প্রবাসীরা কেবল অর্থ পাঠান না—তাঁরা প্রিয় মাতৃভূমির জন্য এক অপ্রতিরোধ্য নির্ভরতার নাম। তাঁরা দেশের জন্য পরিশ্রম করেন, ঘাম ঝরান, জীবন উৎসর্গ করেন-তবু প্রাপ্য সম্মান পান না। সময় এসেছে তাঁদের ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার।

বিদেশে অবস্থানরত আমাদের ভাই-বোনেরা যখন হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে দেশে রেমিট্যান্স পাঠান, তখন সেই অর্থে সচল হয় দেশের অর্থনীতির চাকা। দুর্নীতিতে জর্জরিত, বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে নিঃশেষপ্রায় এই রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রাণের সঞ্চার হয় তাঁদের পাঠানো রক্তঝরা টাকায়। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন প্রকল্পের চালিকাশক্তি পর্যন্ত অনেকখানি নির্ভরশীল এই রেমিটেন্সের উপর।

তবু প্রবাসীরা সম্মানিত হওয়ার পরিবর্তে বিমানবন্দরে অবজ্ঞা, হয়রানি কিংবা চোরাচালানীর চোখে দেখা হওয়ার মতো আচরণের শিকার হন। এটা খুবই দুঃখজনক ও অমানবিক। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁদের স্বাগত জানানো, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং যথাযথ সম্মান দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

তাঁদের অবর্তমানে তাঁদের পরিবার, জমি-জমা, বাড়িঘর লুটপাটের শিকার হয়। বিচার চেয়ে আদালত, থানায় ধর্ণা দিয়েও বহু সময় ফল পাওয়া যায় না। একটি সচেতন রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব, প্রবাসীদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অধিকাংশ প্রবাসীরা প্রতিবেশী ও প্রভাবশালী কিংবা দুর্বৃত্তপনা লোকদের কাছে প্রতারণা ও বঞ্চনার শিকার হন।

আরও ভয়াবহ সত্য হলো—২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবের পর নতুন সরকার যখন রাষ্ট্রের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন সে সময়ে যখন দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল, ব্যাংক খাত ছিল দেউলিয়া প্রায়, ঠিক তখনই দেশের প্রাণরক্ষাকারী হিসেবে আবির্ভূত হন প্রবাসীরা। তাঁদের পাঠানো টাকায় দেশ ভয়াবহ মন্দা থেকে রক্ষা পেয়েছিল।

প্রবাসীরা কেবল অর্থনৈতিক অবদান রাখেন না, সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রেও তাঁরা অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। দুর্ঘটনা, রোগ বা দুর্যোগের সময় তাঁরা নিজ গ্রাম-মহল্লার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। নতুন ঘর, নতুন জীবন, চিকিৎসার সুযোগ—সবকিছুই আসে তাঁদের দানের টাকায়। অথচ তাঁদের কোনো স্বীকৃতি নেই, নেই তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ!

তাই এখনই সময়, রাষ্ট্রের উচিত তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদায় অভিষিক্ত করা। তাদেরকে ‘রেমিটেন্স যোদ্ধা’ হিসেবে চিহ্নিত করে সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়ে সংবর্ধনা ও সম্মাননা দেওয়া। সামাজিক সংগঠন, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকার যেন তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা দিতে এগিয়ে আসে-এটাই প্রত্যাশা।

এই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি সম্মান জানানোর মাধ্যমে আমরা যেমন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের শিক্ষা দিতে পারি। প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে যেমন অবদান রাখে তাঁরা দেশের প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তনেরও অংশীদার হওয়ার নৈতিক অধিকার রাখেন।

লেখক-
শিব্বির আহমদ রানা,গণমাধ্যমকর্মী।
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম। ০১৮১৩৯২২৪২৮

The post লড়াই শুধু বন্দুকে নয়, রেমিট্যান্সের মাঠে প্রবাসীরাও যোদ্ধা ‘চাই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি’ appeared first on Ctg Times.