রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহামুদুল হকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শুক্রবার (২০ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় এবং জুমার নামাজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া চত্বর ও প্রধান ফটকে বিভাগ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মাহামুদুল হকের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।

বক্তারা অভিযোগ করেন, জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও বেরোবির শিক্ষক মো. মাহামুদুল হককে একটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁকে অন্যায়ভাবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ে পুলিশের তাড়া খেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া এক ব্যক্তিকে হত্যার মামলায় অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময়, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা থেকে মাহামুদকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান তারা।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “মাহামুদুল হক মামলার সর্বশেষ আসামি হলেও তাকে সবার আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ আর কাউকে আটক করা হয়নি। এটি একটি পরিকল্পিত হয়রানি ছাড়া কিছু নয়। আমরা অবিলম্বে তাঁর মুক্তি চাই।”

মানববন্ধনে মাহামুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান মুন ও সন্তান মাইমুন মিহরান বক্তব্য দেন। তারা জানান, গ্রেপ্তারের সময় কোনো পূর্ব নোটিশ বা আইনজীবী প্রেরণ করা হয়নি। একটি সাজানো চার্জশিটে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া এক ব্যক্তিকে হত্যার মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি নির্দোষ এবং আমাদের পরিবারের একমাত্র ভরসা। আমরা তাঁর মুক্তি চাই।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, জুলাই আন্দোলনের পক্ষে কথা বলা এক শিক্ষকের যদি এই অবস্থা হয়, তবে আন্দোলনকারীদের অবস্থা কেমন হতে পারে আপনারা সে বিষয়ে সজাগ হয়ে যান। এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের মাহামুদ স্যারের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আমরা থানা ঘেরাও করে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবো। পাশাপাশি, এই ধরনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানান তিনি।

সমাবেশ শেষে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাহামুদুল হকের মুক্তির আলটিমেটাম দেন। এ ছাড়া, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মাহামুদুল হককে হয়রানি করার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান তারা। পাশাপাশি, মাহামুদুল হককে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

উল্লেখ্য, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ২ আগস্ট রংপুরের হাজিরহাটের সমেছ উদ্দিনের বাসায় পুলিশ গেলে দৌড়ে পালানোর সময় হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার ১০ মাস পর গত ৩ জুন শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ৫৪ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার ৫৪তম অভিযুক্ত হিসেবে গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়ে নিজ বাসায় গেলে মো. মাহামুদুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে এই মামলার অন্য কোনো আসামিকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনার।

গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে প্রথমবারের মতো ন্যায়বিচার নিশ্চিতের স্বার্থে পুলিশি তদন্তের বদলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন মো. মাহামুদুল হক। ২০১৯ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে প্রখ্যাত ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের মেট্রো এডিটর এবং বেসরকারি বার্তাসংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশের (ইউএনবি) সাব এডিটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।

খুলনা গেজেট/এমএম

The post শিক্ষকের মুক্তির দাবিতে উত্তাল বেরোবি appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.