সিলেটে মহানগর বিএনপির অভ্যন্তরে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব-বিভেদ নিরসনে কেন্দ্রীয় নেতারা হস্তক্ষেপ করেছেন। শুক্রবার (১৩ জুন) সকালে নগরের দরগা গেট এলাকার একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিলেট মহানগর বিএনপিকে আরো শক্তিশালী করতে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী এবং সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর মধ্যকার প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব নিয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিএনপির দুই নেতার বাগবিতণ্ডা এবং সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ফোনকলকে ঘিরে এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, দুটি পৃথক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সমালোচনা তৈরি হলে কেন্দ্রীয় বিএনপি ঘটনা তদন্ত ও সমাধানে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। আলোচনা সভায় দুই নেতার বাগবিতণ্ডার ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব পান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এছাড়া, কল-কাণ্ডের ঘটনায় কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকীকে একমাত্র সদস্য করে কমিটি করা হয়। এই দুটি কমিটি একত্র হয়ে আজ সংশ্লিষ্ট নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে।

বৈঠকে এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও মিফতাহ্ সিদ্দিকী ছাড়াও সিলেট বিভাগের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ এবং সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও, সৃষ্ট ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, এবং জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী সভায় বক্তব্যের সুযোগ না পাওয়া সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন ও মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সিলেট মহানগর বিএনপি আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেখানে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সামনেই বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এই ঘটনা দলের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

এছাড়া, গত ২০ মে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের মতবিনিময় সভা চলাকালে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর মোবাইল ফোনে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ‘কল’ আসে—এমন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার পর ইমদাদ হোসেন জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও তাঁর অনুসারীদের অভিযুক্ত করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকে দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ চলতে থাকে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, উভয় ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার স্বার্থে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল ও কার্যকর করার জন্য ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সাথে, দুই নেতাকে সব বিভেদ ও দ্বন্দ্ব ভুলে একত্রে কাজ করার জন্যও বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকল নেতাকে ভবিষ্যতে দায়িত্বশীলতার পরিচয় রাখার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেন, “সম্প্রতি যে দুটি ঘটনা ঘটে সেগুলোর সমাধান হয়েছে। ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আগামী দিনে সবাইকে দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেব, বৈঠকে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।”

The post সিলেট বিএনপিতে ঐক্যের নির্দেশ appeared first on Ctg Times.