমে গেল সুর।

এনজো জানিয়ে দিলেন, ভালেন্তিনার সঙ্গে আর একসাথে থাকবেন না। এই বিচ্ছেদের খবর যেন ভালেন্তিনার জীবনে এক অনাহুত ঝড়। ভালোবাসার বুননে তৈরি এত দিনের সম্পর্কটা যেন মুহূর্তেই এলোমেলো হয়ে গেল। কিন্তু এই গল্পের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব, সেটার সমাপ্তি নয়—বরং হারিয়ে ফেলেও আবার খুঁজে পাওয়ার সাহস। ভালোবাসার সেই নতুন শুরুটা নিয়েই আজকের গল্প।

সেই বিচ্ছেদের পর ভালেন্তিনা ফিরে যান আর্জেন্টিনায়, দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে। শহর বদলালেও বদলায়নি তার অনুভব। দূরত্ব বাড়লেও, মন তো আর সেই ভাষা বোঝে না। এনজোর অভাব বুকে চেপে রাখতেন তিনি। তাই তো একদিন ইনস্টাগ্রামে লিখে ফেলেন মনের কথা ‘আমি এখনো তাকে ভালোবাসি, ওর জন্য শুভকামনাই জানাই।’

ভালোবাসা বোধহয় তখনো শুধু একপাক্ষিক ছিল না। সময় গড়াতে এনজোর মনেও ঢুকে পড়ে শূন্যতা। একসময় যাকে ছেড়ে নিজের মতো বাঁচতে চেয়েছিলেন, বুঝতে পারেন সেই জীবন আর তার ঠিকানা নয়।

আর ঠিক তখনই বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। বছরের শুরুতে দেখা গেল এক অন্য রকম ছবি—লন্ডনের রাস্তায় হাতে হাত ধরে হাঁটছেন এনজো ও ভালেন্তিনা। চোখে-মুখে হাসি, ভেতরে যেন নতুন করে শুরু করার আশ্বাস। যেন আবার ফিরে আসা, সেই চেনা পুরোনো দিনে।

এপ্রিলে ভালেন্তিনা ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করলেন এনজোর একটা ছবি, মাদ্রিদের এক হোটেলের বিছানায় বিশ্রামে। এরপর তো চেলসি উয়েফা কনফারেন্স লিগ জয়ের পর মাঠেই দেখা গেল তাকে; এনজোর পাশে।

সম্প্রতি আর্জেন্টিনার এক টিভি শো ‘ডোন্ট থিঙ্ক সো মাচ’-এ এসে খোলামেলা কথা বলেছেন ভালেন্তিনা সেরভান্তেস। চেলসি তারকা এনজো ফার্নান্দেজের সঙ্গে বিচ্ছেদ আর ফের একসঙ্গে পথচলার গল্প শোনাতে গিয়ে উঠে এসেছে অনেক না-বলা অনুভব।

তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল—কেন আবার ফিরলেন এনজোর জীবনে? ভালেন্তিনার উত্তর ছিল সহজ, অথচ ভীষণ গভীর:
‘দ্বিতীয় সুযোগ তো মানুষ হিসেবে আমাদের সবারই প্রাপ্য। ভুল তো করতেই পারি। তবে তৃতীয় বা চতুর্থ সুযোগ নয়, আর নয়। আমরা এখন অনেক ভালো আছি।’

তবে ফিরিয়ে দেওয়া সহজ ছিল না, জানালেন তিনি। কারণ তখন এনজোকে ঘিরে বিভিন্ন গুঞ্জন ঘুরছিল সংবাদমাধ্যমে—আর্জেন্টাইন র‍্যাপার নিকি নিকোল কিংবা জনপ্রিয় মডেল পাম্পিতার সঙ্গে নাম জড়িয়ে উঠেছিল তার। যদিও পরে নিকি নিজেই সে গুঞ্জন উড়িয়ে দেন। ভালেন্তিনা জানান, পাম্পিতাও তাকে ফোন করে স্পষ্ট করে বলেছিলেন এসব কিছুই সত্য নয়।

এই আলাদা থাকার সময়টায় ভালেন্তিনার দৃষ্টিভঙ্গিও অনেক বদলে গেছে। বললেন,‘আগে যদি এনজো আমাকে নিয়ে কোথাও যেতে চাইত, আমি বলতাম বাচ্চাদের রেখে যাব না। এখন রাজি হই, তবে তিন দিনের বেশি নয়। কারণ বাচ্চাদের খুব মিস করি।’

এখন তাদের মধ্যে ঝগড়া হয় না বললেই চলে। ছোট ছোট ভুল–বোঝাবুঝিও মিটে যায় সহজেই। ভালেন্তিনা হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমি এনজোকে বদলাতে চাই না। ও যেমন, আমি তেমন করেই মেনে নিয়েছি। আমরা একে অপরকে খুব ভালোভাবে চিনে ফেলেছি।’

তাদের এই নতুন করে গড়া সম্পর্ক যেন বোঝাপড়ার এক নতুন সংজ্ঞা—যেখানে ভালোবাসা মানে শুধু না বলা আবেগ নয়, বরং সাহস করে আবার শুরু করা।

The post হঠাৎ বিচ্ছেদ, হঠাৎ দেখা: সিনেমাকেও হার মানায় এনজো ও ভালেন্তিনার ভালোবাসা appeared first on Ctg Times.