বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় দুই নাম সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। দীর্ঘদিন একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন লাল-সবুজের জার্সিতে। খুব ভালো বন্ধুও ছিলেন দু’জন। তবে হঠাৎ করেই তাদের বন্ধুত্বে চির ধরে। একটা সময় প্রকাশ্যে আসে তাদের দ্বন্দ্ব।
রাজনৈতিক ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বাইরে আছেন সাকিব আল হাসান। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন তামিম ইকবাল। তবে দেশের ক্রিকেটের কথা উঠলে কোনো না কোনো ভাবে চলে আসে সাকিব-তামিমের নাম।
২০২৩ সালের বিশ্বকাপের আগে সাকিবের একটি সাক্ষাৎকারে তামিমের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তুলেছিলেন সাকিব আল হাসান। সে বিষয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন তামিম ইকবাল। দেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে তামিম বলেছেন, সাকিবের মন্তব্যে কষ্ট পাওয়া চেয়ে বিস্মিত হয়েছিলেন বেশি।
‘যা কিছু হয়েছে বা বলেছে, তা বলা কতটা উচিত ছিলো, তারাই ভালো বলতে পারবেন। আমার কাছে মনে হয়, জিনিসটা কেউই ভালোভাবে নেয়নি। ওই সময়ে যা কিছু হয়েছে, তা না হলে এখন আমরা আরও ভালো জায়গায় থাকতাম।’
তামিম আরও বলেন, ‘কষ্ট পাওয়ার চেয়ে বিস্মিত হয়েছিলাম বেশি। সে তার মতামত দিয়েছে। কিছু ভুল তথ্য দিয়েছে। ওখানে সাকিব একটা কথা বলেছে- আমি বেছে বেছে ম্যাচ খেলতে চেয়েছি। এটা সে কোথায় পেয়েছে? ফিজিও বলেননি, নির্বাচকরা বলেননি, আমিও বলিনি। কোনো দিন সাকিবের সঙ্গে দেখা হলে, আমরা আড্ডায় বসলে অবশ্যই বিষয়টি জানতে চাইব তার কাছে।’
সাকিব-তামিম ভালো বন্ধু ছিলেন, এ কথা সবারই জানা। তবে হঠাৎ করে তাদের সম্পর্কে চির ধরলো কেন? এ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ধোঁয়াশা এখনো আছে। তবে সাকিব-তামিম দ্বন্দ্বের কথা তখনই প্রকাশ্যে আসে, যখন (বিসিবির সাবেক সভাপতি) নাজমুল হোসেন পাপন বিষয়টি প্রকাশ্যে বলে দেন।
তামিম বলেন, ‘যে মানুষগুলো এখন তাদের পদে নেই, তাদের নিয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। কোনো দিন মুখোমুখি হলে অবশ্যই বলবো। তবে সাকিব আর আমার ঝামেলার কথা মিডিয়া অনেক আগে থেকে জানতো। খেলায় প্রভাব না পড়ায় মিডিয়া কিছু লিখেনি। বিসিবি সভাপতি (নাজমুল হাসান পাপন) প্রকাশ্যে বলে দেওয়ার পর থেকে মিডিয়া লেখা শুরু করে। ২০২৩ সালে কেন বিষয়টি সামনে এনে বিভেদ তৈরি করতে হলো? এ প্রশ্নের উত্তর তারা (পাপন) ভালো দিতে পারবেন।’
বন্ধুত্বের মধ্যে অনেক কারণেই দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে। তামিম বলেছেন, তাদের ঝামেলা মেটাতে বিসিবি থেকেও কোনো চেষ্টা করা হয়নি। আলাদা করে তামিম ও সাকিবের সঙ্গে কথা বলেছে, তবে তাদের দুজনকে একসঙ্গে বসিয়ে কখনো কথা বলা চেষ্টা করেননি বিসিবি কর্তারা। তবে তামিম এখনো স্বীকার করেন, বাংলাদেশের স্পোর্টসে সাকিব সবচেয়ে বড় তারকা।
‘অনেকে বলে, কে কার চেয়ে সেরা। কার এনডোর্সমেন্ট বেশি। এগুলো কিছুই আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারেনি। আমি সব সময় বলেছি, বাংলাদেশের স্পোর্টসে সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব। আমি নিজেই যখন এটা বলি, তখন তারকা খ্যাতি সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে না। আমার মনে হয় না, সাকিবও কখনও এভাবে চিন্তা করেছে। বন্ধুত্বের মধ্যে দূরত্ব অনেক কারণেই হতে পারে। তবে আমাদের মধ্যে সৃষ্ট দূরত্ব ঘোচাতে বিসিবি থেকে কেউ চেষ্টা করেননি। তারা আলাদাভাবে কথা বলেছেন, দু’জনকে একসঙ্গে বসিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেননি।’
তামিম যখন অধিনায়ক ছিলেন, তখন তিনি নিজেও কয়েকবার সম্পর্ক ঠিক করার চেষ্টা করেছিলেন। ‘অধিনায়ক হিসেবে আমি সম্পর্ক উন্নয়নে চেষ্টা করেছি। কয়েকবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু হয়নি। তবে ভবিষ্যতে হবে না, তা মনে করি না।’
গত মার্চে ডিপিএলের ম্যাচ চলাকালীন সময়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তামিম ইকবাল। তখন সাকিব আল হাসান তার ফেসবুক পেজে তামিমের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তার বাবা-মা তামিমকে দেখতে হাসপাতালেও গিয়েছিলেন। তবে তামিম মনে করেন, তারা যদি কখনো সামনাসামনি হয় এবং কথা বলা শুরু করে, তাহলে তাদের সম্পর্ক উন্নতি হতে পারে।
‘আমরা দু’জনই পরিণত। আমাদের দু’জনের প্রতি দু’জনের কিছু রাগ-ক্ষোভ থাকতে পারে। তবে আমরা কখনও সামনাসামনি হলে এবং নিজেরা কথা বলা শুরু করলে সম্পর্কের উন্নতি হতে পারে।’
ভারত সফরে বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ম্যাচ খেলেছে সাকিব আল হাসান। সেই ম্যাচে ধারাভাষ্যকার ছিলেন তামিম। তবে ওটাই সাকিবের শেষ ম্যাচ কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না তামিম। কিন্তু খেলোয়াড় সাকিব যে তামিমের কাছে অনেক বড়, তা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন।
‘ওই সফরে ওর শেষ ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। তবে আমরা নিশ্চিত ছিলাম না, ওটাই ওর শেষ ম্যাচ কিনা। ওটা শেষ ম্যাচ হলে আমি বক্তব্য দিতাম সাকিবের ক্যারিয়ার নিয়ে। আমি ম্যানেজারকে সেভাবে বলে রেখেছিলাম। ওকে যতটা কাছ থেকে আমি দেখেছি বা সে আমাকে যতটা দেখেছে, তা অনেকে দেখেনি। আমার মনে হয়, সবাই ‘ডিজার্ভ’ করে, সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য কী করেছে– সেটা আমার মুখ থেকে শোনার। আমি খেলোয়াড় সাকিবকে নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলছি। আমার অন্য কোনো মতামত দেওয়ারও প্রয়োজন নেই, নেওয়ারও প্রয়োজন নেই। খেলোয়াড় সাকিব আমার কাছে অনেক বড়।’

The post সাকিবের কথায় কষ্ট পাওয়ার চেয়ে বিস্মিত হয়েছিলাম বেশি: তামিম appeared first on Bangladesher Khela.