ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষ সীমিত থাকলেও, তা যে কোনো সময় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংকটে রূপ নিতে পারে। জাতিসংঘসহ বিশ্বজুড়ে উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু যদি সেই আহ্বান উপেক্ষিত হয়, তাহলে কী ঘটতে পারে? নিচে সম্ভাব্য কিছু ভয়াবহ পরিণতির চিত্র তুলে ধরেছে বিবিসি

যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের মধ্যে জড়িয়ে পড়া

ইরান মনে করে, ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের নীরব সমর্থন ছিল। তাই ইরান মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন ঘাঁটি, ইরাক ও উপসাগরীয় অঞ্চলের সামরিক স্থাপনা, কূটনৈতিক মিশনে হামলা চালাতে পারে।

যদি কোনো মার্কিন নাগরিক নিহত হয়, বিশেষত তেলআবিব বা আশপাশে, তাহলে আমেরিকার প্রতিক্রিয়া ভয়াবহ হতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসন আবার ক্ষমতায় থাকলে, রিপাবলিকানদের চাপেও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে ইরানের গভীর ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংসের জন্য, যেগুলো ধ্বংসে শুধুমাত্র মার্কিন ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা কার্যকর।

উপসাগরীয় দেশগুলোর জড়িয়ে পড়া

ইরান যদি ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সে উপসাগরীয় অঞ্চলকেই টার্গেট করতে পারে – যেমন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ইতিপূর্বে সৌদি তেলক্ষেত্রে ও আমিরাতে হুতি হামলার উদাহরণ রয়েছে।

এই দেশগুলোতে মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে, এবং তারা ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে বলেও মনে করে ইরান।

ফলে ইরানের হামলা হলে, উপসাগরীয় দেশগুলোও মার্কিন প্রতিরক্ষা চাইতে পারে।

ইসরায়েলের হামলা ব্যর্থ হলে পারমাণবিক দৌড়

যদি ইরান তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো রক্ষা করতে সক্ষম হয়, এবং ৬০% সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রক্ষা করে, তাহলে ইসরায়েলের হামলা হয়ত উল্টো ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।

নতুন নেতৃত্ব হতে পারে আগের চেয়েও আগ্রাসী। এতে অঞ্চলজুড়ে দীর্ঘস্থায়ী পাল্টা হামলা ও অস্থিরতা শুরু হতে পারে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট

তেলমূল্য ইতিমধ্যেই ঊর্ধ্বমুখী। যদি ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়, বা হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা বাড়িয়ে দেয়, তাহলে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ধসে পড়তে পারে। এর প্রভাব পড়বে মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়ে।

এছাড়া, রাশিয়া তেলমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন অর্থনৈতিক শক্তি পেতে পারে।

ইরানি শাসনব্যবস্থা পতন ও অনিশ্চয়তা

ইসরায়েলের চূড়ান্ত লক্ষ্য হতে পারে ইরানের শাসনব্যবস্থার পতন।

নেতানিয়াহু সরাসরি ‘ইরানিদের মুক্তির পথ পরিষ্কার’ করার কথা বলেছেন।

কিন্তু শাসনব্যবস্থা পতনের পর কী হবে?

ইরাক ও লিবিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, একনায়কত্ব পতনের পর গৃহযুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়ে। ইরানেও একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

সবকিছু নির্ভর করছে ইরান কীভাবে প্রতিশোধ নেয় এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে কতটা সংযত করতে পারে তার ওপর। এই উত্তেজনা যদি ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী ঝড় তুলতে পারে।

The post ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে ভয়ঙ্কর পরিণতির আশঙ্কা, সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে যেসব দেশ appeared first on Ctg Times.