বরগুনা প্রতিনিধি:

বরগুনায় লাইসেন্স বিহীন ও মানহীন ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালানো হয়।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দিনভর জেলার বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে চারটি প্রতিষ্ঠানকে মোট ২৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং সতর্ক করা হয়।

এর আগে ১৬ জুন ‘জটিলতার অজুহাতে লাগামছাড়া ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ শিরোনামে জাগো নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর ১৭ জুন ‘ডেঙ্গু পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণা, ভুল রিপোর্টে বিপাকে রোগীরা’ শিরোনামে আরও একটি প্রতিবেদনে অনিয়মের বিষয়টি উঠে আসে। এরপর থেকেই প্রশাসনের নজরদারি বাড়ে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, জেলার ১২২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধু ক্লিনিক রয়েছে ৩১টি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্সের জন্য ৭৫টি আবেদন জমা পড়েছে। এরই মধ্যে নতুন করে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স হালনাগাদ হয়েছে, যার মধ্যে ২০টি ডায়াগনস্টিক এবং ৬টি ক্লিনিক। পরিদর্শনের অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৮টি এবং লাইসেন্স পেতে অপেক্ষমাণ আছে ১০টি প্রতিষ্ঠান।

সব ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও ৭টি প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র এখনো অসম্পূর্ণ। এছাড়া শুধু অনলাইনে আবেদন করে রাখা হয়েছে ২৪টি প্রতিষ্ঠানের।

এরমধ্যে সম্প্রতি বরগুনায় ডেঙ্গুরোগী বাড়ায় রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ জানার জন্য টেস্ট করাতে স্থানীয় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ভিড় করছে মানুষ। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে একের পর এক ভুল রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। যা চিকিৎসকদের চোখে ধরা পড়ে। এতে চিকিৎসা বিভ্রান্তির পাশাপাশি রোগী ও স্বজনদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে ভোগান্তি।

এ বিষয়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান বলেন, আমরা চাই বরগুনার মানুষ যেন সঠিক ও মানসম্মত সেবা পায়। যেসব প্রতিষ্ঠানে ঘাটতি আছে, সেগুলোকে আমরা সহযোগিতা করছি উন্নতির জন্য এবং নার্স ও টেকনোলজিস্টদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

সভাপতি সালেহ মাহমুদ সুমন বলেন, আমরা নিজেরাও চাই না কেউ ভুল রিপোর্ট দিক বা সেবা নিয়ে বিপদে পড়ুক। আমরা সিভিল সার্জনের কাছ থেকে এক মাস সময় নিয়েছি। এছাড়া আমি সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি।

অভিযান চলাকালে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রেজওয়ানুর আলম বলেন, বাইরে থেকে ভুল রিপোর্ট রোগীর জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। এরমধ্যে আমরা কতগুলো ভুল রিপোর্ট পেয়েছি। তাই প্রাইভেট ডায়াগনস্টিকগুলোতে নিয়মিত তদারকি ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বরগুনা ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এখন বরগুনাতে ডেঙ্গু সংক্রমণ বেড়েছে। এরই মধ্যে তারা রোগীদের টেস্ট ভুল দিচ্ছে বলে শুনেছি। এছাড়া আমরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে বরগুনার বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি আমার সব উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশনা দিয়েছি যাতে করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়। প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়।

The post বরগুনায় মানহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.