বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বিদেশ ভ্রমণ দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভিসা জটিলতা বাড়িয়ে দিয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে দেশের পর্যটন খাত, ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্সি ও এয়ারলাইনসগুলোর ওপর।

একসময় জনপ্রিয় গন্তব্য এখন বন্ধ

থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও সংযুক্ত আরব আমিরাত— এসব দেশ একসময় বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য ছিল জনপ্রিয় গন্তব্য। ঈদের ছুটি বা পারিবারিক অবকাশে এই দেশগুলোতেই ভিড় করতেন উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। কিন্তু এখন এসব দেশের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ভিসা প্রাপ্তিতে লাগছে এক থেকে দুই মাস, অনেক ক্ষেত্রেই আবেদন প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে।

থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে ভিসা পেতে হয়রানি

থাইল্যান্ডে ভিসা পেতে এখন আবেদন করতে হচ্ছে ৪৫ দিন আগে, আর অনেক ক্ষেত্রে তা প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। ভিয়েতনাম আগে ই-ভিসা এবং অন-অ্যারাইভাল সুবিধা দিলেও এখন তা বন্ধ করেছে। দেশটিতে পর্যটক হিসেবে গিয়ে অনেকে ফেরত না আসা এবং অবৈধ অভিবাসন চেষ্টা করায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। শুধু গত দুই বছরেই ৩০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি ভিয়েতনামে নির্ধারিত সময়ের বেশি অবস্থান করেছেন বলে জানা গেছে।

কম্বোডিয়া, লাওস, ফিলিপাইনে একই চিত্র

কম্বোডিয়া, লাওস এবং ফিলিপাইনও বাংলাদেশি পর্যটকদের ক্ষেত্রে কঠোরতা বাড়িয়েছে। আগে যেখানে ১০ দিনের মধ্যে ফিলিপাইনের ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পেতে সময় লাগছে দেড় মাস।

মধ্যপ্রাচ্যেও ভিসা সীমিত

দুবাইসহ সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০২৩ সাল থেকেই বাংলাদেশিদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ রেখেছে। বর্তমানে অল্পসংখ্যক ভিসা ইস্যু হলেও তা সাধারণ নাগরিকদের নাগালের বাইরে।

ভারত-ভুটান-নেপালেও বিধিনিষেধ

আগে মধ্যবিত্ত বাংলাদেশিদের জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল ভারত, নেপাল ও ভুটান। কিন্তু ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ভারত বাংলাদেশিদের ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে এই অঞ্চলেও ভ্রমণ সীমিত হয়ে পড়েছে।

ইউরোপও কঠোর হচ্ছে

শেনজেনভুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশিদের ভিসা আবেদনে সর্বোচ্চ পরিমাণে প্রত্যাখ্যান করছে। ২০২৪ সালে জমা পড়া ৩৯ হাজার ৩৪৫টি ভিসা আবেদনের মধ্যে ২০ হাজার ৯৫৭টি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে— যা ৫৪.৯ শতাংশ।

পাসপোর্ট গ্রহণযোগ্যতায় ধস

বিশ্বব্যাপী পাসপোর্ট র‍্যাংকিংয়েও বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৯৫তম, যা উত্তর কোরিয়া ও লিবিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সমান। অন্যদিকে, নোমাড ক্যাপিটালিস্ট প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮১তম।

যে কারণে বাংলাদেশিদের জন্য সীমিত হচ্ছে ভিসা

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক মো. তাসলিম আমিন শোভন বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বাংলাদেশিদের অতিরিক্ত অবস্থানের অভিযোগে ভিসা দেওয়া বন্ধ করছে। কিছু অসাধু চক্র সহজে পাওয়া ভিসা কালোবাজারে বিক্রি করায় ভিসা ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।

কুয়েত এয়ারওয়েজ, মালদিভিয়ান, থাই এয়ার এশিয়া ও এয়ার এশিয়ার জিএসএ টাস গ্রুপের পরিচালক কাজী শাহ মুজাক্কের আহাম্মেদুল হক বলেন, বর্তমানে ফ্লাইটের যাত্রীদের অধিকাংশই প্রবাসী। পর্যটকের সংখ্যা অনেক কম, যার ফলে কিছু রুটে ফ্লাইট কমানো হয়েছে।

পর্যটন বিশ্লেষক ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহেদুল আলম বলেন, ওভারস্টে ও অবৈধ অভিবাসনের প্রবণতার কারণেই আমাদের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা কমছে। বিদেশে যেতে হলে বৈধ ও শিক্ষিত পথে যাওয়া জরুরি।

সূত্র- আজকের পত্রিকা

The post যে কারণে বিদেশ ভ্রমণে ভিসা জটিলতায় পড়ছে বাংলাদেশিরা appeared first on Ctg Times.